বেশ কিছুদিন আগে একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানীর হেড অফিসে একটি কাজে গিয়েছিলাম। সেখানে এক আলোচনায় একজন কর্মকর্তা বলছিলেন সাধারণ বীমা আর ইসলামী বীমা বা তাকাফুল হলো এমন যেঃ “Same Wine in Different Bottle.” বিষয়টি যথেষ্ট বিতর্কের দাবি রাখে। আমার আপত্তি ‘Wine’ শব্দটিতে। একটা গ্রুপ কি ইচ্ছে করেই নাকি না বুঝে এটি establish করতে চায় কি না জানি না।
আজ এক ছাত্রের একটা পোস্ট আবার মনটি খারাপ করে দিলো। পোস্টটিতে একটা কার্টুনে দেখানো হচ্ছে – সাধারণ ব্যাংক গুলো ক্লায়েন্ট এর গলায় শেকল পরিয়ে টানছে, আর ইসলামী ব্যাংকগুলো ক্লায়েন্ট এর গলায় তাজবীহ এর ছড়া পরিয়ে টানছে। আমার কাছে মনে হয় একটি মহল সুপরিকল্পিতভাবেই ইসলামী ব্যাঙ্কিং কে হেয় করার জন্য এই প্রোপাগান্ডায় অংশ নিয়েছে বা নিচ্ছে।
ইসলামী ব্যাঙ্কিং নতুন আনকোরা কোনো কনসেপ্ট নয়। এটি এখন সুপ্রতিষ্ঠিত। আর এ জন্যই সারা বিশ্বে এখন এই ব্যবস্থাটি যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। আর এর সুবিধা নেয়ার জন্য Standard Chartered, HSBC সহ অনেক বিশ্ব বিখ্যাত Conventional Bank গুলো ও Islamic Banking Wing introduce করতে দ্বিধা করেনি।
ব্যবসা এবং সুদ কখনো এক হতে পারে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেনঃ ‘আল্লাহ ব্যবসাকে করেছেন হালাল, আর সুদকে করেছেন হারাম’। এই ঘোষণার পর কোনো মুসলমানের জন্য সুদের কাছাকাছি যাওয়ারও আর সুযোগ থাকলো না।
ইসলামী ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা বিভিন্ন স্কিমে ব্যবসার মাধ্যমে বা চুক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। একটি ছোট্ট উদাহরন দেয়া যেতে পারে Conventional Banking and Islamic Banking এর পার্থক্য বুঝার জন্য। যেমন ধরুন আপনি একটি গাড়ি কিনতে চাইছেন। কনভেনশনাল ব্যাংক একটি দাম ঠিক করে আপনাকে টাকা দিয়ে দিবে আর বলবে মাসে মাসে নির্ধারিত হারে সুদ দিয়ে যেতে। সুদ দিয়ে দিলেই তাঁদের সাথে আপনার দেনা পাওনা শেষ। একই উদ্দেশ্যে ইসলামী ব্যাঙ্কে গেলে তাঁরা বলবে আপনাকে একটি ব্রান্ড ঠিক করতে যে গাড়িটি আপনি কিনতে চান। এবার নিয়ম হলো ব্যঙ্কের একজন কর্মকর্তা গাড়ির শো রুমে যাবে। দামদর ঠিক করে আপনার সাথে বসবে চুক্তির উদ্দেশ্যে। এখানে গাড়ি প্রথমে ক্রয় করবে ইসলামী ব্যাংক। তারপর তা, যেহেতু আপনি এখন মুল্য পরিশোধে অপারগ, আপনার কাছে দীর্ঘ সময় পরে বিক্রয় করার জন্য ব্যঙ্কের ক্রয় মুল্যের সাথে একটি মুনাফা যোগ করে নতুন মুল্য নির্ধারন করে আপনার কাছে প্রস্তাব করবে। আপনি যদি সেই মুল্যে এটি ক্রয় করতে রাজি থাকেন তবেই কেবল ব্যাংক আপনার কাছে গাড়িটি বিক্রয় করবে। তবে পরিপুর্ন মুল্য পরিশোধের পুর্ব পর্যন্ত গাড়ির মালিক থাকবে ব্যাংক। আর আপনি তা ভাড়ায় চালাবেন। যেহেতু গাড়ির মালিক ব্যাংক গাড়ির যে কোনো রিস্ক ও মালিক হিসেবে ব্যাংক তা নিতে পারে। তবে সব কিছুই চুক্তি মোতাবেক হবে যাতে আপনার সম্মতি থাকবে। ব্যঙ্ক এখানে স্পস্টতঃই ব্যবসা করছে বা ক্রয় বিক্রয় করছে। আপনাকে টাকা দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে না। প্রয়োজনে লাভ ক্ষতির অংশিদার ও হচ্ছে।
এবার আপনারাই বলেন কনভেনশনাল আর ইসলামিক ব্যাঙ্কিং কি এক?
…………………………………………………….
লেখকঃ মোঃ শরীফুল হক, সহযোগী অধ্যাপক, ইকোনোমিক্স এন্ড ব্যাঙ্কিং বিভাগ, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।