সাপে কাটলে যা করবেন

বন্যার সময় ঠান্ডা বাতাসের জন্য সাপ বেশী বিচরণ করে থাকে তাই এ সময়ে মানুষ বেশী দংশিত হয়।
এ সময় সাপ আতঙ্ক এবং সাপের উপদ্রব দুটোই খুব বেড়ে যায়। তা ছাড়া গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাপের আতঙ্কটা একটু বেশিই বিরাজ করছে। তাই সাপের উপদ্রব থেকে রক্ষা ও সাপে কাটলে তাৎক্ষণিকভাবে কী করণীয় সে সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুসারে কিছু পরামর্শ তুলে ধরা হলো-

অনেকের ধারণা সাপকে কিছুটা আঘাত করে চলে গেলে সাপ লোকটাকে চিনে রাখে এবং রাতে সাপ ওই আঘাতকারী লোকের বাড়ি গিয়ে দংশন করে। কিন্তু এটা একেবারেই কুসংস্কার কারণ বিজ্ঞানমতে সাপের স্মৃতি শক্তি খুবই কম তাই কাউকে চিনে রেখে তার ঘরে গিয়ে দংশন করার প্রশ্নই আসে না।

১. কোথায়ও সাপকে দেখলে তাকে তাকে চলে যেতে সুযোগ দিন, কোন সমস্যা হবে না।

২. ঘরে সাপ থাকার সম্ভাবনা থাকলে বিশেষ করে ইদুরের গর্ত থাকলে শুকনা মরিচ আগুনে পোড়া দিন। তাছাড়া বাজারে কার্বোলিক এসিড আছে, এগুলি বাড়িতে এনে বোতলসহ ঘরের মধ্যে রাখুন, সাপ চলে যাবে।

৩. কাউকে সাপে দংশন করলে ওঝা বা বুদ্ধের কাছে না গিয়ে ১০০০ টাকা দিয়ে সাপের এন্টিভ্যানম ইনজেকশন দিন। সুস্থ্য হবে নিশ্চিত।
দংশিত ব্যাক্তির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল সাহস দেয়া। প্রয়োজনীয় সাহস না দিতে পারলে, রোগী হার্ট এটাকে মারা যেতে পারে।

৪. সাপে দংশন করার পর ৭/৮ ঘন্টা পর্যন্ত রোগী বেঁচে থাকে, তাই ধৈর্য্য ধারণ করে দ্রুত ইনজেকশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

৫. কোন সাপে কামড় দিয়েছে সেটার পরিচয় জানা গেলে চিকিৎসায় কিছুটা সুবিধা হয়, তবে খেয়াল রাখতে হবে এতে যেন বেশী সময় নষ্ট না হয়।

৬. বাংলাদেশের বিষাক্ত প্রায় সকল সাপের বিষ নষ্ট করার ইনজেকশন আবিস্কার হয়েছে। শুধুমাত্র রাসেল ভাইপার বা শংখচুড় সাপের টিকা আবিস্কারের চেষ্টা চলছে। আর এই সাপ বাংলাদেশের রাজশাহী ছাড়া আর কোথাও দেখা যায় না।

৭. সাপ যদি হাতে বা পায়ে কামড় দেয় তাহলে বাঁধন দিতে হবে। দংশিত স্থানের কিছুটা ওপরে দড়ি বা হাতের কাছে যা পান, তা দিয়েই বেঁধে ফেলুন। মনে রাখবেন বাঁধনটা যেন অস্থিসন্ধিতে যেমন কনুই, কবজি বা গোড়ালি এবং গলা বা মাথায় না হয়। যে দড়ি বা কাপড় দিয়ে বাঁধবেন তা যেন চওড়ায় দেড় ইঞ্চি হয়, কখনো তা যেন সরু সুতোর মতো বা রাবার ব্যান্ডের মতো না হয়। বাঁধনটি যেন খুব বেশি শক্ত না হয়। বাঁধনটি এমনভাবে দিতে হবে যেন একটা আঙুল ওই বাঁধনের মধ্য দিয়ে যেতে পারে। যদি বাঁধনটি শক্ত হয়, তাহলে ঢিলা করে দেবেন, তবে কখনোই তা খুলে ফেলবেন না। বাঁধনটি দেওয়ার উদ্দেশ্য হলো রক্ত চলাচল বন্ধ রাখা। তবে বাঁধনটি একটানা ২০ মিনিটের বেশি একভাবে রাখবেন না। প্রতি ১০ মিনিট অন্তর তা আলগা করে দিতে হবে।

৮. দংশিত স্থানটি পরিষ্কার পানি দিয়ে ধোবেন।

৯. এবার জীবাণুমুক্ত ছুরি বা ধারালো ব্লেড দিয়ে দংশিত স্থান দুটোর প্রত্যেকটি সতর্কভাবে ১ সে. মি. লম্বা এবং ১ মি. মি. গভীরভাবে চিরে দিতে হবে।

১০. চেরা স্থানে ছয় মিনিট মুখ দিয়ে চুষলে তিন-চতুর্থাংশ বিষ বেরিয়ে আসে। তবে ৩০ মিনিট চোষাই ভালো। মুখ দিয়ে চোষার ক্ষেত্রে যিনি চুষছেন তার মুখে কোনো ক্ষত থাকা চলবে না। চোষার জন্য রাবার বাল্ব কিংবা ইলেকট্রিক সাকার শ্রেয়।

১১. বিষ চুষে বের করার পর দংশন স্থানে আয়োডিন টিংচার, কিংবা স্পিরিট লাগাতে হবে। স্থানটিতে এসিড কিংবা ফুটন্ত তেল দেওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

লেখক: গাজী কাইছার বিপ্লব
তরুণ লেখক

Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *