আবু ওবাইদা আরাফাত: ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, পেশাগত ও নেশাগত চতুর্দিকেই খেলেছেন নিজের সেরাটা দিয়ে। সেই খেলায় যোগ করেছেন খেয়াল নামক বাড়তি রসদ। নিজের খেয়ালেই প্রতিভা ও খ্যাতির বিচারে ছাড়িয়ে গেছেন নিজেকে। জীবনের এই ম্যাচে সবে মাত্র হাফ সেঞ্চুরী পার করলেও কর্মে মর্মে বাস্তবিক অর্থে তিনি হবেন “ম্যান অব দ্য লাইফ’ !
জীবন তো একটাই। এক জীবনে অনাগত মহাকালে নিজেকে অমর করে রাখতে মানুষের সে কী প্রাণান্তকর চেষ্টা! কেউ সারা জীবন চেষ্টার সমুদ্রে হাবুডুবু খেলেও মুক্তা নামক সফলতার নাগাল পায় না। আর কেউ কেউ আছেন প্রতিটি ডুবেই সিন্ধু থেকে সেঁচে তোলেন বিন্দু বিন্দু মুক্তা! সেই মুক্তা দিয়ে গাঁথা মালা গলে পরেই যেন বসে আছেন কবি কমরুদ্দিন আহমদ। তিনি তার মালাকে সাজিয়ে নিয়েছেন অসংখ্য ফুলের পাঁপড়ি দিয়ে। প্রতিটি পাঁপড়ি ধারণ করে আছে অসাধারণ সব প্রতিভার ঝলকানি। পেশা আর নেশার দু’টানায় কেবল কিছু একটা হবার তাগাদাটা গিয়ে ঠেকেছে তাঁর, অনেক কিছুতে! কর্মস্পৃহা, কর্মোদ্যম, সহজাত তারুণ্য যার রন্ধ্রে রন্ধ্রে তাঁকে আর ঠেকায় কে? বিধাতারও হয়তো ইচ্ছা ছিল! নইলে পৃথিবীতে এতো দেশ, জেলা, উপজেলা, গ্রাম ফেলে শঙ্খপাড়ের রূপের রাণী চাঁদপুর নামক গ্রামেই বা কেন তাঁর জন্ম হলো? প্রথম পেশা শিক্ষকতা হলেও প্রকৃতি আর শঙ্খরাণী থাকে বার বার আহবান করেছে কাব্যপ্রেমে। অন্য সবার মত প্রকৃতির প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখানের সাধ্য ছিলো না কমরুদ্দিন আহমদেরও। আবার এই ঐশ্বরিক প্রস্তাব সবার কপালে জুটার কথাও নয়। অনেকটা পরিণত বয়সেই শুরু করে দিলেন কাব্যের সাথে বসবাস। নেমে পড়লেন কাব্য সাধনায়। জাগতিক সংসারের পাশাপাশি সদ্য পা দেয়া কাব্যিক সংসারেও চলে তাঁর আত্মিক বসবাস। শঙ্খরাণীর বুক খোলা প্রেম, নদীর সাথে পাহাড়ের ঐতিহাসিক মিতালী, জুমচাষে মগ্ন কর্মব্যস্ত কুমারী, প্রকৃতির মাঝে শাশ্বত প্রেমের উপস্থিতি প্রভৃতি ভাবনাচিত্র কাব্য হয়ে গ্রন্থস্থ হয়েছে তার লেখনীতে। সমাজের অন্যায়, অসঙ্গতি, শাসক শ্রেনীর সমূহ জুলুমের উচিৎ জবাবও দিতে কুণ্ঠাবোধ করেন নি তিনি, কোন রক্তচক্ষুর পরোয়া না করেই।
লিখেছেন কাব্যগ্রন্থ “শহর ছেড়েই যাবো”, “সবুজ সুখের পুলক”, “বিষাদের ভাসানে জলজ ঘাতক”, ” হৃদয় শঙ্খ তীরে” ইত্যাদি। কাব্যদ্যুতির পাশাপাশি সাহিত্য সমালোচনায়ও দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন তাঁর “আধুনিক কবিতাঃ প্রাসঙ্গিক বিবেচনা” প্রবন্ধ গ্রন্থে। স্থান পেয়েছে সমকালীন বাংলা সাহিত্যের সেরা দশজন কবির সাহিত্য কর্ম নিয়ে মূল্যায়ণধর্মী আলোচনা। আলোচনায় ছিলেন আবদুল মান্নান সৈয়দ, আল মাহমুদ, শামসুর রহমান, ফররুখ আহমদ, জসীম উদ্দীন, সূধীন্দ্রনাথ দত্ত, জীবনানন্দ দাশ, কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দনাথ ঠাকুর ও মাইকেল মধুসূধন দত্ত। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদকে নিয়ে তাঁর প্রবন্ধ গ্রন্থ “আল মাহমুদঃ কবি ও কথাশিল্পী”।
