“শিশুকে বুকের দুধ পান করালে মায়ের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে”
ডা. মো. আজিজুল হাকিম
শিশুকে বুকের দুধ পান করালে মায়ের ডায়াবেটিসের (DM Type-2) ঝুঁকি কমে এমনটিই দাবি করেছেন একদল আমেরিকান গবেষক। গত ৩০ বছর ধরে নিরলস গবেষণার মাধ্যমে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন তারা। ১২৩৮ জন নারী, যাদের গড়পড়তা বয়স ২৪, অন্তত একটি বাচ্চা প্রসব করেছে এবং যাদের পূর্বে কোন ডায়াবেটিস ছিল না, তাদের উপর গবেষণা চালানো হয়। JAMA Internal Medicine সম্প্রতি এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
গবেষকেরা এ প্রকল্প চলাকালীন ৭ বার দৈবাৎ বাছাইকৃত এসব নারীদের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের স্বাস্থ্যগত বিষয়ে আলাপ, শারীরিক পরীক্ষণ-পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় উপাত্ত সংগ্রহ করেন। ফলাফলে দেখা যায়- ডায়াবেটিসের বিভিন্ন ঝুঁকিগত নেয়ামক যেমন কায়িক শ্রম, ধূমপান ইত্যাদি যথাসম্ভব কমিয়ে আনার পরেও ১৮২ জনের ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। যেসব নারী অন্তত প্রথম ৬ মাস শিশুকে বুকের দুধ পান করায় তাদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ২৫% কমে যায়। যারা ৬-১২ মাস বুকের দুধ পান করিয়েছে তাদের ঝুঁকি কমে ৪৮ শতাংশ এবং ১২ মাসের অধিক বুকের দুধ খাওয়ানো নারীদের ক্ষেত্রে তা ৪৭% কমে। তবে স্থুলকায় নারী বা যাদের গর্ভকালিন ডায়াবেটিস (GDM) থাকে তাদের ক্ষেত্রে অবশ্য পরবর্তী জীবনে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেশি থাকে।
দুগ্ধপান করানো নারীদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কেন কমে? তার একটি ব্যাখ্যা হতে পারে- দুধ পান করানোর কারনে তাদের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কম থাকে। বিধায় দেহের অভ্যন্তরে তৈরি হওয়া ইনসুলিনের ব্যবহার কম হয়। অগ্নাশয়ের ইনসুলিন নিঃসরণ করা কোষের উপর চাপ কম পড়ে। সুতরাং এই ইনসুলিন সমেত কোষ পরবর্তীতে কার্যকরী ভূমিকা পালনের মাধ্যমে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
গবেষক দলের প্রধান Dr. Erica P. Gunderson জানান, “মাতৃদুগ্ধ পানের সুফল হিসেবে আমরা কেবল শিশুর স্বাস্থ্যগত উপকারিতা সম্পর্কেই ওয়াকিফহাল। কিন্তু একজন নারীর জীবনে ও স্বাস্থ্যে এর ইতিবাচক প্রভাবও দিন দিন স্বীকৃতি পাবে আশা করি”।