BanshkhaliTimes

সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদ আসহাবউদ্দীন আহমদের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

BanshkhaliTimes

তাফহীমুল ইসলাম, বাঁশখালী: বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদ অধ্যাপক আসহাবউদ্দীন আহমদের ২৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯৯৪ সালের ২৮ শে মে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তাঁকে চট্টগ্রামের বাঁশখালী ডিগ্রী কলেজ জামে মসজিদের পাশে দাফন করা হয়।

১৯১৪ সালে বাঁশখালী উপজেলার সাধনপুর গ্রামে অধ্যাপক আসহাব উদ্দীন আহমদের জন্ম। তিনি ১৯৩২ সালে বাণীগ্রাম সাধনপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা পাশ করেন। এরপর চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট ও বি. এ পাশ করেন। ১৯৩৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্যে এম. এ ডিগ্রী লাভ করেন এবং চট্টগ্রাম কলেজে শিক্ষকতা পেশার মাধ্যমে কর্মজীবনে পদার্পণ করেন। পরে ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমান হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজ), লাকসাম নবাব ফয়েজুন্নেসা কলেজ, ফেনী সরকারী কলেজ, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে অধ্যাপনা করেন। শিক্ষকতা জীবনে তিনি বেসরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির মুখপত্র ‘দি টিচার’ সম্পাদনা করেন।

অধ্যাপক আসহাব উদ্দীন আহমদ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে শিক্ষকতাকালীন পদত্যাগ করে সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেন। তিনি অবিভক্ত আওয়ামীলীগ এর কেন্দ্রীয় সদস্য ও চট্টগ্রাম জেলার সহ-সভাপতি ছিলেন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের সদস্য হিসেবে বাঁশখালী আসন থেকে এম. এল. এ (প্রাদেশিক সংসদ সদস্য) নির্বাচিত হন।

এছাড়াও তিনি মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাপ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং ন্যাপের কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তান কমিউসন্স পার্টি ও কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য এবং চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যাপক আসহাব উদ্দীন আহমদ বাংলাদেশ চাষী মুক্তি সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। রাজনীতিবিদ হিসেবে আসহাব উদ্দীন আহমদ ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ, একনিষ্ঠ। ২৪ বছরের রাজনৈতিক জীবনে তিনি ১৫ বছর আত্মগোপনে কাটান। ১৯৮০ সালে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে গণচীন সফরের পর আসহাব উদ্দীন আহমদ সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

সাহিত্যের ছাত্র ও অধ্যাপক হিসেবে আসহাব উদ্দীন আহমদ সমাজ পরিবর্তনে অনিয়মের বিরুদ্ধে লেখালেখি করতেন। ১৯৪৯ সালে তাঁর লেখা প্রথম বই ‘বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর’ প্রকাশিত হয়। এরপর ‘জান ও মান’ (১৯৫০), ধার (১৯৫৪), বন্দে ভোটারম (Bande Votaram) (১৯৬১), ইন্দিরা দি’ সমীপেষু, সের আনা টাকা মাত্র (১৯৬৮), আওয়ামী লীগের মীর জাফরী ঐতিহ্য (১৯৭০), হাতের পাঁচ আঙ্গুল (১৯৭০), লেখক ও পাচক (১৯৭১), দাড়ি সমাচার (১৯৭১), বিপ্লব বনাব অতি বিপ্লব (১৯৭৪), ভাতের বাংলা কাপড়ের বাংলা (১৯৭৪), বাঁশ সমাচার (১৯৭৪), দ্বিপদ বনাম চতুস্পদ (১৯৭৫), পথ চলিতে, মীর জাফরী ঐতিহ্য, ইন্দিরা গান্ধীর বিচার চাই (১৯৭৫), উদ্ধার (১৯৭৮), আমার সাহিত্য জীবন (১৯৮০), ডেনজার সিগন্যাল (১৯৮০), ঘুষ (১৯৮৬), উজান স্রোতে জীবনের ভেলা (১৯৯০), দাম শাসন দেশ শাসন (১৯৯১), ভূমিহীন কৃষক কড়িহীন লেখক (১৯৯২), আসহাব উদ্দীন আহমদের সেরা রম্য রচনা সংগ্রহ (১৯৯৪) প্রকাশিত হয়। খ্যাতিমান সাহিত্যিক হিসেবে তিনি বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে আছেন।

সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্মীকৃতিস্বরূপ আসহাব উদ্দীন আহমদ একুশে পদক (২০০৫, মরণোত্তর), বৌদ্ধ একাডেমি পদক, অনুপম পদক, চট্টগ্রাম কলেজ প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ পদক, আইনজীবি সমিতি পদক, বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র পদক; চট্টগ্রাম পদকে ভূষিত হন।

Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *