খেজুরের রস আর মুড়ির গল্প
মুরশিদুল আলম চৌধুরী
আমাকে ওই গল্পটা শোনাও-
পৌষের ঝাপসা উঠানে
শিশিরের শব্দ আর অনিতা কাকীর ডাক-
‘এ-ই মোয়া, এ-ই মোয়া’।
ভেজা ঠোঁটের ডগায় লেপটে থাকা
খেজুরের রস আর মুড়ির গল্প;
বারান্দায় ঠিকরে আসা
এক পেয়ালা রোদ অথবা খৈ;
গুটিসুটি দাদির উত্তপ্ত কলিকায়
শিশুদের কান্নার পোড়াগন্ধ;
গেরো খুলে দেওয়া ধানের আঁটি থেকে
মায়ের নিঃশ্বাসের ভুরভুরে সুবাস।
নতুন চাল কিংবা শব্দের গল্প-
কয়লায় পোড়া ভাঁপাপিঠার বুকের মতো
ইসমাইল জেঠার সটান বুকে
উতলে ওঠা দরকারি কিছু শব্দ-
‘ফাবিআইয়ি আলায়ি রাব্বিকুমা তুকাজ্জিবান’।
ফরিয়াদ
তান্নি চৌধুরী
কথা বলতে চেয়োনা।
আমরা কেবল বোবা পাথর।
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মতোই পড়ে আছি মনুষ্য সমাজে।
নিপীড়িত প্রাণের অস্ফুট গোঙানির শব্দ পৌঁছাবেনা ওদের কানে।
চুপচাপ সয়ে যেতে যেতে আমাদের শরীরে এখন প্রাচীন গন্ধ।
পরিত্যক্ত দেয়ালের মতো শ্যাওলা জমেছে আমাদের কপালে।
গ্রানাইটের মতো চোখে শুধু হাহাকার দেখছি,
রক্তাক্ত শরীর দেখছি।
বর্বরতার বিষাক্ত হাওয়ায় কেঁপে উঠছে আমাদের পাথুরে বুক।
আমাদের সরিয়ে দেওয়া উচিত।
ঝাঁকুনি দিয়ে নিস্তেজ দেহটা নাড়িয়ে দেওয়া উচিত।
সংবেদী চোখ, হৃৎপিন্ডের বেপরোয়া উঠানামাতে আমরা ক্লান্ত।
দানবের পৈশাচিকতার মুখে অসহায় প্রাণ দেখে হাঁপিয়ে উঠি।
সামর্থ্য নেই,
সুযোগ নেই, শক্তি নেই।
বিধাতা শক্তি দাও,
বর্বরতার অবসান করে মুক্ত করো মানুষ।
===
কুৎসিত মুখ
ইনতিজামুল ইসলাম
বিপন্ন মানবতা কেঁদে কেঁদে মরে আজ
পথের ‘পরে।
বিবস্ত্র অসহায় মৃতপ্রায় লাশ ভাসে
সাগর পাড়ে।
বঞ্চিত অসহায় পথে পথে ঘুরে ফেরে
ক্ষিদের তাড়ায়,
কাংগাল চেয়ে দেখে কেউ যদি দয়া করে
দু’হাত বাড়ায়!
থুত্থুরে বুড়ো আজ রিকশার
প্যাডেল মারে,
কাঁচা-কচি অসহায় শিশু আজ
পথের ধারে।
অনেক দিনের হিসেব হয়েছে জমা,
পিছু হটবার নেই কিছু আর বাকি
কি-করে রাখিবি কুৎসিত মুখ ঢাকি?
আর পাবি না কো ক্ষমা…
===
পুরুষের চোখ
ছোটন আজাদ
কোনো কোনো পুরুষের চোখধর্ষণে প্রতিদিন হাজারো মেয়ে ধর্ষিতা হয়।
এদের উত্থিত চোখ নেতিয়ে পড়ে না- মেয়েটিকে যতক্ষণ দেখা যায়।
এই পুরুষের তালিকায় তুমি আছ, আমি আছি
বর আছে, স্বামী আছে,
হুজুর আছে, মজুর আছে,
স্যার আছে, ভাঁড় আছে,
পীর আছে, বীর আছে,
চালক আছে, বালক আছে,
ভাই আছে, বাবা আছে,
চালাক আছে, হাবা আছে।
কে নেই? সবাই আছে।
===
অথৈ আমীনের দু’টি কবিতা
১
“কমিউনিটি সেন্টারে চলে হৃদয় ভাঙ্গার উৎসব!
মিলনের সানাইয়ের সুরে ওপারে বেজে উঠে বিচ্ছেদের বিউগল!
একাকীত্বরা যুগলে পদার্পণ করে, কিছু বিশ্বাস ভাঙ্গার পাহাড়সম অপরাধ নিয়ে!
সামাজিকতার জুলুছে চাপা পড়ে যায় স্বপ্ন চুরির কান্না কিংবা আশার অপমৃত্যু।।”
২
বুক ফাঁটা অভিযোগের জবাবে হেসেছিলে বিদ্রুপের হাসি;
তুমি আমি’র মাঝে অবহেলার দেয়ালটা নির্মাণেই তুমি ব্যস্ত!
আর আমি নির্বাক চেয়ে থাকি- কি সুনিপুণভাবে তুমি গেঁথে যাও এক একটা ইট!
প্রতিটি ইটে চাপা পড়ে বার বার মুর্ছা যায় আমার বিক্ষত আত্মা!
আজ তুমি নেই, কোন অভিযোগও নেই! নেই সে বিদ্রুপের হাসিও!!!