ছড়াক্কা
মুহাম্মদ শহীদুল ইসলাম
তোমায় আমি চিনি বন্ধু তুমি কততো ভালো!
সামনে এলে বন্ধু সাজো;
পিছন হলে পর।
বুঝতে পারি তোমায় দেখে;
কার যে তুমি চর।
গাছের গোড়া কাইটা তুমি আগায় পানি ঢালো!
জাগবার আহবান
কাজী শাহরিয়ার
রোজ বেলা নিশি ঘোর কাঁপা কাঁপা কন্ঠে
মুয়াজ্জিন আযানের সুর তোলে
জেগে ওঠো জেগে ওঠো
আসসালাতু খাইরুম মিনান্নাওম_____
আমাদের ভাত ঘুম শীত ঘুম ভাঙে না’ক!
জাগি না’ক নেতিয়েছি জাতি সুদ্ধ ঘুমে
ধুতরা বা কোন সরাব চুমে; যেতা
মিশে আছে ক্রুসেডের স্বাদ; জাগি না’ক!
কন্ঠের মধু সুর যোগ হয় হিসেবের খাতায়
তেজে ভরা ইমামের পেছনে জড়ো হয় রোজ
কিছু অমিত তেজে, বীরে ভরা সাহসী যুবক।
আমাদের ঘুম আর ভাঙে না’ক
জামিনের দেনা যার, তারে ভুলে ডাকি না’ক
আঁকি না স্বপ্ন চাদরের সুর; এই বেলা ঘুমে কাটে
নিশি জাগা ভোর।
আমাদের বয়ে গেছে সময়ের ঘোর।
আরবার সাইমুম রাহবার খুঁজি
বেলালের সুর চাই নির্ভীক ডাক
সাহসী ইমাম চাই, শুরু করা যাক সুবেহ সাদিক
জেগে যাক সারা ঘর-জাতি,
এক রবে চিৎকার
মাতি আল্লাহু আকবার।
ইফতিখার তারিকের অনুবাদ কবিতা
মূলঃ জন কীটস
“নিঃসঙ্গতা!” শব্দ যেন ঘন্টা বাজে আমার কানে
তোমা হতে নিজকে ফেরায় আমার ভূবন পানে,
বিদায় ওহে! পারবেনা আর ধোঁকা দিতে আমার কল্পনা,
তোমার ধোঁকায় জোর বেশি নয়; তা খুবই অল্প, না?
বিদায় ওহে! বিদায় তোমার দুঃখ-শোকের গান
যায় পেরিয়ে বিরাণ ভূমি, যায় পেরিয়ে ঝরণা তান
যায় হারিয়ে পাহাড় বেয়ে দূরের বিজন মাটির তলে।
গান তো গেলো দূরে চলে-
এই কি তবে দৃশ্য ছিল, নাকি দিবা-স্বপন?
আমি তবে জেগে আছি! না- ঘুম করেছি বরণ?
আবহমান
তান্নি চৌধুরী
ভুল দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে এখনো ঘুম ভেঙে যায়।
সে কী এলো!
জরীন ফিতায় চুল বাঁধতে বাঁধতে,
বেতের ঝাড়ে ফুল কুড়াতে গিয়ে,
কত বেলা উপোস কেটেছে দুপুর।
ঊষার আলো জানালার শার্সি ছুঁতে এলেই কানে বাজে ভুল স্বর।
আদৌ সে কী এলো!
রুপোর নাকছাবি হারিয়ে গেল বলে,
এখনো বাঁশঝাড়ে ছুটে যায় চোখ।
বাতাবী লেবুর ফুলে মালা গেঁথে গেঁথে,
শালুকের খোঁজে পথ হারিয়েছে উদগ্র বাসনা।
ঘোর বেঘোরের নেশা কাটেনি তবু।
বুঝি সে এবার এলো,
সে কী আসলেই এলো!
ধল প্রহরে স্নানের ঘাটে ডাহুকীর ঝাঁক এসে বসে।
নাগকেশরের রেণু ছড়িয়ে থাকা বিকেলে,
ডুমুরের ডালে চড়ুইয়ের বাসায় হানা দিতে গিয়ে,
স্বদলবলে ঘরে ফিরে আসে দুরন্ত বালক।
অনিমেষ চেয়ে থাকা পথ ফুরোলেই যেন সে আসে,
ভুল পথে হেঁটে, ভুল করে সে আসবেই।
সে কী এলো!
চন্দ্রগ্রহণের কালবেলা শেষে,
কৌমুদীর চাদর ঘেরা নিশিতে,
ভুল করে চোখে নামে ঘুম।
ভুল মানুষের পায়ের শব্দে শুনি চেনা কণ্ঠস্বর।
বুঝি এইতো সে এলো!
সে কী এলো! সে কী এলো!
যদি বলো
শেখ শরীফুল
আমি মরে যাব
যদি বল বাংলা ছাড়তে,
যদি বল অনাদিকাল নির্বাসনে যেতে।
যদি ভুলে যেতে বল-
ভোরের হাওয়া,
দোল খাওয়া সোনালি ধানের ক্ষেত।
আমি মরে যাব,প্রাণ ছেড়ে যাবে দেহ
যদি ভুলে যেতে বল কেউ।
যদি বল অনাদিকাল নির্বাসনে যেতে।
আমার দেহ পড়ে আছে এখানে
যেভাবে রাত্রি শেষে পড়ে রয় শিশির বিন্দু।
আকাশে যেমন করে মেঘ ভেসে বেড়ায়-
বিকেলের হাওয়ায়
যেমন ভেসে আসে মাটির গন্ধ,
যেমন করে নদীতে জোয়ার বয় ঘোলা জলে,
গাঙচিল এর পাখায় ঝরে স্বর্গীয় দিগন্ত।
এই বিন্দু প্রাণ আপনালয়ে ঘুরে বেড়ায় সে মায়ায়
মুঠি মুঠি গোধূলি আবির মেখে আকাশের
সাত রং রঙধনু।
ক্লান্ত দেহ ঘুমিয়ে পড়ে কলকল নদীর কলতানে।
আমি মরে যাব, আমার দেহ ফেটে যাবে
যদি বল বাংলা ছাড়তে
যদি বল অনাদিকাল নির্বাসনে যেতে।
এখানে এই বাংলা আমার মা
আমার অস্তিত্বের চেতনা।
তার পায়ে আমি প্রণাম করি,
তাকে নিয়ে ঘর করি, সকাল পেরিয়ে মধ্যরাত,
তার বুকে ঘুমিয়ে স্বপ্নে হাঁটি
অমৃত পথের ধারায়।
তার রূপে রূপায়িত আমার নিঃশ্বাস
আমার কথার শব্দমালা।
আমি মরে যাব
আমি অস্তিত্বহীন হব।
যদি বল বাংলা ছাড়তে,
যদি বল অনাদিকাল নির্বাসনে যেতে।
সম্পাদনায়ঃ বাঁশখালী সাহিত্য পরিষদ