৭৫’র ক্ষুদিরাম শহীদ মৌলভী সৈয়দের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা…
৭৫ এর ১৫ই আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে যে কজন সাহসী সন্তান প্রাণ দিয়েছেন মৌলভী সৈয়দ ছিলেন তাদের মধ্যে প্রথম শহীদ।
১৯৭৭ সালের ১১ আগস্ট স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান বিনা বিচারে তাকে হত্যা করেছিল। মেজর জিয়া সেদিন বিচারের নামে প্রহসন করে অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছিল। কর্ণেল তাহেরসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছিল, যাদের নাম হয়তবা আমাদের জানা নেই। সংগ্রামের মাধ্যমে যার জীবন শুরু তার নাম শহীদ মৌলভী সৈয়দ। ১৯৬০ সালে পুঁইছড়ি ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা হতে উলা পাস করে পরবর্তী ইজ্জতিয়া জুনিয়র হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হন, তার দুই বছর পর চট্টগ্রাম শহরের ঐতিহ্যবাহি বিদ্যাপীঠ সরকারি মুসলিম হাই স্কুলে ভর্তি হয়ে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাস করেন।
মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তিনি ছিলেন সংস্কৃতিকমনা একজন মানুষ। এরপর চট্টগ্রাম সিটি কলেজে ভর্তি হন। সিটি কলেজ থেকেই শুরু হয় তার সংগ্রামী জীবন। পিতা একরাম আলী সিকদার, মাতা ওমেদা খাতুন। সহজ সরল ধর্মপ্রাণ মানুষ হিসেবে এলাকায় সর্বজনশ্রদ্ধেয় ছিলেন তার পিতা।
১৯৬৮ ও ৬৯ এর গণআন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে তার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, সাংগঠনিক দক্ষতা ও যোগ্যতা বলে ১৯৭৩ সালে বাঁশখালী সংসদীয় আসনে প্রথমে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান পরে দলের প্রার্থী শাহ-ই জাহান চৌধুরী চূড়ান্ত মনোনয়ন পেলে তিনি তাঁর পক্ষে নিরলসভাবে কাজ করেন।
মৌলভী সৈয়দ প্রচুর লেখাপড়া করতেন, তিনি ভালো গান গাইতেন, তার একটি ব্যক্তিগত লাইব্রেরিও ছিল। আগ্রাবাদ মিস্ত্রীপাড়া যুবলীগ নেতা সৈয়দ মাহমুদুল হক বর্তমান কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, তাদের বাড়িতে মৌলভী সৈয়দ থাকতেন এবং সেখানে মাঝে মধ্যে গানের আসর বসাতেন তিনি।
লালদিঘীর মাঠে জয় বাংলা বাহিনীর মার্চপাস্ট অনুষ্ঠিত হল। পাকিস্তানি পতাকা পোড়ানো হল। মৌলভী সৈয়দ উত্তোলন করলেন বাংলাদেশের পতাকা আর মহিউদ্দিন চৌধুরী উত্তোলন করলেন জয় বাংলা বাহিনীর পতাকা।
মৌলভী সৈয়দ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে চট্টগ্রাম নগর গেরিলা বাহিনীর অধিনায়ক ছিলেন। অনলবর্ষী এই বক্তা চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন, সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বর্তমান দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দীন আহমেদকে।
এছাড়াও তিনি চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। সাধারণ সম্পাদক ছিলেন চট্টগ্রামের আরেক কিংবদন্তী নেতা সাবেক মেয়র এ.বি.এম. মহিউদ্দীন চৌধুরী।
পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত বাকশালের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার যুগ্ম সম্পাদক এর দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সাতকানিয়া থেকে নির্বাচিত সাবেক এমপি মরহুম জননেতা এম সিদ্দিক আহমদ। যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে আরো যারা দায়িত্ব পালন করেছিলেন তারা হলেন মরহুম জননেতা আতাউর রহমান খান কায়সার, সাতকানিয়ার কৃতি সন্তান এম আবু সালেহ, মরহুম এ.কে.এম আব্দুল মান্নান ও নাজিম উদ্দীন।
অতি সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও তার মাঝে যে সংগ্রামী চেতনা ছিল তা অনেক বড় নেতার মাঝেও দেখা যায় না। নীতি এবং আদর্শের প্রশ্নে কারো সাথে আপোষ করেননি।
তিনি অন্যায়ের কাছে কোন দিন মাথা নত করেননি।’ ৬৯ এর গণ আন্দোলনে চট্টগ্রামে যেকজন ছাত্রনেতা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে দীর্ঘদিন কারাবন্দি ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম শহরে কয়েকটি গেরিলা অভিযানে তিনি ব্যক্তিগতভাবে নেতৃত্ব দিয়ে সফল হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক ব্যক্তি।
১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার প্রতিবাদে প্রথম সশস্ত্রপথে সংগঠিত করে হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলেন মৌলভী সৈয়দ। সালাম জানাই এই মহান জাতীয় বীর, দেশবরেণ্য নেতাকে।
তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে নতুন প্রজন্ম সামনের দিকে এগিয়ে যাবে এই প্রত্যাশা আমাদের।
লেখক: সালাউদ্দিন সাকিব
সাবেক আহবায়ক: চট্টগ্রাম দক্ষিণজেলা ছাত্রলীগ