২৭ বছরেও থামেনি স্বজনহারাদের কান্না

আজ ভয়াল ২৯ এপ্রিল : ২৭ বছরেও
থামেনি স্বজন হারাদের কান্না

মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ ছানুবী : আজ ভয়াল ২৯ এপ্রিল। ২৭ বছর পূর্বে ১৯৯১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হেনেছিল স্মরণকালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস। রাতের অন্ধকারে মুহূর্তের মধ্যে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল উপকূলীয় এলাকা। নিহত হয় সোয়া লক্ষাধিক মানুষ। গৃহহারা হয় হাজার হাজার পরিবার। দেশের মানুষ বাকরুদ্ধ হয়ে সেদিন প্রত্যক্ষ করেছিল প্রকৃতির করুণ এই রুদ্ধশ্বাস। প্রাকৃতিক দুর্যোগের এতবড় অভিজ্ঞতার মুখোমুখি এদেশের মানুষ আর কখনো হয়নি। সেই দিনের স্বজনহারা মানুষের কান্নায় এখনও ভারি হয় উপকূলের আকাশ বাতাস। কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপকূলবাসীসহ সারা বাংলাদেশের মানুষকে সেই ভয়াবহ স্মৃতি স্বজন হারানোর বেদনা আজও অশ্রু ভারাক্রান্ত করে তুলে। ইতিহাসের ওই ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসে উপকূলীয় এলাকার ১ লাখ ৩০ হাজার বনি আদমসহ লাখ লাখ পশুপাখি, গরু-মহিষ, হাঁস-মুরগীর করুণ মৃত্যু এবং হাজার হাজার ঘরবাড়ী বিধ্বস্ত হওয়াসহ প্রচুর ধনসম্পদ ভেসে গিয়েছিল। ঘূর্ণিঝড়ে দেশের সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত- এলাকা হচ্ছে চট্টগ্রাম জেলার উপকূলীয় এলাকা বাঁশখালী। শুধু বাঁশখালীতেই সেদিন ৪৫ হাজার মানুষ নিহত এবং কয়েকশ কোটি টাকার সম্পদ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। সাগর পাড় থেকে ৬ কিলোমিটারের মধ্যে এমন কোন ঘর এবং পরিবার ছিল না যে ঘর এবং পরিবারের একাধিক মানুষ সেদিন নিহত এবং হারিয়ে যায়নি। সেদিনের ঝড়ো ছোবল ও অথৈ পানিতে বিরাণভূমিতে পরিণত হয়েছিল পুরো এলাকা। প্রায় ৩৭ কিলোমিটার সাগরবেষ্টিত বাঁশখালী উপকূলীয় এলাকা ওই এলাকায় বসবাসকারী ৫ লক্ষাধিক মানুষ চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। উপকূলীয় ছনুয়া, বড়ঘোনা, গন্ডামারা, সরল, বাহারছড়া, খানখানাবাদ, ইলশা ও প্রেমাশিয়াসহ বাঁশখালীর ক্ষতিগ্রস্ত- জনগণ প্রতি বর্ষায় আরো একটি ২৯ এপ্রিলের ছোবল আতঙ্কে রীতিমত তটস্থ থাকেন। প্রতিবছর এই দিনে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে উপকূলবাসীর মাঝে। বিশেষ করে খানখানাবাদ, কদমরসুল, ছনুয়া, বড়ঘোনা, গন্ডামারা ও প্রেমাশিয়া এলাকায় প্রতি বর্ষায় সামুদ্রিক লবণ পানি প্রবেশ করে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও ঘরবাড়ী বিধ্বস্ত হয়। এই সময় হাজার হাজার মানুষকে পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনাযাপন করতে হয়। ৯১-এর ঘূর্ণিঝড়ের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপকূলীয় এলাকার অসহায় মানুষগুলোর জীবন রক্ষার্থে আধুনিক ভেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সাগর পাড় এলাকায় পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেন্টার এবং আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের ওয়াদা ও তাগিদ দিয়ে দীর্ঘ ২৭ বছর পেরিয়ে গেলেও আজো তা বাস্তবায়ন হয়নি।তবে বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার উপকুলবাসীর জানমাল রক্ষার্থে ২৫১ কোটি টাকার বিশাল বাজেটে সাংসদ মোস্তাফিজুররহমান চৌধুরীর মাধ্যমে বাঁশখালী উপকুলে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছেন।এটি দ্রুত বাস্তবায়ন হলে উপকুলবাসী কে আর তিমিরে পড়ে থাকতে হবেনা। বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও বিদেশী দানশীল ব্যক্তিবর্গ প্রায় ১১৮টি সাইক্লোন সেল্টার বাঁশখালীতে নির্মাণ করলেও তার অধিকাংশই সাধারণ জনগণের উপকারে আসছে না। অধিকাংশ সাইক্লোন সেল্টার বর্তমানে মাদকসেবী, নেশাখোর ও মাদক সেবীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। ছনুয়া, খানখানাবাদ, গন্ডামারা ইউপি’র বেশকিছু সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণ ত্রুটি, আকারে ছোট এবং ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেগুলো ব্যবহার অনুপযোগী বিধায় স্থানীয় জনগণ উক্ত সাইক্লোন সেন্টার দিয়ে কোন উপকার পাচ্ছেন না। তাছাড়া অধিকাংশ সাইক্লোন সেন্টার সমুদ্র উপকূলে নির্মাণ না করে প্রভাবশালীদের চাপে মহাসড়কের কোল ঘেঁষে পাহাড়ী এলাকায় অপ্রয়োজনীয় স্থানে নির্মাণ করার ফলে সেগুলোও জনগণের কোন কাজে আসছে না। প্রধান সড়কের কোল ঘেঁষে নির্মিত সাইক্লোন সেল্টারগুলো এখন স্থানীয় প্রভাবশালী, সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ, ও অপরাধীদের নিরাপদ আখড়ায় পরিনত হয়েছে। এসব বিষয়ে প্রশাসনের জরুরী পদক্ষেপ দরকার।

Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *