ঈসরায়েলের এত শক্তির উৎস কোথায়?
🟢 নাদিম মজিদ
ফিলিস্তিনে হামলা হলে বাংলাদেশিদের ঈসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে কথা বলতে দেখা যায়। আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ কাজটি করে থাকেন ঈমানী দায়িত্ব থেকে।
খুব কম সংখ্যক মানুষ ভাবেন, ঈসরায়েল এত শক্তিধর হল কিভাবে? ৯১ লাখ মানুষের দেশ ঈসরায়েল, তাও তার ২০% হল আরব। চারপাশে থাকা মিশর, জর্ডান, সিরিয়া, ফিলিস্তিন- এরা সবাই জন্মলগ্ন থেকে শত্রু। মিশর, জর্ডানের সাথে চুক্তি থাকলেও তাদের দেশের জনগণ এবং শাসকেরাও মনেমনে ঈসরায়েলকে শত্রু জ্ঞান করেন। দেশটিতে প্রাকৃতিক কোনো শক্তি যেমন তেল বা গ্যাস নেই। জনসংখ্যা অনুপাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ কৃষিজমি নেই। অথচ তারা চাইলে বিশ্বের যে কোনো দেশকে টুটি চেপে ধরার ক্ষমতা রাখে।
২.
যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলবেন? বলবেন, দেশটির আশকারা পেয়ে আজ ঈসরায়েলের এত বাড়বাড়ন্ত! আপনার জেনে রাখা দরকার, যুক্তরাষ্ট্রের শাসকেরা ঈসরায়েলকে মান্য করে চলতে বাধ্য হয়। কারণ দেশটির রাজনীতি, অর্থনীতি, মিডিয়া, বিজ্ঞান নিয়ন্ত্রণ করে ঈসরায়েলের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন ব্যক্তিরা। তাই, সেদেশের শাসকদের ঈসরায়েলের কথার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। বড়জোর, আন্তর্জাতিক রাজনীতির স্বার্থে মাঝেমধ্যে যুদ্ধবিরতি বা যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বান জানাতে পারে।
৩.
ঈসরায়েলের শক্তির উৎসের কথা চিন্তা করার সময় আমরা জেনে নিই, ঈসরায়েল টাকা খরচ করে কোথায় কোথায়?
যে কোনো দেশের জিডিপির সাথে গবেষণা এবং উন্নয়ন খাতের অনুপাত হিসেব করলে প্রথমে রয়েছে ঈসরায়েল। তাদের প্রতি ১০ হাজার কর্মচারীর মধ্যে বিজ্ঞানী, টেকনেশিয়ান এবং প্রকৌশলীর সংখ্যা ১৪০ জন। যা বিশ্বে প্রথম। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রতি দশহাজারে তাদের বিজ্ঞানী, টেকনেশিয়ান এবং প্রকৌশলীর সংখ্যা ৮৬ জন।
তারা বিজ্ঞানে এত বেশি মনোনিবেশ করে যে তাদের জনসংখ্যা অনুপাতে সায়েন্টিফিক রিসার্চ পেপার প্রকাশ করার দিক থেকে তারা প্রথম। ২০০৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত তাদের দেশ থেকে ৬জন নোবেল প্রাইজ পেয়েছে। মজার বিষয় হল মুসলমানের সংখ্যা ১৫০ কোটি হলেও কতজন মুসলমান নোবেল প্রাইজ পেয়েছে, তা জানার জন্য ইন্টারনেট ঘাটতে হয় না। তাদের সংখ্যা এত কম যে আমাদের বিসিএসের বইয়েও তাদের নাম, দেশসহ বিস্তারিত দেয়া হয়ে থাকে।
বিশ্বের সেরা ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তাদের ৪টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। মহাশূন্যে রকেট পাঠানো কোম্পানিগুলোর মধ্যে তারাও অগ্রগণ্য।
তারা এত গোপনে পরমাণ অস্ত্র নিয়ে গবেষণা করছে, বিশ্বের অন্য কোনো দেশ বা ব্যক্তির কাছে এটি ফাঁস হয়নি।
তাদের ড্রোন, মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সবই উন্নত। গেল বছর আজারবাইজন- আর্মেনিয়ার যুদ্ধে আজারবাইজান আর্মেনিয়াকে হারানোর জন্য ঈসরায়েলি ড্রোন ব্যবহার করেছিল।
৪.
ঈসরায়েলের অর্থনীতি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে খুবই অগ্রসর। কারণ, তারা তাদের সন্তানদের শুধু শিক্ষিত করে না, পাশাপাশি গুণগতমানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করে থাকে। তাদের রিসোর্সগুলো খুবই মেধাবী হয়ে থাকে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় আইটি কোম্পানিগুলোর শাখা রয়েছে সে দেশে। গুগল, ফেসবুক, আইবিএম, অ্যাপল- বিশ্বের নামকরা সব আইটি কোম্পানির সেখানে যাওয়ার কারণ- সেখানে গেলে খুব সহজে মেধা পাওয়া যাবে। যাদেরকে ব্যবহার করে সেসব কোম্পানির উন্নতি আরো বৃদ্ধি পাবে।
৫.
ঈসরায়েলের জনসংখ্যা ৯১ লাখ। ওরা স্টার্টআপ কোম্পানি গঠনে বিশ্বে দ্বিতীয়। যুক্তরাষ্ট্রের পরে তাদের অবস্থান। তার মানে হল ওদের দেশে কোনো স্টার্টআপ ভাল করলে পরবর্তী ধাপে সে স্টার্টআপ যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা পাবে। সেখান থেকে ছড়ি ঘুরাবে সারাবিশ্বে। আর এ কাজ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অর্থ বিনিয়োগ করে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্টক এক্সচেঞ্জ হল নাসডাক। এটি যুক্তরাষ্ট্রে্র দ্বিতীয় বৃহত্তম স্টক এক্সচেঞ্জ। এখানে বিদেশি কোম্পানিগুলোও রেজিস্টার হতে পারে। তাদের কোম্পানির আইপিও ছাড়তে পারে। এখানে দেশ হিসেবে ঈসরায়েলি কোম্পানিগুলোর অবস্থান তৃতীয়। প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন।
৬.
কি মনে হল, ঈসরায়েলের শক্তি দেখানোর জায়গা অনেক বড়। তাদেরকে হারানোর সামর্থ্য তাহলে বাংলাদেশিদের কিংবা মুসলমানদের নেই?
আমার উত্তর, আছে।
এটার জন্য লম্বা পরিকল্পনা করতে হবে। সহজ কোনো পথ নেই।
দেশে গবেষণা ব্যাপক হারে বাড়াতে হবে। উন্নত বিজ্ঞান চর্চা করতে হবে। মেধাবী এবং শিক্ষিতদের মূল্যায়ন করতে হবে। বেশিবেশি ডক্টরেটধারী তৈরি করতে হবে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার সময় পিএইচডিধারীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।
দেশে কেউ ব্যবসা করতে চাইলে সুন্দর পরিবেশ দিতে হবে। সহযোগিতা করতে হবে। স্টার্টআপ সংস্কৃতিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
এ কাজ শুধু রাষ্ট্রের নয়। এ কাজ আমাদের সবার। সরকারি-বেসরকারি সব জায়গায় এ অনুশীলন থাকতে হবে। গুণগত মানসম্পন্ন পড়ালেখায় জোর দিতে হবে।
আরেকটি বিষয়, কম সময়ে যেন একজন শিক্ষার্থী পিএইচডি করতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। আমার মতে, ২৭-২৮ বছর বয়সে একজন শিক্ষার্থীর পিএইচডি করতে পারা উচিত। এ নিয়ে পরে আরেকটি লেখার ইচ্ছা রয়েছে।
৭.
মসজিদে-মন্দিরে-ধর্মীয় বয়ানে পড়ালেখার গুরুত্ব, জ্ঞান-বিজ্ঞানের গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে। মনে রাখতে হবে, তথ্যপ্রযুক্তি-বিজ্ঞানে দেশ উন্নত না হলে অন্য হাজারক্ষেত্রে দেশকে উন্নত করে লাভ নেই। কারণ, দিনশেষে নিরাপত্তার জন্য অন্যের কাছে হাত পাততে হবে।
৮.
ফিলিস্তিনিদের সময় সুন্দর হোক। ঈদ মোবারক।
লেখক- প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও, বাংলা পাজেল লিমিটেড