মুহাম্মদ আরিফ, বাঁশখালী টাইমস: পূর্বে পাহাড়ী অরণ্য পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের বিশাল জলরাশি বেষ্টিত এক নৈসর্গিক জনপদের নাম বাঁশখালী।
প্রায় ৩৯২ বর্গ কিলোমিটারের এই জনপদ কে পূর্বের পাহাড় এবং পশ্চিমের জলরাশি করেছে সমৃদ্ধ। জেলা সদর হতে প্রায় ৪৪.৫ কি মি দুরত্বে অবস্থিত এই বাঁশখালীতে জন্মায় হরেক রকমের শাক-সবজি এবং মৌসমী ফল, যা বাঁশখালীকে করেছে অমিত সম্ভাবনার সম্ভারে সমৃদ্ধ এক জনপদ।
এই বাঁশখালী হতে উৎপন্ন বিভিন্ন ধরণের শাক-সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের নানা স্থানে রপ্তানি করা হচ্ছে।
বঙ্গোপসাগরে তীরবর্তী বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকার লবণ চাষের সুখ্যাতি রয়েছে সাড়া দেশজুড়ে, এছাড়াও বাঁশখালীর লিচু স্থানীয় গন্ডি পেরিয়ে সাড়া দেশের সুনাম কুঁড়িয়েছে।
বাঁশখালীর পাহাড়ী এবং উপকূলীয় এলাকায় বছরজুড়ে নানা ধরণের শাক-সবজি এবং ফলমূলের চাষাবাদ করা হয়। বাঁশখালীতে পান, করলা, জিঙ্গা, শসা, কাকরোল, টমেটো, বেগুন,মরিচ প্রভৃতি ব্যাপকহারে চাষাবাদ হয়ে আসছে সময়ের অববাহিকতা, আধুনিকতা ও সহজলভ্যতা এবং অন্য চাষে অধিক মুনাফার কারণে অনেক ধরণের ফলমূল এবং শাক-সবজির আবাদ প্রায় বিলুপ্তির পথে। তৎমধ্যে রয়েছে তরমুজ, ভাঙ্গি ইত্যাদি।
তরমুজ একটি সুস্বাদু এবং গরমের সময় অত্যন্ত তৃপ্তিদায়ক ও তৃষ্ণা নিবারক একটি ফল। আমাদের দেশে যেসব উন্নতমানের তরমুজ পাওয়া যায় তা দেশের বাইরে থেকে আমদানিকৃত সংকর জাতের বীজ থেকে চাষ করা হয়ে থাকে।
শুষ্ক, উষ্ণ ও প্রচুর সূর্যের আলো পায় এমন স্থানে তরমুজ ভালো হয়ে থাকে। তবে অধিক আর্দ্রতা তরমুজ চাষের জন্য ক্ষতিকর। খরা ও উষ্ণ তাপমাত্রা সহনশীলতা তরমুজের অনেক বেশি। উর্বর দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি তরমুজ চাষের জন্য উত্তম।
তরমুজের আধুনিক জাতসমূহের মধ্যে টপইল্ড, গ্লোরী, সুগার বেবি, বেবি তরমুজ, ভিক্টর সুপার F1, ওসেন সুগার F1, ব্লাক জায়ান্ট F1, বঙ্গ লিংক F1, গ্রীন ড্রাগন ইত্যাদি বেশ জনপ্রিয়।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অনুযায়ী সাধারণত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত সময় তরমুজ চাষের উপযোগী। এছাড়াও আগাম কিছু জাত আছে যেগুলো নভেম্বর-ডিসেম্বর পর্যন্ত বপন করা যাবে। তবে বীজ বোনার জন্য জানুয়ারির শেষ থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম পক্ষ সর্বোত্তম।
গ্রীষ্মে উষ্ণ তাপমাত্রায় তৃষিত দেহের তৃপ্তি মিটানোর জন্য তরমুজের কদর বেশ তুঙ্গে।
বাজারে রয়েছে প্রচুর চাহিদা এবং বাজারদর বেশ চড়া,
তরমুজের বাজারদর সম্পর্কে জানতে চাইলে চেচুরিয়ার তরমুজ ব্যাবসায়ী মুহাম্মদ ইমরান বাঁশখালী টাইমস কে জানান, আকারভেদে তরমুজের দাম নির্ধারণ করা হয়,
কোন আকারের কেমন দাম জানতে চাইলে সে জানান, ছোট গুলো সাধারণত প্রতি শত ৪-৫ হাজার ও মাঝারি সাইজের গুলো ৭-৮ হাজার এবং তুলনামূলক বড় আকারের গুলো ১০-১২ হাজার করে ১০০টি তরমুজ বিক্রিত হয় ।
