মোরা’র আঘাত এখনও কাটেনি বাঁশখালীবাসীর

শিব্বির আহমদ রানা:

গেলো ঘুর্ণিঝড় মোরা’র তান্ডবে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপকূল দিয়ে বয়ে যাওয়া এই ঘুর্ণিঝড়ে বিদ্যুতের স্মরণকালের সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিরুপন করা না গেলেও উপজেলার সব লাইন চালু করতে অন্তত চার সপ্তাহ সময় লেগে যেতে পারে। ঘুর্ণিঝড়ের তান্ডবে চন্দনাইশ-বাঁশখালী’র ৩৩ হাজার কেভি তথা মেইন লাইন ছিঁড়ে খন্ড খন্ড হয়ে গেছে। মেইন লাইন ছিঁড়ে যাওয়ায় হাসপাতাল এবং সরকারী দপ্তর বিদ্যুৎ বিহীন হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ নির্ভর প্রতিষ্ঠান এবং সবখানে রীতিমত দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও সংবাদ পেশায় জড়িতদের সবচেয়ে বেশী দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পত্রিকা অফিসে সংবাদ পাঠাতে তাদের অনেকটা হিমশিম খেতে হচ্ছে।

পল্লী বিদ্যুৎ সাব-জোনাল অফিসটি জনবল সংকটে পড়েছে। এমনকি জনবলের কারণে বাঁশখালীর সমগ্র ইউনিয়নের কাজকর্ম নিয়ে নানা ভাবে হিমশিম খাচ্ছে। এদিকে গেল ঘূর্ণিঝড় মোরা’র আঘাতে পুকুরিয়া, সাধনপুর, খানখানাবাদ, রায়ছটা, বাহারছড়া, কালীপুর, কাথরিয়া, বৈলছড়ি, সরল, শীলকূপ, গন্ডামারা, চাম্বল, শেখেরখীল, ছনুয়া, পুঁইছুড়ির সহ পৌরসভার অধিকাংশ ভাদালিয়া,খলিলশাহ পাড়া, লস্করপাড়া, চুম্মাপাড়া, নোয়াপাড়া, আস্করিয়া পাড়া, দুয়ারি পাড়া, মহাজনপাড়া, মনকিচর এলাকার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে আনুমানিক অর্ধশতের মত বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে যাওয়ার পাশাপাশি ৪শ থেকে ৫ শতাধিক মিটার ভেঙ্গে যায়। মোরা’র আঘাতের ৩য় দিন বৃহস্পতিবার রাত ২ টার দিকে উপজেলা সদরের বহুল আলোচিত বানিজ্যিক কেন্দ্র পৌরসদরে মধ্যে বৈদ্যুতিক লাইন চালু করলেও পাড়া মহল্লার লাইন গুলো এখনো ঠিক করতে পারেনি। তবে কিছু কিছু লাইন চালু করেছে বলে জানিয়েছেন পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। বৃহত্তর এই ১৪ ইউনিয়নে এসব বৈদ্যুতিক লাইন ঠিক করতে যেখানে ৫০/৬০ জন লাইনম্যান প্রয়োজন, সেখানে তিনটি সাব সেন্টার যথাক্রমে চানপুর, গুনাগরি, জলদী জোনাল অফিস মিলে মাত্র ১৯ জন লাইনম্যান দিয়ে কোন রকম কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে লাইন সংস্কার করে যাচ্ছে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে। যার ফলে জনবল সংকটের কবলে পড়েছে বাঁশখালী পল্লী বিদ্যুতের সাব-জোনাল অফিসটি।

সুত্রে জানায়, ঘুর্ণিঝড় মোরার আঘাতে বাঁশখালীর অন্তত অর্ধ অধিক বিদ্যুতের খুঁটি একেবারে ভেঙ্গে গেছে। খুঁটি ভেঙ্গে বেশ কয়েকটি ট্রান্সফরমার মাটিতে পড়ে আছে। ১০/১২ ক্রস আর্মস নষ্ট। ৪০/৫০ টিরও অধিক স্পটে এল.টি তার ছিঁড়ে গেছে। উপকূলীয় এই উপজেলায় দ্রুত সময়ে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করার জন্য পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ডের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক ঘুর্ণিঝড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া বিদ্যুৎ লাইন চালু করতে কাজ করবেন। চলতি রমজান মাসে রোজাদার এবং গ্রাহকদের সুবিধার্থে দ্রুত সময়ে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করার দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বাঁশখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এক লাইন টেকনেশিয়ান জানান, বাঁশখালী-চন্দনাইশ ৩৩ হাজার কেভি চালু করার জন্য এখন আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
বাঁশখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. আবুল বশর জানান, স্মরণ কালের ভয়াবহ এই দুর্যোগে পল্লীবিদ্যুতের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে গাছ পড়ে ৩৩ হাজার কেভির লাইন ছিঁড়ে গেছে। মেইন লাইন চালু করতে আমরা নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে বাঁশখালী -চন্দনাইসের মেইন লাইন ক্লিয়ার হলে ও এখন ও পযর্ন্ত অধিকাংশ গ্রামীন লাইন গুলোর কাজ আমরা সম্পূর্ণ করতে পারি নাই। গত কয়েক দিনে চাঁদপুর বাজার, বানীগ্রাম বাজার, গুনাগরি সদর, বৈলছড়ি কে.বি বাজার, চেচুরিয়া হাবিবের দোকান, জলদী মিয়ার বাজার ও উপজেলা সদরে আমরা বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু করেছি।
এদিকে জনপদের অধিকাংশ গ্রামে ১১দিনেও বিদ্যুতের দেখা পায়নি। বিদ্যুৎবিহীন জনজীবন ভয়াবহ পর্যায়ে পৌছেছে। গ্রাহক পর্যায়ের অনেকে জানান, বাঁশখালী পল্লী বিদ্যুতের দীর্ঘ সূত্রীতা ও গাফেলতির কারনে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়ে উঠেনি। এ বিষয়ে পল্লীবিদ্যুতের কর্মকর্তা জানান খুব দ্রুত সময়ে বিদ্যুতের লাইন চালু করে দেওয়া হবে।

Spread the love

1 thought on “মোরা’র আঘাত এখনও কাটেনি বাঁশখালীবাসীর”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *