প্রতাপশালী মসজিদ কমিটি ও নতজানু হুজুর || জসিম উদ্দিন
মোল্লারা আজ মসজিদ কমিটির কাছে মাথা বিক্রি করে দিয়েছে। বলাচলে ইমানও। কমিটির আগা থেকে পা পর্যন্ত অশিক্ষিত, ডাকাত, চোর, দুর্নীতিবাজ, সুদ ও ঘুষখোর। ইসলামি শরিয়ত তরিকতের জ্ঞানের অ,আ, ক,খ’ও তাদের নাই। তবুও তারা মসজিদ নেতা। একেকটি মসজিদ যেন অঘোষিত রাজনৈতিক কার্যালয়। সমাজে প্রভাব বিস্তারের এক অনন্য আখড়া। যার অন্য কোন দলের কার্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ হয় না বা সুযোগ পায় না তারাও এখানে এসে জাদরেল নেতা। নিরহ-নিরেট এতিম টাইপস মৌলানার উপর তাদের রাজনীতির ছড়ি ঘুরে। একেক নেতার একেক এটম বোমা নাগাসাকি ও হিরোশিমা সহ্য করতে না পারলেও ইমাম সা’বের ঠিকই সহ্য করতে হয় নতুবা পাছে পেট
পিঠে লেগে যাবার রাজ্যের ভয়।
আল্লাহকে যতটা সেজদা মোল্লারা দেন তারচেয়ে বেশি সেজদা পরোক্ষভাবে মসজিদ কমিটির পায়ে দেন।
না-দিলে যেন ওঁদের চাকরি এক কথায় রিজিক ( রুটি – হালুয়া, মাংস, মুরগির রান, কাতলামাছের মাথা, পানিপড়া, তাবিজ-কবচের ব্যবসা- ব্লা ব্লা) মাটি হয়ে যাবে।
যদি-ও রিজিকের ব্যাপারে তেনারা প্রায় মাইকে চিল্লাইয়া-বিল্লাইয়া বলে, রিজিকদাতা কেবল আল্লাহ। তোমরা অন্য কারো মুখাপেক্ষী হইও না।
বিষয়টা হইলো গিয়া এরকম, একদিন এক পীর মুর্শিদ তার মুরিদগণ নিয়ে সফরে বেরিয়েছিলেন। মাঝপথে গিয়ে দেখলেন এক বড়সড় খাল। আশেপাশে কোন ডিঙি নৌকা বা কিস্তিও নাই।
পীর সাব হতাশ না হয়ে বললেন, সবাই খালেস(একনিষ্ঠ) নিয়তে বিসমিল্লাহ বলে জলে পা দিলে পার হয়ে যাবেন। যে-ই কথা সেই কাজ।
মুরিদগণ দৃঢ় বিশ্বাস রেখে বিসমিল্লাহ বলে জলে পা দেওয়া মাত্র খাল পার হয়ে গেলেন। একবিন্দু জল কারো পায়ে লাগলো না। ও-পারে গিয়ে মুরিদগণ দেখলেন তাদের পীর সা’ব জলে ডুবুডুবু। পীর সাবকে বাঁচানোর জন্য দু-চারজন মুরিদ ঝাপ দিলেন খালে। সবার সাহায্যে কোনরকম সাঁতরিয়ে পাড়ে উঠলেন।
মূল কথা হইলো গিয়া সবাই পার হতে পারলেও পীর সাব পার হতে পারেননি কেন?
