BanshkhaliTimes

বাঁশখালীতে র‍্যাবের অভিযানে অস্ত্র ও বোটসহ ৪ জলদস্যু আটক

BanshkhaliTimes

মিজান বিন তাহের, বাঁশখালী টাইমস: চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে র‌্যাবের অভিযানে ৪ জলদস্যু আটক হয়েছে। র‌্যাবের ভাষ্য, সাম্প্রতিককালে বঙ্গোপসাগরে বরগুনা পাথরঘাটার গভীর বঙ্গোপসাগরে ১৮ জন জেলে ট্রলার নিয়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার পথে ঐদিন রাতে পাথরঘাটা থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ২৫-৩০ জনের একটি জলদস্যুবাহী দ্রুতগামী ট্রলার উক্ত ট্রলারের পিছনে ধাক্কা দেয় ও ফাঁকা গুলি করে। তখন ট্রলারে থাকা জেলেরা চিৎকার করলে জলদস্যুরা ট্রলারে উঠে ট্রলারের থাকা ১৮ জন জেলেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। জলদস্যুদের কবল থেকে বাঁচতে ৯ জন জেলে গভীর সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিখোঁজ হন। অন্য একটি ট্রলারের জেলেরা জলদস্যুদের হামলায় আহত ৯ জন জেলেকে উদ্ধার করে শনিবার সন্ধ্যায় পাথরঘাটায় নিয়ে আসে এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত দুজনকে রাতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় এবং বাকিদের পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সোমবার জলদস্যুদের কবল থেকে বাঁচতে বঙ্গোপসাগরে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ বরগুনার ৯ জন জেলের মধ্যে ৪ জনকে সাগর থেকে উদ্ধার করা হয় এবং দুপুরে তাদের পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে একজনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৫ জন জেলে নিখোঁজ রয়েছে।
র‌্যাব জানায়, এই নির্মম ঘটনার সাথে জড়িত জলদস্যু ও ডাকাত দলকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র‌্যাব-৭, র‌্যাব-৮, র‌্যাব-১৫ এবং র‌্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা যৌথভাবে তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। এরই প্রেক্ষিতে র‌্যাব-৭ উক্ত বোটে দস্যুতার সাথে সম্পর্কিত একটি ডাকাত দল চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী এলাকায় অবস্থান করছে বলে তথ্য পান। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ২১ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত হতেই র‌্যাব-৭ ও র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার একটি যৌথ আভিযানিক দল বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারা, বড়ঘোনা, বাংলাবাজার, শীলকূপ সহ তৎসংলগ্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে জলদস্যুতার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত বাঁশখালী গন্ডামারা ইউনিয়নের পশ্চিম বড়ঘোনা এলাকার আলী আহমেদের পুত্র মোঃ কাইছার (২৫), পূর্ব বড়ঘোনা এলাকার মৃত আহমদ ছফার পুত্র মোঃ জাহিদ (২৫), পশ্চিম বড়ঘোনা এলাকার মৃত আলী চানের পুত্র মোঃ সেলিম (৪০) ও একই এলাকার মোঃ সেলিমের পুত্র মোঃ ইকবালকে (১৫) আটক করা হয়। আটককৃত আসামী মোঃ কাইছারের (কালু) কাছ থেকে বরগুনার বোট হতে ডাকাতিকৃত ১টি মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। পরবর্তীতে উক্ত মোবাইল ফোনটি তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানা যায় উদ্ধারকৃত মোবাইলটি আব্দুল করিম নামক দস্যুতার কবলে পরা ভিকটিম জেলের। আটককৃত আসামীগণকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জলদস্যুতার সাথে তাদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে এবং আসামীগণের নিজহাতে দেখিয়ে দেওয়া স্থান হতে ৪টি দেশীয় তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ, ২টি হাতুড়ি, ৩টি দা, ১ টি কিরিচ, ২টি শাবল, জাল এবং দস্যুতাবৃত্তিতে ব্যবহৃত বোট ও অন্যান্য আলামত উদ্ধার করা হয়। র‌্যাব সূত্রে আরো জানা যায়, ইতি পূর্বে তারা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার বাঁশখালী, পেকুয়া, মগনামা, এবং কুতুবদিয়া এলাকার উপকূলীয় অঞ্চলে ডাকাতি করত। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অধিক তৎপরতার কারণে তারা বর্তমানে এই এলাকা ছেড়ে বরিশাল, বরগুনা এবং খুলনা উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থান করে ডাকাতি কার্যক্রম শুরু করেছে।
এ ঘটনায় মোঃ কাইছার কালুর (২৫) নামে চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী থানায় ০২টি চুরির মামলা রয়েছে যে মামলায় সে অভিযুক্ত। এছাড়া ধৃত আসামী মোঃ সেলিমের (৪০) নামে চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী থানায় ০৫টি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে ০১ টি অবৈধ অস্ত্র আইনে মামলা এবং বাকি ০৪টি সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মামলা পাওয়া যায়। ডাকাতির ঘটনায় সরাসরি জড়িত তারা।
র‌্যাব-৭ পতেঙ্গা চট্টগ্রামের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোঃ মাহবুব আলম, পিপিএম, পিএসসি প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, ডাকাতির ঘটনায় সরাসরি জড়িত ৪ জলদস্যুকে আটক করা হয়েছে। এসময় ৪টি দেশীয় তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ, ২টি হাতুড়ি, ৩টি দা, ১ টি কিরিচ, ২টি শাবল, জাল এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বোট জব্দ করা হয়েছে। পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে তাদের বাঁশখালী থানায় হস্তান্তর করা হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *