শিব্বির আহমদ রানা – চট্টগ্রামের বাঁশখালী একটি জনবহুল অঞ্চল। এ অঞ্চলের মানুষ নিত্য লোডশেডিং এ ভুগছে। প্রতিদিনই বিদ্যুতের লুকোচুরি খেলায় জনজীবন অতিষ্ট। সভ্যতার চরম উৎকর্ষতায়ও বিদ্যুতের চরম হেয়ালিপনা থেকে রেহায় পাচ্ছে না বাঁশখালীবাসী। দিনের বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। গ্রীষ্মের তীব্রতাপদাহে বিদ্যুতের এহেন লুকোচুরি খেলায় মারাত্মকভাবে অস্বস্তিতে আছেন বাঁশখালীবাসী। রাতের বেশিরভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকে না বললেই চলে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে অন্তত ১০-১৫ বার এমনকি তারও বেশি বিদ্যুতের লোডশেডিং হয়। সামান্য বৃষ্টিপাতে, হালকা বাতাসের অজুহাতেও বিদ্যুৎ চলে যায় দীর্ঘ বিরতিতে।
গেল বৃহস্পতিবার মুসলিমদের অন্যতম পবিত্র একটি রাত ‘লাইলাতুল বারাত’ (শবে’বারাত)। এই রাত খুবই মহিমান্বিত একটি রাত। মুসলিম সম্প্রদায় মহান সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য লাভের আশায় সারা রাত জেগে ইবাদতে মশগুল থাকেন। নামায কালামসহ নানা ধর্মকর্ম করে থাকে মুসল্লিরা পবিত্র এই রাতে।
অতীব দুঃখের বিষয় প্রতিদিনকার মতো বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুৎ তার চরম হেয়ালিপনা থেকে সরে আসতে পারেনি পবিত্র বরাতের এই রজনীতেও। একদিকে তীব্র তাপদাহ, অন্যদিকে বিদ্যুতের ঘনঘন আসা-যাওয়া মুসল্লিদেরকে অসহনীয়ভাবে দূর্ভোগে ফেলে। বাঁশখালীর প্রায় সবকটি ইউনিয়ন থেকে অভিযোগ আসে। বিশেষ করে পুকুরিয়া, বাণিগ্রাম, কালীপুর, কাথারিয়া, বৈলছড়ি, সরল, শিলকুপ, চাম্বল, শেখেরখীল, পুইছড়ি, ছনুয়াসহ প্রায় সব অঞ্চলে রাতের দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ ছিল না।
এদিকে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং এর ফলে সোস্যাল মিডিয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুতের উপর। বৈলছড়ির ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম তা ফেসবুক টাইমলাইনে লেখেন- “শবে বারাতের মত এমন একটি মহা উৎসবে লোডশেডিং! সাথে মশার অত্যাচার, যে রাতটি পেতে আমাদের ৩৫৩দিন অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয়। এমন বিদ্যুৎ বিহীন রাত মেনে নেওয়া যায় না কিন্তু মিডিয়াতে শুনতে এবং পড়তে হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাহিনী।”
শিলকুপের আব্দুল খালেক জানান, “গতকাল ছিল পবিত্র একটি রজনী। অতচ এমন সময়ে বিদ্যুৎ না থাকা অপ্রত্যাশিত। কোনো রকম এশার নামাযের সালাম ফিরিয়েছি তার পরক্ষণে বিদ্যুৎ চলে যায়। কিছুক্ষণের জন্য বিদ্যুৎ আবার এলেও সারা রাত আর বিদ্যুৎ আসেনি। পরেরদিন শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিদ্যুৎ আসে। এহেন অবস্থায় আমরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছি।”
উল্লেখ্য যে, দিনের অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকলেও মিটার ভাড়া ও বিদ্যুৎবিল পরিশোধ করতে হয় পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি নির্ধারিত মূল্যে। ভূক্তভোগীরা অনেকে অভিযোগ করেন যে, দিনের এক-তৃতীয়াংশ সময় বিদ্যুৎ ব্যবহার না-করলেও প্রতিমাসেই অতিরিক্ত বিল দিতে হচ্ছে। এছাড়াও, সংযোগ পরীক্ষা করার নামে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি গ্রাহকদের সাথে নগ্ন প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে, এমনকি নাম্বার ওঠে না এমন মিটার দিয়ে আইডিয়ামাত্র বিল বসায় বলেও জানান চেচুরিয়ার ওসমান। বিশেষ করে, স্বাভাবিক ও জরুরী চলাফেরা, অফিস-আদালতের কাজ, পড়াশুনা, গৃহস্থালী কাজ, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সকল মানবিক কাজকে অসম্ভব করে দিচ্ছে লোডশেডিং এর অন্ধকার। বিদ্যুৎ নির্ভর বাসস্থানগুলোর আলো-বাতাস-পানি বন্ধ থাকার মত অনাকাঙ্খিত ঘটনায় অতিষ্ট হয়ে পড়ছেন বিদ্যুতের গ্রাহক ও ভুক্তভোগীরা।
বাঁশখালী উপজেলা সদর তথা পানীয়জলের সংকট উপকূলীয় এলাকায় প্রায়ই দেখা যায়, বাসা-বাড়ি, খাবারের দোকানের লোকজন পানি সংগ্রহ করতে বালতি, কলসি, হাড়ি-পাতিল নিয়ে ছুটাছুটি করছেন। লোডশেডিং-এ গা-সওয়া মানুষেরা নিজ দায়িত্বে মেনে নিয়েছেন এই নির্লজ্জ ও অনাহুত অবস্থাকে। বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে অনেকে এক কাঠি এগিয়ে আছে। ঘরে ঘরে, সোলার সিস্টেম, আইপিএস, জেনারেটর, চার্জার লাইট-ফ্যান, মোমবাতি, কেরোসিন নিয়ে প্রস্তুত থাকেন বাঁশখালী পৌরসভাসহ সচ্ছ্বল পরিবারগুলো।
বিদ্যুৎ যেমন কখনও স্থির থাকে না তেমনি মানুষও থেমে থাকে না। এখন আমরা বলতে শিখেছি- “বিদ্যুৎ যায় না, মাঝে মাঝে আসে।” আগেও শিখেছিলাম, এখন নাটক-সিনেমার সৌজন্যে টিভিতে পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয়। আমরা মেনে নিয়েছি তাই, লোডশেডিং অনবরত চলছে। দিনেরাতে সমানতালে লোডশেডিং স্কুল মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ও বাড়িতে আমাদের সন্তানদের পড়াশুনার ক্ষতি করছে।
এতসব অসঙ্গতি ও নির্বিচার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা ও দেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক অবস্থায় এটা স্পষ্ট যে, এই দেশে কোনদিনই বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হবে না। উপজেলার মানুষ কি বিদ্যুৎ-এর অনবরত লোডশেডিং এর কবল থেকে রেহাই পাবে না?
এ ব্যাপার জানতে কাল থেকে বিদ্যুৎ অফিসে কল দিলেও মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুৎতের ডিজিএম কে ফোন করলেও তিনি ফোন উঠাননি।
সরকার ও সরকারি প্রভাবশালী নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন- এমন একটা পবিত্র দিনে চট্টগ্রাম বাঁশখালীতে সারা রাত বিদ্যুৎ নেই। অথচ এতো বিদ্যুৎ ফলন কাদের জন্য?
Shibbir Ahmed Rana
Thanks