ভয়াবহ ২৯ এপ্রিল ও কিছু স্মৃতি;
১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল(১৫ বৈশাখ) দিবাগত রাতে আঘাত এনেছিল সর্বগ্রাসী সাইক্লোন কুতুবদিয়া, বাঁশখালী,আনোয়ারা ও সন্ধীপ উপকুলে।
আমি তখন ৫ম শ্রেনীতে পড়ি। ঝড়ো হাওয়ায় আমাদের ঘরের চালা (টিনের ছাউনি কাঁচা ঘর) উড়িয়ে নিয়ে গেছে। আমরা গুদাম ঘরে (কাঁচা ঘরের বেডরুম) আশ্রয় নিয়েছি। বাইরে বাতাসের গর্জন আর আগুনের স্ফলিঙ্গ দেখি জানালার ফাঁক দিয়ে। আমার পরোপকারি বাবা বের হয়ে গেলেন প্রতিবেশী আত্নীয় স্বজনদের অবস্থা জানতে। পরে দেখি পাড়ার সবার চিল্লাচিল্লি ঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার জন্য। ঘরের আঙ্গিনায় সমুদ্রের লোনা পানি,তখনও আমার বাবা পরিবার পরিজনের কাছে ফিরে আসে নাই। জলোচ্ছাসের লোনাপানির ঢেউ যখন ঘরে ঢুকতে শুরু করেছে ততোক্ষনে বাবা ফিরে এসেছেন মহল্লার সবাইকে নিরাপদ দুরত্বে সরিয়ে, বিশেষ করে উনার বুবু (আমার ফুফু) কে ঘর থেকে বের করে পাঠিয়ে দিয়েছেন। (আজ আমার বাবা ও ফুফু কেউ বেঁচে নেই),
আমার মা বাতাসের ধাক্কায় ঘরের দরজা আটকাতে না পেরে খোলা দরজা,অনিরাপদ ঘর ছেড়ে আমাদের নিয়ে জলোচ্ছাস থেকে বাঁচতে বেরিয়ে পড়লেন। যেমন বাতাস,তেমনি আকাশের গর্জন,বিদ্যুতের ঝলকানি! পাড়ার কেউ নেই, সবাই নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে। আমার বাবার কোলে আমার ছোট ভাই রনি আর আমি বাবার হাত ধরে হাঁটছি। চারপাশে পানি আর পানি! রাস্তা চেনা যাচ্ছিল না, হঠাৎ লক্ষ্য করলাম কোমর পানিতে তলিয়ে যাচ্ছি, পাশের পুকুরের দিকে! আমার হুশ ছিল তাই মা বাবাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছিলাম। মা পিছলিয়ে পড়ে উনার বহু বছরের গচ্ছিত টাকা হারিয়ে ফেললেন! নানার বাড়ির কাছাকাছি যেতেই মামার সাথে দেখা। উনারা দুঃশ্চিন্তায় আমাদের জন্য। আমার পায়ে কাঁটাবিদ্ধ হয়েছে তাই মামার কাঁধে চড়লাম। সারারাত নানার বাড়িতে (পাহাড়ের নিকটবর্তী) কাটালাম। ভোর হতে শুনলাম তুফান শেষ!
সকালে অনেকের মতো বাড়ি গিয়ে দেখি বাড়িঘর নাই! গাছ পালা পুড়ে গেছে। চারপাশে পশুপাখির সাথে মানুষের লাশ আর লাশ!!
ধনী গরীব সবাই এক কাতারে!!
লেখক: সালাউদ্দিন সাকিব, সাবেক আহবায়ক- চট্টগ্রাম দক্ষিণজেলা ছাত্রলীগ