আনোয়ারায় বিবাহ অনুষ্ঠানে খেতে বসে চিংড়ি মাছ না পেয়ে তুলকালাম ঘটানো সেই জামাই সালিশি বৈঠকের সিদ্ধান্তের কথা রাখলেন না। গত ২৭ শে সেপ্টেম্বর বিবাহ অনুষ্ঠানে উচ্ছৃঙ্খলতা করায় ১ অক্টোবর স্থানীয় চেয়ারম্যান নিয়ে সালিশি বৈঠকের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয় ৩ লক্ষ টাকা মেয়ের ব্যাংক একাউন্টে প্রদান করে আজ ৫ অক্টোবর শুক্রবার মেয়ে ঘরে তুলে নিয়ে যাবে। উক্ত সালিশি বৈঠকে চেয়ারম্যান এর সিদ্ধান্তে বর আলমগীর এর বাবা আব্দুল মোনাফ মেনে নিয়ে কথা দিলেও, সেই কথা রাখেননি তারা।
জানা যায়, সালিশি বৈঠকের সিদ্ধান্তে মেয়ের একাউন্টে ৩ লক্ষ টাকা প্রদান করে আজ শুক্রবার মেয়ে ঘরে তুলে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল বরের। কিন্তু বৈঠকে এই কথা মেনে নিলেও এখন টাকা দিয়ে মেয়ে নিয়ে যাওয়ায় অাপত্তি জানাচ্ছে তারা। এই দিকে মেয়ে তুলে না নেওয়ার কথা শুনে ভেঙ্গে পড়েছে মেয়ের বাবা মোহাম্মদ হোসেন।
তিনি বলেন- আমার মেয়ের সাথে খুরুস্কুল গ্রামের আলমগীরের সাথে বিবাহ ঠিক হলে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর বটতলী বাজারের আলভী ম্যারেজ গার্ডেনে বিবাহ অনুষ্ঠান হয়। সেখানে খাবার টেবিলে চিংড়ি মাছ না পেয়ে জামাই উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করলে এইসময় আমার মেয়েকে তার কাছে তুলে দিয়নি। গত ১লা অক্টোবর দুই পরিবার একটি মিমাংসার জন্য স্থানীয় দুই চেয়ারম্যান নিয়ে সালিশি বৈঠকে বসি। সেই সময় আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য ৩ লক্ষ টাকা ব্যাংক একাউন্ট করে দিয়ে মেয়ে তুলে নিয়ে যাবে আজ শুক্রবারে। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে জামাই এর বাবা ফোন করে বলেন টাকা দিতে পারব না, টাকা ছাড়া মেয়ে দিলে নিয়ে যাব না হলে তুলে নিব না। এখন আমি কোথায় যাব, আমি এর একটি বিচার চাই।
বরের বাবা আবদুল মোনাফ মেয়ের পরিবারকে জানায়- আমার ছেলে বিবাহ অনুষ্ঠানে যে বেয়াদবি করেছে তার জন্য ক্ষমা চাইতে পারব কিন্তু টাকা জরিমানা দিতে পারবনা। টাকা না দিয়ে মেয়ে দিলে আনব, না হলে আনবনা।
সালিশি বৈঠকের বিচারক ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন মুঠোফোনের সাহায্যে জানায়- আমি ও বটতলী ইউপি চেয়ারম্যান মিলে সিদ্ধান্ত করে দিই মেয়ের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য ৩ লক্ষ টাকা একাউন্ট করে দিয়ে শুক্রবার মেয়ে তুলে নিয়ে যেতে পারবে। বরের বাবা এই কথা মেনে নেয়। কিন্তু সকালে শুনেছি তারা টাকা দিতে অাপত্তি জানায়, টাকা দিতে পারবে না। আমি টঙ্গী বঙ্গবন্ধুর কবর জিয়ারত করে আনোয়ারায় গিয়ে আবার বৈঠক করব।
উল্লেখ্য- গত ২৭ শে সেপ্টেম্বর ১১ নং জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের ৮নং খুরুস্কুল গ্রামের হাজী নতুন বাড়ীর আবদুল মোনাফের ছেলে মোহাম্মদ আলমগীর (৩০) সাথে একই ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী গ্রামের এক মেয়ের সঙ্গে বিয়ের দিন ধার্য্য করে বটতলী বাজারের আলভী ম্যারেজ গার্ডেনে বিবাহ অনুষ্ঠান হয়। এই সময় বরের টেবিলে মুরগীর রোস্ট, খোরমাসহ নানা উপাদেয় আইটেম দেওয়া হলেও চিংড়ি মাছ না দেওয়ায় বর ক্ষিপ্ত হয় উচ্ছৃঙ্খলতা সৃষ্টি করেন। এই সময় বরের হাতে মেয়ে তুলে দেয়নি কনের বাবা। দুই পক্ষ একটি সমাধান আনার জন্য ১ অক্টোবর বরুমছড়া চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ও বটতলী ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম.এ মন্নান নিয়ে সালিশি বৈঠকে ৩ লক্ষ টাকা জরিমানা করেন। ৫ অক্টোবর শুক্রবার মেয়ের ব্যাংক একাউন্টে টাকা প্রদান করে শুক্রবার মেয়ে ঘরে তুলে নিয়ে যাবে। এছাড়া আগের কাবিননামা অনুযাযী ৭ লাখ টাকা দেনমোহর ও স্বর্ণালংকার বাবদ ৮০ হাজার টাকা উসুলের সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে। বিবাহ অনুষ্ঠানে বর আলমগির খারাপ আচরণ করায় মেয়ের বাবা আর আত্মীয়স্বজন থেকে মাফ চান এবং ভবিষ্যতে এরকম উচ্ছৃঙ্খল আচরণ আর করবেন না বলে জানান।