রাজিতুল্লাহ রিফাত: বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ দুটি অভিন্ন সত্ত্বা। সেই সত্ত্বাকে বাঙালি জাতি হৃদয়ে ধারণ করে। বঙ্গবন্ধু আমাদের অনুভূতি ও আত্মার সাথে মিশে আছেন। তাঁর নেতৃত্বে আমরা ১৯৭১ সালে আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ। পেয়েছি একটি লাল-সবুজের পতাকা, পার্লামেন্ট। বঙ্গবন্ধু ছিলেন সাহসিকতা ও বীরত্বের কালজয়ী এক প্রতীক। তাঁর সাহসিকতাকে পুঁজি করেই বাঙালি জাতি পেয়েছে স্বাধীনতা। একবার ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট প্রশ্ন করেছিলেন- ‘আপনার সবচেয়ে বড়ো যোগ্যতা কী’? বঙ্গবন্ধু জবাবে বলেছিলেন, ‘আমি আমার দেশের মানুষকে ভালোবাসি।’ ডেভিড ফ্রস্ট আবার প্রশ্ন করেন- ‘আপনার বড়ো দূর্বলতা কী’? উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘আমি আমার দেশের মানুষকে বেশি ভালোবাসি’। এ কথার মাধ্যমে জনগণের প্রতি বঙ্গবন্ধুর অকৃত্রিম ভালোবাসা প্রকাশের পাশাপাশি জনগণের প্রতি বিশ্বাসের বিষয়টিও সুস্পষ্ট। দেশকে ভালোবাসতে হবে, দেশের মানুষকে ভালোবাসতে হবে, এটা ছিল বঙ্গবন্ধুর জীবনের অন্যতম দর্শন। তিনি শুধু জনগণকে ভালোই বাসতেন না, বাংলার জনগণকে নিয়ে তিনি গর্ববোধও করতেন। ঢাকা স্টেডিয়ামে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র সমর্পণের দিন বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে বলেছিলেন, ‘আমি সব ত্যাগ করতে পারি, কিন্তু তোমাদের ভালোবাসা ত্যাগ করতে পারব না।
বঙ্গবন্ধু আমাদের অসীম সাহসীকতার প্রতীক। তিনি সমগ্র বাঙালি জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বীর। ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন, তিতুমীর, সুভাষ বোস, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জগদীশচন্দ্র বসু, শেরেবাংলা, সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানীর মতো সাহসী নেতৃত্বের নির্যাস তিনি নিজের মধ্যে ধারণ করতেন। তিনি হয়ে উঠেছিলেন গরিব-দুঃখীসহ সমগ্র বাঙালির সত্যিকারের মহান বীরপুরুষ। অধিকার আদায়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে বহুবার তিনি জেল খেটেছেন। তাঁর জীবনের ১৪টি বছর জেলের মধ্যেই কেটে গেছে। জাতির পিতা তাঁর রাজনৈতিক জীবনে প্রায় ৫ হাজার দিন কারাভোগ করেছেন। কিন্তু মানুষের অধিকার ও দেশের স্বাধিকার আন্দোলনে এবং দেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে কখনোই পিছু হটা তো দূরের কথা, বিন্দুমাত্র ভয়ও পাননি। এমনকি মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষ সময়ে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় নির্জন সেলের সামনে কবর খুঁড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ভয় পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু অসীম সাহসী বাঙালির নেতা শেখ মুজিব ভয় পাননি, বরং পাকিস্তান কর্তৃপক্ষকে বলেছেন, ‘আমি বাঙালি, আমি মুসলমান, আমি মানুষ। মানুষ একবার মরে, বারবার মরে না। আমি কখনোই আত্মসমর্পণ করব না। যদি তোমরা আমাকে মেরে ফেল, মৃত্যুর পর আমার লাশটা আমার দেশে আমার মানুষদের কাছে পৌঁছাইয়া দিও।’
আবারও জোর দিয়ে বলতে চাই, ঘাতকেরা হয়নি সফল; মুজিব চেতনায় জাগ্রত, হৃদয়ে স্পন্দিত, শোকাহত-প্রতিবাদী-মুজিব বিপ্লবী জনতা কোটি কোটি। মুজিব মরেনি; মরতে পারে না; শতবর্ষে শেখ মুজিব শতকোটি গুণ শক্তিশালী।