তবুও কেন বাঁশখালীর চাষীরা তরমুজ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এর কারণ কী? কি বলছে নবীন-প্রবীন চাষীরা।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে চেচুরিয়া এলাকার প্রবীন চাষী জনাব আব্দুল লতিফ(৬৫) বাঁশখালী টাইমসকে জানান, আজ থেকে প্রায় ১০/১২ বছর আগে বাঁশখালীতে প্রচুর তরমুজ চাষাবাদ হতো, সে নিজে পাহাড়ে তরমুজ চাষ করে সুদূর চট্টগ্রাম শহরেও রপ্তানি করত বলে জনান,
কিন্তু এখন কেন করেন না জানতে চাইলে সে জানান, এখন বীজের জন্য শহরে যেতে হয় কিন্তু রোপন করে দেখা যায় গাছ হয়েছে কিন্তু আশানুরূপ ফলন হয়নি, দিনশেষে লাভতো দূরের কথা উপযোগ হারিয়ে নিঃস্ব হতে হয়, দেশের প্রতিকূল আবাহাওয়া এবং নগরায়নের ফলে উর্বর কৃষিজমি নষ্ট হওয়ায় এর মূল কারণ’।
আরেক প্রবীণ চাষী জনাব শফিক আহমেদ জানান, এক সময় বাঁশখালীর পাহাড়ী এবং সমুদ্রের উপকূলীয় এলাকায় প্রচুর তরমুজ চাষ হতো কিন্তু কালের পরিক্রমায় তা এখন দেখা যায় না।
কিন্তু ভিন্নচিত্রও আছে।
এই বছর বাঁশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের সার্বিক সহযোগিতায় “কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ফসল উৎপাদন” প্রকল্পের আওতায় গণ্ডামারা ইউনিয়নের ৪ জন চাষী প্রায় ৮ একর তরমুজ আবাদ করেন, উপকার ভোগীরা হলেন গণ্ডামারার, মুখতার আহমেদ,মাহমুদ নবী,মুহাম্মদ নাসির, উবাইদুর রহমান প্রমূখ।
উপকার ভোগী মুখতার আহমেদ বাঁশখালী টাইমসকে জানান, “এই বছর আমি বাঁশখালী উপজেলা কৃষি অফিসার জনাব আবু সালেকের সহযোগিতায় কৃষি কর্মকর্তা প্রণব কান্তি দাশের তত্ত্বাবধানে প্রায় ২ একর জমিতে কৃষি অফিসার কর্তৃক প্রদত্ত বীজ গ্লোরী জাম্বো জাতের তরমুজ আবাদ করে ভালো ফলন এবং লাভবান হয়েছি”
সে সামনে তরমুজের আবাদ আরো বৃদ্ধি করবেন বলে জানিয়েছেন।
আরেক উপকার ভোগী মুহাম্মদ নাসির জানান, এই বছর কৃষি অফিসারের সহযোগিতায় তরমুজ চাষ করে ২ একর জমি থেকে প্রায় ২লাখ ৫০ হাজার টাকা মুনাফা অর্জন করেছি ইনশাআল্লাহ আগামীতে এই চাষ আরো ব্যাপকহারে করব।
এই বছর শখেরবশত তরমুজ চাষ করেন চেচুরিয়ার যুবক চাষী মুহাম্মদ জসিম, তাঁর কাছে জানতে চাইলে সে বলেন,”এই বছর তরমুজ চাষ করে ভালো ফলন হয়েছে, সামনে আরো ব্যাপক চাষাবাদ করব”
একই মন্তব্য চেচুরিয়ার আরেক যুবক চাষী সৈকত আলীরও।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বাঁশখালী উপজেলা কৃষি অফিসার জনাব আবু সালেক বাঁশখালী টাইমসকে জানান, “আমরা প্রবীন কৃষকদের কাছ থেকে জেনেছি বাঁশখালীতে এক সময় প্রচুর তরমুজ চাষ হতো কিন্তু বর্তমানে তরমুজের চাষাবাদ বাঁশখালীতে তেমন হয় না, এই জন্য বাঁশখালীতে কৃষকদের তরমুজ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে নানা প্রকল্প গ্রহণ করেছি, এর ধারাবাহিকতায় এই বছর সম্পুর্ণ বাঁশখালীতে ১৫ জন কৃষকের মাঝে তরমুজের বীজ বিতরণ ও সার্বিক সহযোগিতা এবং পরামর্শ দিয়েছি, উপকারভোগী কৃষকরা ভালো ফলন হওয়াতে খুশি এবং আগামীতে আরো ব্যাপক চাষাবাদ করার প্রত্যয় ব্যাক্ত করেছে”।
এই সময় বাঁশখালী উপজেলা কৃষি অফিসার জনাব আবু সালেক সামনে আরো নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করে বাঁশখালীতে তরমুজের আবাদ বৃদ্ধি করার প্রতিশ্রুতি জানিয়েছেন বাঁশখালী টাইমসকে।