আরকানুল ইসলামের কিশোর উপন্যাস ‘ছোট মামার বড় বিপদ’–
“মুক্তিযুদ্ধ ও দেশপ্রেমের সাথে সামাজিক অসঙ্গতির বিরুদ্ধে তারুণ্যের বিজয়”
মুহাম্মদ তাফহীমুল ইসলাম
আরকানুল ইসলাম নিয়মিত উপন্যাস লিখে পাঠক মহলকে চমকে দিয়ে জায়গা করে নিচ্ছেন হৃদয়ের গভীরে। শিশু-কিশোররা যখন মোবাইল, কম্পিউটারে নিমজ্জিত হয়ে বইয়ের দূরবর্তী হচ্ছে তখনই আরকানুল ইসলাম চ্যালেঞ্জ নিয়ে উপন্যাসের মাধ্যমে তাদের টেনে আনছেন বইয়ের দ্বারে। বরাবরের মতো সহজাত ভাষায় লেখা মনোমুগ্ধকর কাহিনীকে ধারণ করা ‘ছোটমামার বড় বিপদ’। লেখক তাতে এডভেঞ্চারপূর্ণ কাহিনী দিয়ে তুলে এনেছেন বর্তমান সমাজের বাস্তব অবস্থা।
এমন একটা বাক্য যেটা সঠিক জায়গায় সঠিকভাবে লেখার পরও কাটতে হয়, বাক্যটি কী? এমন চমকপ্রদ প্রশ্ন সংবলিত কাহিনী দিয়ে শুরু হওয়া উপন্যাসটিতে উঠে এসেছে গ্রামের প্রাকৃতিক দৃশ্য। উপন্যাসের নিয়ম মেনে লেখক পাঠক মহলকে ঘুরিয়েছেন বিভিন্ন কাহিনীর সমাবেশে। অশুদ্ধতায় আবদ্ধ সমাজে যখন বাল্যবিবাহের জয়জয়কার তখন একজন ছোটমামার চেষ্টায় তা কিভাবে সম্ভব সেই দুঃসাহসও লেখক দেখিয়েছেন উপন্যাসে। সাপুড়ের লাভজনক প্রলোভনে সাধারণ, সহজ-সরল মহিলা বিমোহিত হয়ে মোটা অঙ্কের টাকা যেখানে বিসর্জন দিতে যাচ্ছিল সেই মুহূর্তে ছোটমামা হয়ে এলো আশীর্বাদ। সেই সাপুড়ের বিশাল কাহিনীতে ছোটমামা তার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে পরাজিত করেছেন সাপুড়েদের। একজন অনির্বাচিত চেয়ারম্যানের হিংসার বশবর্তী হয়ে দেশ গড়ার কারিগর মুক্তিযোদ্ধাকে কিভাবে অপমানিত হতে হয়েছে সে কাহিনী লেখক বর্ণনা করেছেন অদম্য লেখনি শক্তি দিয়ে। একজন মুক্তিযোদ্ধাকে বাঁচাতে একজন ছোটমামা রোহান ও ভাগিনা রাফি যে দুঃসাহস দেখিয়েছেন তা পড়ে, শুনে যে কারো শরীরের লোম খাড়া হয়ে যাবে। রক্তচক্ষু, হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে কিভাবে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরিয়ে এনে নতুন জীবন পেতে সহায়তা করার দায়িত্ব একজন স্বাধীন দেশের নাগরিকের, তা ‘ছোটমামার বড় বিপদ’ উপন্যাসের ছোটমামা রোহান ও ভাগিনা রাফি যথাযথভাবে পালন করেছেন বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
কোনো ভালো কাজের দ্বারা যে কর্তা সম্মানিত হন তা প্রমাণিত হয় পুলিশ কর্তৃক ছোটমামা রোহান ও ভাগিনা রাফির সংবর্ধিত হওয়া এবং মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন কর্তৃক রোহান ও রাফিকে দিয়ে দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা তহবিল উদ্বোধন করা। লেখকের টান টান উত্তেজনাকর প্রত্যেকটি কাহিনী একজন পাঠককে টেনে নেবে উপন্যাসের শেষ পর্যন্ত।
আরকানুল ইসলাম মূলত একজন ছড়াকার। ছড়া দিয়ে লেখালেখির হাতেখড়ি হলেও দখলে নিয়েছেন গল্পকারের পদবীও। যার অধিকাংশ লেখা শিশু-কিশোর উপযোগী। সর্বোপরি বলা যায় শিশুসাহিত্যিক। অনেকেই যেখানে উপন্যাস লেখায় হাত দেয়ার সাহস করছেন না, হাত গুটিয়ে নিচ্ছেন, যার কারণে প্রয়োজনের তুলনায় মানসম্মত কিশোর উপন্যাসের পর্যাপ্ত ঘাটতির সময়ে ধারাবাহিকভাবে কিশোর উপন্যাস নিয়ে পাঠকের সামনে হাজির হবার মতো দুঃসাহসিক প্রয়াস দেখিয়েছেন ঔপন্যাসিক আরকানুল ইসলাম।
‘ছোটমামার বড় বিপদ’ বাংলাসাহিত্যের কিশোর উপন্যাসের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করবে বলেই বিশ্বাস আমাদের। তরুণ লেখকদের আস্থার অন্যতম ঠিকানা
চট্টগ্রামের দাঁড়িকমা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বইটির প্রচ্ছদ করেছেন হিমেল হক। ৮০ পৃষ্ঠার উপন্যাসটির মূল্য রাখা হয়েছে ১৫০ টাকা। কমিশন বাদ দিয়ে বইটি পাওয়া যাবে ১০০ টাকায়। বইটি চলমান একুশে বইমেলার দাঁড়িকমা প্রকাশনীর ৬৬৬ নাম্বার স্টলে, অমর বইঘর, জিইসি, চট্টগ্রাম বইমেলা, চকবাজারের কে ববি প্লাজার খসড়া, ঘুণসহ অভিজাত বইবিপনীগুলো থেকে সংগ্রহ করা যাবে।