শীতার্ত পশুর জবানবন্দি
আবু ওবাইদা আরাফাত
পশু বলে কি প্রকৃতির সব বৈরী পরিণতি আমাদের গা সওয়া? মোটেও না। অনেকেই ভাবে আমরা পশু, তাই আমাদের সুখ-দুঃখ অনুভূত হয় না। অথচ আমরা প্রকৃতি তথা জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত আবহাওয়ার তারতম্য নিমিষেই টের পাই। মহান সৃষ্টিকর্তা মানুষের মত আমাদেরও দিয়েছেন অনুভূতির শক্তি যা দ্বারা আমরা প্রকৃতির অনুকূল পরিবেশকে যেমন উপভোগ করি, ঠিক তেমনি প্রতিকূল পরিবেশের শিকারে জর্জরিত হই বরাবরই। বছর ঘুরে এবারও শীত এসেছে হাঁড় কাঁপানো শক্তি নিয়ে।
যে শক্তিতে মনুষ্যকূল কাবু হয়ে যায়, শীতের তীব্রতায় কুঁকড়ে যায় অশীতিপর বৃদ্ধরা। নিম্নবিত্ত, বৃদ্ধ ও অসহায়রা শীতের ছোবলে কাতরাতে কাতরাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। অন্তত তাদের নিয়ে পুরো মানবসমাজ ভাবে, আফসোস করে, সহানুভূতির তাগিদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। বিভিন্ন সামাজিক- সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ শীতবস্ত্র নিয়ে এদিক-ওদিক ছুটতে থাকে।
অথচ ঐ একই মাত্রার শীতে, একই সমাজের অধিবাসী আমরা পশুরা চরম উপেক্ষিত ও বঞ্চিত। আমাদের শীত নিবারণের কথা ভাবাতো দূরের কথা, আমরা যে প্রচণ্ড শীতকষ্টে ভুগি, তা কেউ অনুধাবনও করতে চায় না। বিশ্বাস করুন শীত যন্ত্রণায় আমাদের বেঁচে থাকা অত্যন্ত দুর্বিষহ। শীত নিবারণে শীত বস্ত্রতো দূরের কথা, খোলা আকাশের বাসিন্দা হওয়ায় প্রতিরাতে কুয়াশা-বৃষ্টিতে নিয়ম করে ভিজতে হয়। এ প্রচণ্ড শীতকষ্টে প্রতি শীত মৌসুমে কত পশু যে প্রাণ হারাচ্ছে তার খবর রাখার কে আছে? অথচ কথিত আছে- “জীবে দয়া করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর” অর্থাৎ জীবকে সেবা করা মানে ঈশ্বরকে সেবা করা। অন্তত এ দিকটা বিবেচনা করে হলেও আমরা কি মনুষ্যকূলের নিকট এ সহানুভূতিটুকু আশা করতে পারি না? মানুষের দুর্দশায় আছে মানবাধিকার ব্যবস্থা, আমরা পশুদের হাজারো দুর্দশায় জানি না পশু অধিকার ব্যবস্থা আছে কি না। তাই আবারো সবাইকে করজোড় করে বলছি এ শীতে লাখো শীতার্ত মানুষের সাথে আমাদের কথা একটু ভাবুন। উন্নত বিশ্বে পশুদের শীত লাঘবের জন্য রুম হিটার, বিশেষ ধরনের পোশাক/ চটের বস্তা ও কোল্ডক্রিম ব্যবস্থা করা হয়। আর এ দেশে এর কিছুই হয় না। তাই সরকার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নিকট পশুকূলের বিনীত প্রার্থনা আমাদের শীতের হাত থেকে বাঁচান। বিশেষ করে চিড়িয়াখানার কক্ষে রুম হিটার, গরম পরিধেয় এবং পশু উপযোগী বিশেষ কোল্ডক্রিম ব্যবস্থা করার পাশাপাশি জলবায়ুর ভারসাম্য রক্ষা করুন। আপনাদের একটু সহানুভূতি ও সদিচ্ছাই দিতে পারে আমাদের জীবনে স্বস্তির গ্যারান্টি।