এখানেই ক্লান্ত নন কবি কমরুদ্দিন আহমদ। কবি পরিচয়ের বাইরেও তিনি ধারণ করে আছেন বহুবিধ অভিধা। মেধা আর মননের সাথে শ্রমের সন্নিবেশ ঘটিয়ে নিজেকে প্রতিষ্টিত করেছেন অধ্যাপক, সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক, সাহিত্য সমালোচক, সম্পাদক, গীতিকার, কলামিস্ট, সংগঠক প্রভৃতি পরিচয়ে। জীবনের মাঝ বয়সে এসে এতোটা অর্জনে তিনি বিরলপ্রজও বটে।
সাহিত্য চর্চার বাইরেও তাঁর সম্পাদনা ও সাংগঠনিক কর্মকান্ডের পরিধিও রীতিমত ঈর্ষণীয়।
১। সহকারী সম্পাদক ( সাহিত্য ও ফিচার )- দৈনিক পূর্বদেশ
২। সম্পাদক- মাসিক বাঁশখালী
৩। সম্পাদক- “বাঁফা” বাঁশখালী ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম- ৬ষ্ঠ সংখ্যা
৪। সহকারী সম্পাদক- দৈনিক পূর্বদেশ ঈদ সংখ্যা’২০১৩
৫। সদস্য, সম্পাদনা পরিষদ- বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি বাকশিস সম্মেলন’২০১১ স্মরণীকা
৬। সদস্য, সম্পাদনা পরিষদ- ‘এক সে পদ্ম তার চৌষট্টি পাখনা’- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা সম্মিলন স্মারক ১ম পুনর্মিলন’২০০৮
৭। সদস্য, সম্পাদনা পরিষদ- ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’- ২য় বাংলা সম্মিলন স্মারক’২০১০
৮। সদস্য, সম্পাদনা পরিষদ- চট্টগ্রাম কলেজ বাংলা উৎসব’ প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের পুনর্মিলন স্মারক
৯। সদস্য, সম্পাদনা পরিষদ- ‘আলোক পাখির ডানা’- ফররুখ স্মৃতি পুরস্কার স্মারক’২০০৯, চট্টগ্রাম সংস্কৃতি কেন্দ্র
১০। সদস্য, সম্পাদনা পরিষদ- ‘বাফা’ -৪র্থ সংখ্যা
১১। সদস্য, সম্পাদনা পরিষদ- ‘বাফা’ -৫ম সংখ্যা
১২। সদস্য, সম্পাদনা পরিষদ- স্মরণিকা পুকুরিয়া ফাউন্ডেশন
১৩। সদস্য, সম্পাদনা পরিষদ- ‘লোনা হাওয়ার টানে’- আনন্দ বনভোজন স্মারক’২০১০- চট্টগ্রাম সংস্কৃতি কেন্দ্র
১৪। সদস্য, সম্পাদনা পরিষদ-‘পাতা ঝরা রিনি ঝিনি’ আনন্দ বনভোজন স্মারক’২০১১- চট্টগ্রাম সংস্কৃতি কেন্দ্র
১৫। সার্বিক তত্বাবধান- ‘বাঁশি’- বাঁশখালী ডিগ্রী কলেজ ছাত্র-ছাত্রীদের বনভোজন স্মারক
সাংগঠনিক কর্মকান্ড
১৬। আহবায়ক- বাঁশখালী সাহিত্য পরিষদ (বাঁসাপ)
১৭। জনসংযোগ কর্মকর্তা- বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি, চট্টগ্রাম জেলা শাখা
১৮। প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও আজীবন সদস্য- বাঁশখালী ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম
১৯। প্রতিষ্ঠাতা সদস্য- পুকুরিয়া ফাউন্ডেশন
২০। সভাপতি- চাঁদপুর চন্দ্রপুর সমাজ কল্যান সংস্থা, বাঁশখালী
২১। দপ্তর সম্পাদক- বাংলা সম্মিলন- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
২২। সদস্য- চট্টগ্রাম সংস্কৃতি কেন্দ্র
[ লেখাটি কবির ৫০ বছর পূর্তি স্মারক নন্দন অভিযাত্রীতে প্রকাশিত]
আজ কবির জন্মদিন!
নক্ষত্র চট্টগ্রাম, বাঁশখালী টাইমস ও বাঁশখালী সাহিত্য পরিষদের পক্ষ থেকে জানাই প্রাণঢালা শুভেচ্ছা; শুভ জন্মদিন।