কারণ তার নিয়তে গোলমাল ছিল। বাকিদের ইমানের দৃঢ়তার কাছে পীরের নড়বড় বিশ্বাস ডুবে গেল। মোল্লার রিজিকের বিশ্বাসটাও সেরকম। অন্যকে সবক দেয় – রিজিকদাতা কেবল আল্লাহ।
আর নিজের বেলায় মসজিদ কমিটিই নির্ভর।
এই-যে অশিক্ষিত কমিটির সবাই ইমাম সা’বের পিছনের সারিতে নামাজে দাঁড়ান। সামনের কাতারে ইমামের পিছনে ডানে-বামে দুটি করে জায়নামাজ বিছিয়ে দেওয়া হয় কমিটির লোক আসলে যেন আরাম করে সেজদা দিতে পারেন। বাকি সব কাতারে কার্পেট। ওদের আরাম দরকার নাই- সাম্যের ঘরে এ-ই এক প্রছন্ন বৈষম্য। পুরো মসজিদে বিদ্যুৎ চলে গেলেও ঐ স্থানে একটা ফ্যান চলবেই যেহেতু ওখানে সভাপতি, সেক্রেটারি বা ক্যাশিয়াররা দাঁড়ান।
কখনো যদি শারীরিক অসুস্থতা বশত ইমাম সা’ব ফোঁস করে একটা মিহি শব্দে বায়ু ছেড়ে পিছন থেকে কাউকে ইমাম বানিয়ে অযু করতে যেতে চান- তখন হাতড়িয়ে যাদেরকে পাবে তাঁদেরকে ইমাম বানালে হাগু করা ছাড়া দ্বিতীয় কোন উপায় হবে না। সুরা কেরাত দূরে থাক সে সময় নিজের নামটাও ভুলে যাবে।
যুগে যুগে যত নবি রাসুল বা খলিফা এসেছেন তাদের সবার নির্দিষ্ট পেশা ছিল। কাজ করে খেতেন। খতমে কুরআন আর লাশের জন্য কবরের পাশে হাত তুলে কেঁদেকুটে বা তাবিজ-কবচের ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন না। তারা শুধু মসজিদে ইমামতি করেও জীবিকা যোগাতেন না।
আমাদের মৌলানারা ( ইমাম, মুয়াজ্জিন) পাঁচ অক্ত নামাজ পড়ানোটাকেই জীবনের ধ্যান-জ্ঞান পেশা-নেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ফলত মূর্খ ডাকাত, সুদখোর ঘুষখোরের অধিনে পরাধীন দাসের মত সেজদা দিতে হয়। পান থেকে চুন খসলে বা মসজিদে মশা -মাছি থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ চলে গেলেও মোল্লার দোষ। পায়ে বালি লাগলেও মুয়াজ্জিনের চাকরি চলে যায়।
পৃথিবীর সকল মানুষের ঈদে বা বিশেষ দিনে ছুটি মিললেও মৌলানাদের বউ মরলেও ছুটি মিলে এক অক্ত। মসজিদ কমিটির লোক রাতদিন সুন্দরী বউদের নিতম্ব ধরে বসে থাকলেও ইমাম- মুয়াজ্জিন বাচ্চার বা বউয়ের অসুখ অথবা বউয়ের হক আদায়ে ছুটি চাইলে সভাপতি হেসে হেসে বলে- হুজুরদের এত ঘনঘন বাড়িতে যেতে হয় নাকি! কমিটির সঙ্গমে সওয়াব হলেও ইমাম- মুয়াজ্জিনের বৈধ সঙ্গম যেন বড় অপরাধ।
তো হুজুরগণ আপনারা স্বাধীন হন। ইমামতির পাশাপাশি অন্য কাজ( ব্যবসাবাণিজ্য) করেন। ইমামতি তো আর চব্বিশ ঘণ্টা না। কওমের উপর, মুঠি চালের উপর, চাদার উপর আর নির্ভরতা বাদ দিয়া ভিক্ষাবৃত্তি থেইকা বের হয়ে আসেন। তবেই আপনাদের মঙ্গল। সেকেলে ধারণা থেকে বের হন। পাপী যে হোক না কেন, ছাড় দিবেন না। ম্যাও ম্যাও করে মোল্লাগিরি বাদ দেন। হোক মসজিদের সভাপতি বা সেক্রেটারি বা এলাকার এমপি মন্ত্রী তার বিরুদ্ধেও কিছু দেখলে বলবেন। আর আপনারা তো ওয়াজিফা আর ফাজায়েলে মাসায়েল ছাড়া অন্য কোন গ্রন্থ পড়েন না। সকল বিষয়ের বই পড়বেন। হোক তা ইহুদি খ্রিস্টান বা নাস্তিকের লেখা। জবরদস্তি প্রিয় মোল্লা না হয়ে জাতিকে সঠিক ধর্মের পথ বাতলে দেন, ধর্মান্ধতা ত্যাগ করেন। জাতিকে তোতাপাখির লাহান শুধু কোরআন মুখস্থ ঠোঁটস্থ না করে আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞান অর্জন করার জন্য উৎসাহ দেন। পানি পড়া, ফু আর তাবিজ-কবচের ব্যবসা ছাড়েন। এমনভাবে থাকেন মসজিদ কমিটি আপনার পিছে পিছে ঘুরবে আপনি না।
লেখক- তরুণ ক্যালিওগ্রাফার ও সাংবাদিক