বিটি ডেস্কঃ ২০১৭ সালে পথচলা হোক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির। সদ্য বিদায় নেওয়া বছর ২০১৬ সাফল্যে ভরা। কেবল জঙ্গি উত্থানে নতুন মাত্রা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘরে হামলা, গাইবান্ধার সাঁওতাল পল্লীতে হামলার ঘটনা ছাড়া তেমন কোনো কালো রেখা ছিল না।
২০১৬ সালে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মেগা প্রকল্পগুলোর যাত্রা শুরু হয়েছে। বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার পূরণে দেশের স্বপ্নের সেতু ‘পদ্মা সেতু’ ও মেট্রোরেল প্রকল্পের গতি পেয়েছে নতুন মাত্রা। ২০১৭ সালে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে আরেক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে।
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে অর্থনীতির পালে ছিল হাওয়া। অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে সরকারও অতিক্রম করেছে বন্ধুর পথ। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপপর্ব শুরু হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বছরের শুরু থেকেই একের পর এক অর্জন করেছে সাফল্য। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ইতিহাসে দলীয় ভিত্তিতে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নৌকা মার্কার প্রার্থীরা পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে ব্যাপক জয় পেয়েছে। জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরাই জয়লাভ করেছেন বেশি।
গত অক্টোবরে ২০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সামনের দিনগুলোর মিশন-ভিশন বাস্তবায়নের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে। এক যুগ পর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করে বৃদ্ধি করেছে সাংগঠনিক শক্তি।
অন্যদিকে সংসদের বাইরে থাকা দল বিএনপি লক্ষ্য বাস্তবায়নে ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় কাউন্সিল সম্পন্ন করেছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন বিষয়ে দলটি ইতোমধ্যে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে বসেছে। জাতীয় সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি সাংগঠনিক সফর শুরু করেছে ২০১৬ সালে। পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান। এছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল), কমিউনিস্ট পার্টির মতো দলগুলোও কংগ্রেস সম্পন্ন করেছে ২০১৬ সালে।
স্বাস্থ্যক্ষেত্রে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। নারী শিক্ষা ও সামাজিক মূল্যায়নে অগ্রগতি হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ পর্যাপ্ত। রপ্তানি আয়ও স্বস্তিদায়ক। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নেতৃত্ব দেওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুরস্কার প্রাপ্তি দেশকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। বিশ্বসভায় খেলাধুলায় সাফল্য এসেছে। দেশে ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প নতুন স্বপ্ন নিয়ে এসেছে।
১৯৭১ সালে অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন নিয়ে পাকিস্তানি শোষণ-শাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে বাঙালি জাতি। স্বাধীনতার চার দশক পর সে স্বপ্ন অর্জনের পথে অনেকটাই এগিয়েছে দেশ। আর এ স্বপ্ন পূরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে রপ্তানি খাত। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের রপ্তানি খাত কাঁচা চামড়া ও পাটনির্ভর হলেও সময়ের আবর্তনে সে তালিকায় যুক্ত হয়েছে তৈরি পোশাক, হিমায়িত খাদ্য, চামড়াজাত পণ্য, জাহাজ নির্মাণসহ হাল্কা ও মাঝারি শিল্পের নানা পণ্য। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের মাত্র ৩৪ কোটি মার্কিন ডলারের রপ্তানি আয় গত অর্থবছরে পৌঁছেছে প্রায় ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে রপ্তানি খাতে আয় হয়েছে ১ হাজার ৩৬৯ কোটি ৯ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার, যা গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ের রপ্তানি আয়ের তুলনায় ৮১ কোটি ১১ লাখ ৪০ হাজার টাকা বা ৬ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর মেয়াদে নিটওয়্যার খাতের পণ্য রপ্তানিতে ৫৬৩ কোটি ২৭ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার এবং ওভেন গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিতে ৫৪৯ কোটি ৮৬ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার আয় হয়েছে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আয় হয়েছে ১৮ কোটি ৬১ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেশি। পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে পাঁচ মাসে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ। রপ্তানি আয় এসেছে ৩৮ কোটি ৭২ লাখ ডলার। এ ছাড়া পাঁচ মাসে প্লাস্টিক পণ্যে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৫৫ দশমিক ১৮ শতাংশ।
১৯৭২ সালে মাত্র ২ বিলিয়ন ডলার ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন ১০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে এলে ভাবমূর্তি নষ্ট হবে বলে ২০০১ সালে প্রথমবারের মতো আকুর আমদানি বিল বকেয়া রাখতে বাধ্য হয়েছিল বাংলাদেশ। এই ১৬ বছরের মাথায় সেই রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। যদিও বছরের শুরুতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চুরির ঘটনায় কিছুটা কমে আসে রিজার্ভের পরিমাণ।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছেন। ৩১ ডিসেম্বর যুবলীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ‘হলি আর্টিজান ও শোলাকিয়ায় হামলা আমাদের সাময়িকভাবে বিচলিত করেছে। কিন্তু দিশেহারা করতে পারেনি। ২০১৬ সালে আমাদের উন্নয়ন ও অর্জন বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদ আমাদের বিজয়ের পথে বাধা। এই বাধা অতিক্রম করে আমাদের পুরোপুরি বিজয়ী হতে হবে। এটাই হবে আমাদের আজকের শিক্ষা ও দীক্ষা।’
ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন বার্তায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পুরোনো বছরের সব ব্যর্থতা, গ্লানি, হতাশাকে ঝেড়ে ফেলে নবোদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণার কথা বলেছেন। পাশাপাশি অতীতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে তৎপর হতে পারলে নতুন বছরটি হয়ে উঠতে পারে সাফল্যময়- এ প্রত্যাশা করেছেন।