মোঃরিয়াদুল ইসলাম রিয়াদঃ বাঁশখালী উপজেলার পশ্চিমঞ্চলে গ্রামের পর গ্রামের মাঠজুড়ে শুধু সুস্বাদু টমেটো আর টমেটো। চরাঞ্চল হিসেবে পরিচিত এসব গ্রামের লোকজন টমেটো চাষকে তাঁদের অন্যতম পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। টমেটো চাষ করে অনেক কৃষকের পরিবারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে।
টমেটোচাষিরা জানান,বাঁশখালী উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ১২ হাজার কৃষক টমেটো চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। টমেটোর সবচেয়ে বড় বাজার হল টাইমবাজার,চাম্বল বাজার,নাপোড়া বাজার,
বৈলছড়ি বাজার।এই বাজার গুলো থেকে প্রতিদিন ৩০ হাজার মণ টমেটো চট্রগ্রাম-ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়।অতিরিক্ত সুস্বাদুর কারনে বেশ কদর রয়েছে এই টমোটার। গত মাসেও ২০০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। বাজারে সরবরাহ বেশি থাকায় এখন থেকে ১৮০০ টাকায় প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে।
বাঁশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলার গন্ড়ামারা,সরল,
চনুয়া,বাহাঁরছড়া,খানখানাবাদ ও পুকুরিয়া ইউনিয়নের ৫৭ গ্রামের ১২ হাজার কৃষক বঙ্গোপসাগরে তীরের চরগুলোর ৩ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ করেছেন। প্রতি ৩ দশমিক ৪৭ একরে ১২০ মেট্রিক টন টমেটো চাষ হয়। প্রথম দিকে মণপ্রতি ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায় টমেটো বিক্রি হয়েছে।
গত শনিবার বাজার সরেজমিনে দেখা যায়,টাইম বাজারের বিশাল মাঠজুড়ে শুধু টমেটো আর টমেটো। শতাধিক নারী-পুরুষ শ্রমিক টমেটো বিক্রির জন্য স্তূপ করে রাখার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা টমেটোর পাইকারেরা টমেটোর ট্রাকভর্তিতে ব্যস্ত।
অাব্দুল্লাহ নামে এক শ্রমিক বলেন:‘তিন মাস এই বাজারে আমার মতো হাজারো দরিদ্র ব্যাক্তি টমেটোর কাজ করেন। আমরা পাইকারদের কেনা টমেটো খাঁচায় ভর্তি করি। এতে প্রতিদিন ২০০ টাকা করে পাই।’
গন্ড়ামারা ইউনিয়নের চরপাড়ার চরের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তিনি এবার এক বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছেন। এতে তাঁর ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৯৮ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন। তাঁর জমিতে যে পরিমাণ টমেটো রয়েছে, তা আরও প্রায় ৯৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবেন।
চট্রগ্রাম বহদ্দারহাট এর পাইকার ওমর ফারুক সাহেব বলেন,বাঁশখালীর শুধু টমেটো দেখতেই সুন্দর তা নয়, খেতেও সুস্বাদু।বাঁশখালী উপকুলীয় এলাকায় এই টমেটোর চাষ বেশি। প্রতিবছর বাঁশখালীর বাজার গুলো থেকে প্রায় প্রতিদিনই ৫০০ থেকে ৬০০ মণ টমেটো কিনে শহরে নিয়ে অাসি অামরা।রোববার ১৮৫ মণ টমেটো কিনছি অামরা। টমেটোগুলো ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা মণ দরে কিনেছি।এই টমেটো গুলো ১৮০০ থেকে সাড়ে ১৯০০ টাকা মণ বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করেন। এতে পরিবহনসহ অন্যান্য খরচ বাদে প্রতি ট্রাকে তাঁর ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা লাভ হবে।
টাইম বাজারের ইজারাদার,রা বলেন,টমেটো চাষ করে এখন কৃষকেরা ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। তাঁদের চাষকৃত টমেটো এখন প্রতিদিন দেশের নানা প্রান্তে চলে যাচ্ছে।টাইম-বাজারে বাজারে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩৫ হাজার মণ টমেটো বিক্রি হয়। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত টাইম-বাজারে টমেটোর বাজার কর্মচঞ্চল থাকে। প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকার টমেটো কেনাবেচা হয় এই বাজারে।
বাঁশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্ত বলেন,উপজেলার পশ্চিমঞ্চলে বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ চরাভূমিতে টেকসই ফসল এখন টমেটো।গত সেপ্টেম্বর থেকে টমেটো বিক্রি শুরু হয়েছে; চলবে এপ্রিল মাস পর্যন্ত। প্রতি বিঘায় একজন চাষি খরচ বাদে এ বছর ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা লাভ করতে পারবেন। টমেটো চাষে করে বাঁশখালীর দরিদ্র অনেক কৃষকের সচ্ছলতা ফিরে এসেছে।