শিক্ষাজীবন শেষে

[] শিক্ষাজীবন শেষে চাকরি খোঁজা হলো
“আধুনিক দাসত্ব” []

তরুণ প্রজন্ম চাকরি খোঁজার সংস্কৃতি থেকে
বের হয়ে আসবে—এমন একটি বিশ্ব দেখতে
চান নোবেল বিজয়ী প্রথম বাংলাদেশি ও
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ
ইউনূস। তাঁর মতে, শিক্ষাজীবন শেষে চাকরি
খোঁজা হলো ‘আধুনিক দাসত্ব’। ড. ইউনূস বলেছেন, ‘ভালো একটি
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভালো ডিগ্রি নিয়ে
বেরিয়েই একজন শিক্ষার্থী বলছেন, আমাকে
চাকরি দিন। কিন্তু এটা বলছেন না যে
আমাকে ১০ হাজার ডলার দিন, আমি নিজের
ভাগ্য নিজেই গড়ে তুলব। তাঁর ভাগ্যের নিয়ন্ত্রণ তিনি তুলে দিচ্ছেন আরেকজনের
হাতে। এটা আধুনিক দাসত্ব।’
সোশ্যাল বিজনেস ইয়ুথ সামিট-২০১৫-এ ড.
ইউনূস তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে এসব কথা
বলেন। ড. ইউনূস বলেন, প্রত্যেক মানুষই
উদ্যোক্তা হয়ে জন্ম নেন। কিন্তু সমাজ তাকে এমনভাবে মগজধোলাই করে যে তিনি চাকরি
খুঁজতে বাধ্য হন। সে জন্য বেকারত্ব দেখা
দেয়।
তরুণ-তরুণীদের চাকরি খোঁজা থেকে বেরিয়ে
আসার পথও বাতলে দিয়েছেন এই
নোবেলজয়ী। বলেছেন, একটা সময় ছিল উদ্যোক্তারা মূলধনের সমস্যায় পড়তেন,
ব্যবসা করার জন্য অর্থ পেতেন না। এখন আর
সেই অবস্থা নেই। ভালো ব্যবসায়িক ধারণা
হলে ব্যবসায় অর্থায়ন এখন আর সমস্যা না।
তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমরা যেন
উদ্যোক্তা হতে পারো, সে জন্য গ্রামীণ ব্যাংক প্রস্তুত। তোমরা ব্যবসাসংক্রান্ত
ধারণা নিয়ে আসো, গ্রামীণ ব্যাংক
তোমাদের টাকা দেবে।’
তরুণদের উৎসাহ দিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের এই
প্রতিষ্ঠাতা বলেছেন, হাজার হাজার
উদ্যোক্তা আছেন, যাঁরা শিক্ষার্থী অবস্থায় ব্যবসা শুরু করেছেন এবং সফলও হয়েছেন।
তরুণ উদ্যোক্তাদের সামাজিক ব্যবসায়ে
আগ্রহী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে ড. ইউনূস বলেন,
‘শুধু ব্যবসা দিয়ে বিশ্বকে বদলানো যাবে না।
এ জন্য মুনাফার বাইরেও চিন্তা করতে হবে।
তোমাদের সামাজিক ব্যবসার দিকে যেতে হবে।’
ড. ইউনূস কথা বলেন সায়েন্স ফিকশন নিয়েও।
তিনি বলেন, সায়েন্স ফিকশন যা বলে, একসময়
তা সত্যি হয়। যেমন স্মার্টফোন। একপর্যায়ে
তিনি বলেন, বিশ্বটা যদি হয় সায়েন্স
ফিকশনের, তাহলে তাকে কেন সোশ্যাল ফিকশনের বিশ্বে পরিণত করা যাবে না?
তরুণদের বিশ্ব বদলে দেওয়ার প্রধান শক্তি
উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘যদি আমরা
একটি কাঙ্ক্ষিত সমাজ কিংবা বিশ্বের
কল্পনা করতে না পারি, তাহলে তা কখনোই
সত্যি হবে না। সে জন্য আমাদের একটি গন্তব্য দরকার, একটি নির্দেশনা দরকার। তুমি
যদি জানো যে তোমাকে কোথায় যেতে হবে,
তাহলে তুমি অবশ্যই সেখানে পৌঁছাতে
পারবে। তোমার প্রযুক্তি, যোগাযোগ ক্ষমতা
তোমাকে সেখানে নিয়ে যাবে।’
তরুণদের উদ্দেশে ড. ইউনূসের শেষ উক্তিটি ছিল, দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও কার্বন নিঃসরণ
শূন্যের পর্যায়ে থাকবে—এমন একটি বিশ্বের
কথা কল্পনা করো। দেখবে একসময় তা সত্যিই
হয়ে যাবে।

Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *