BanshkhaliTimes

যেসব নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ‘ফেসঅ্যাপ’ ব্যবহারকারীরা

BanshkhaliTimes

▪মূলতঃ আমি বুড়ো হতে চাই না; নিজেকে বুড়ো চেহারায় দেখতে মোটেই ইচ্ছা করে না। বার্ধক্য- কোন মহান ও সুখকর ব্যাপার নয়। বার্ধক্য বুঝায় জড়তা, স্থবিরতা, দূর্বলতা, ভীরুতা, প্রাণহীনতা, নিরানন্দ ও অসুখ। তারুণ্য মানে সক্রিয়তা, চাঞ্চল্য, শক্তিমত্তা, সাহসিকতা, প্রাণময়তা, আনন্দ ও সুখ। তারুণ্য আল্লাহতা’আলার একটি নেয়ামত। আমি আমৃত্যু তরুণ থাকতে চাই- শারীরিকভাবে না হলেও মানসিকভাবে। ভবিষ্যতের বৃদ্ধ বয়সের চেহারা আবিষ্কার করার লোভে বর্তমানের তারুণ্য-কে অসম্মান করতে অনিচ্ছুক।

▪চেহারা-সুরত বায়োলজিক্যাল এবং আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এটি সৃষ্টিকর্তার হাতে। বৃদ্ধ বয়সে আমার চেহারা-সুরত কেমন হবে সেটি জানার ক্ষমতা ও অধিকার বান্দার হাতে রাখা হয়নি।

▪জানি, একদিন বৃদ্ধ হবোই। কিন্তু এই ‘ফেস-অ্যাপ’ ব্যবহার করে বৃদ্ধ হতে চাই না মূলত- ‘পারসোনাল ডেটার সিকিউরিটি কনসার্ন’ এর কারনে। যে কোন অ্যাপ ব্যবহারেই ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা লংঘনের ঝুঁকি থাকে। ফেস- অ্যাপ এর মতো এই ধরণের ট্রেন্ডি ও হুজুগে অ্যাপে সেই আশংকা আরো প্রবল।

▪প্রত্যেক অ্যাপ এর নিজস্ব কিছু টার্মস এন্ড কন্ডিশান্স থাকে- বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অ্যাপটি নামানোর সময় আমরা দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর এসব টার্মস পড়েও দেখিনা, দ্রুত “AGREE” বাটন ক্লিক করে ধুম করে অ্যাপ ব্যবহার শুরু করে দিই যা আপনার ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তার জন্য ভয়ংকর হুমকি। ফেস-অ্যাপও এটির ব্যতিক্রম নয়। আপনারা কি এটির টার্মস পড়ে দেখেছেন? চলুন দেখি- গুগল প্লে স্টোর থেকে এই ফেস- অ্যাপ ডাউনলোড ও ইনস্টল করার সময় এটি ব্যবহারকারীর কোন কোন তথ্যে প্রবেশ ও তথ্য সংরক্ষণের অনুমতি চাইতে পারে?

✅ ক্যামেরার ছবি ও ভিডিও:
আপনি হয়তো এই অ্যাপে ছবি আপলোড করেছেন মাত্র একটি। কিন্তু টার্মস-এ AGREE করে আপনার মোবাইল ক্যামেরার ছবি সেইভ করার পারমিশন দিয়ে দিয়েছেন অজান্তেই। ফলে- যত ছবি তোলা হবে সেগুলো এই ফেস-অ্যাপের সার্ভার ক্লাউডে জমা হবে: আপনার একান্ত পার্সোনাল ছবি ও ভিডিও জমা হতে থাকবে অন্যের হাতে।

✅ স্টোরেজ পারমিশন:
আপনার ডিভাইসের মেমরি কার্ডে ঢুকা এবং সেখানের যাবতীয় তথ্য পড়ার পারমিশন দিচ্ছেন। মোবাইলে হয়তো প্যাটার্ন লক, পাসওয়ার্ড, ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ফেস রিকগনিশন, আইরিশ চেক ইত্যকার নানা সিকিউরিটি দিয়ে নিজের ভাই-বোন-বন্ধুদের-কে আপনার মোবাইলের গ্যালারি ও স্টোরেজে ঢুকতে দিচ্ছেন না- অথচ অন্যদিকে স্টোরেজ পারমিশন দিয়ে সব তথ্য তুলে দিচ্ছেন ভিনদেশি অচেনা লোক ও প্রতিষ্ঠানের হাতে! শুধু তাই নয়- এই পারমিশনের মাধ্যমে আপনার SD Card বা স্টোরেজের তথ্য তাদের-কে মডিফাই ও ডিলিট করার পর্যন্ত অধিকার দিয়ে দিচ্ছেন!

✅ নেটওয়ার্ক এক্সেস:
আপনার ওয়াইফাই ও মোবাইল নেটওয়ার্ক এ তাদের-কে ঢুকার ও দেখার অধিকার দিচ্ছেন।

✅ ইন্টারনেট এক্টিভিটি ট্র‍্যাকিং:
আপনি ইন্টারনেটে কী কী ব্রাউজ করছেন, কোন কোন ওয়েবসাইটে ঘুরছেন, গুগুলে কী কী জিনিস সার্চ করছেন- সব খবর তাদের সংগ্রহ করার অনুমতি দিচ্ছেন।

▪ফেসঅ্যাপের শর্তাবলীতে বলা আছে, তারা সংগৃহীত এসব ব্যক্তিগত ‘তথ্য ব্যবহার, সম্পাদনা, প্রকাশ, অনুবাদসহ বিভিন্নভাবে করে যেকোনো মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারবে৷’ এবং এক্ষেত্রে তথ্যের অধিকার দাবি করার কোনো সুযোগ নেই৷

▪ফেস-অ্যাপ Artificial Intelligence বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করে আপনার একটি ছবি-কে আরো অজস্র ছবির সাথে প্রসেস করে বুড়া বয়সের ইমেজ তৈরি করে আপনাকে খুশি করছে। প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের আশংকা- এই অ্যাপের মাধ্যমে তারা মূলত ‘ফেসিয়াল রিকগনিশন’ প্রযুক্তিকে আরো আপডেট করছে। এখনই তো আমরা মোবাইলের লক খুলতে ‘ফেসিয়াল রিকগনিশন’ ব্যবহার করছি। হতে পারে ভবিষ্যতে অনলাইন সব লেনদেন ও কার্যক্রমে এই ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি প্রয়োগ হবে। তখন আপনাকে বুড়ো দেখানোর আনন্দ দিতে যে ছবিটি তাদের দিয়েছেন সেটি তারা তাদের স্বার্থে ব্যবহার করবে, আপনার নিজের তথ্য ও অনলাইনে আর্থিক লেনদেন এর নিরাপত্তা তখন ঝুঁকিতে পড়বে। হ্যাকিং এর বিপদ আপনার পিছু নেবে।

▪‘ফেসঅ্যাপ’-এর নির্মাতা রাশিয়ান কোম্পানি ‘ওয়্যারলেস ল্যাব’৷ তাদের ডাটা সেন্টার যুক্তরাষ্ট্রে৷ ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানের অ্যাপ গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রি করে দিয়েছিল “কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা” র কাছে যেটির জন্য মার্ক জাকারবার্গ-কে জবাবদিহি করতে হচ্ছে। সেখানে এই “ফেস-অ্যাপ” আপনার তথ্য বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি ও ব্যবহার করবে না- সেই নিশ্চয়তা কোথায়?

একবার ভাবুন- নিজেকে বুড়ো দেখানোর এই আনন্দ ভবিষ্যতে ‘হরিষে বিষাদ’ হবে কিনা? যাদের উপরের তথ্য বিশ্বাস হয় না- তাঁরা এই ফেস-অ্যাপ এর টার্মস ও অ্যাপস পারমিশন একবার পড়ে আসুন। প্রথম কমেন্টে সেটির একটি স্ক্রিনশট দিলাম। যদি বিশ্বাস হয়- যত দ্রুত সম্ভব এটি ‘আনইন্সটল’ করে দিন এবং ভবিষ্যতে হুজুগে মেতে কোন অ্যাপসে ঝাঁপ দিতে সতর্ক থাকুন।
____________________________
© সাঈদ আহসান খালিদ
শিক্ষক, আইন বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *