আসা, অতপর যাওয়া
মুরশিদুল আলম চৌধুরী
দিদার ঘটনা দু’টি যেভাবে প্রত্যক্ষ ও অনুভব করছে, পৃথিবীর অন্য কেউ ও অন্য কিছু সেভাবে হয়তো করছে না। মেঘের ফাঁক দিয়ে যে দু’টি তারা মাঝে মাঝে পৃথিবীর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করছে, এদের মনোযোগ ঠিক দিদারের দিকে, না ঘটনা দু’টির দিকে, বুঝতে পারছে না সে।
তারাগুলোর খেয়াল সে মাঝেমধ্যে বোঝে। বিশেষত, রাত যখন গভীর হতে হতে উবে যাওয়ার উপক্রম হয়, তখন তারাগুলো যে স্রেফ তার সখ্যের জন্য চোখ মেলে থাকে, তা সে বোঝে অথবা তাকে বুঝতে হয়!
কবিতার সঙ্গে মিশে যেতে কত কী করে আকাশ, তারা, চাঁদ!
ঘটনা দু’টি ঘটছে শহরে, যেখানে পাশাপাশি দু’টি পরিবার যুগ যুগ ধরে বাস করলেও পরস্পরে কুশলাদি বিনিময় হয় না। মাটির সঙ্গে লাগানো পাশাপাশি দু’টি বস্তিঘরে এসব ঘটনার সূত্রপাত, যাঁদের মাঝখানে একটি বড়সড় পাঁচিল, দুই পরিবারের মধ্যে আমৃত্যু দেখাদেখি না হওয়ার জন্য যেটা অনেকাংশে দায়ী।
চতুর্থ তলায় নতুন ফ্ল্যাটের বারান্দার বাতিটা নিভিয়ে দিদার ঘটনা দু’টি যেভাবে দেখছে, তাতে মনে হচ্ছে, এমন কিছু ঘটবে, যা পরস্পর দ্বান্দ্বিক, অসাধারণ ও পৃথিবীতে ঘটতে থাকা অসংখ্য ব্যাখ্যাতীত বিষয়ের প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
শুয়ে থাকা যে যুবতীর কার্যক্রম দিদারের চোখকে তাঁর দিকে স্থির করে রেখেছে, তিনি একটু পর হয়তো কবিতায় ডুবে যাবেন। হতে পারে, তাঁর কবিতার উপাত্ত সিতানে বসে থাকা এক যুবক। কবিতায় একটু উত্তেজনা মেশানোর জন্য কত কী করবেন তাঁরা! তাঁরা কি জানেন, এখন কবিতায় উত্তেজনা না থাকলে কেউ ছুঁয়েও দেখে না!
না, আরো কিছু নারী এসে অক‚স্থলে যোগ দিলেন। তরুণীর পেটে হাত দিলেন এক নারী। দূরত্বের কারণে দিদারের দৃষ্টি থেকে যে দৃশ্য এতক্ষণ লুকিয়ে ছিল- তরুণীর পেট স্ফীত, সন্তান প্রসবের আগে যেমন থাকে।
অন্য ঘরের ঘটনা প্রেম ও সৃষ্টির নয়। দিদারের দৃষ্টিতে স্পষ্ট, এক বৃদ্ধ শুয়ে আছেন। তাঁর পাশে কিছু লোক বৃত্তাকার হয়ে জ্ঞাত এবং প্রস্তুত একটি বিপদের অপেক্ষায় আছেন। মনে হচ্ছে, বৃদ্ধ মারা যাবেন এবং তাঁরা কান্নাকাটির জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বসেছেন। বলা বাহুল্য, এই ঘটনার সঙ্গে কবিতা ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত নয়। কারণ, কবিতা সৃষ্টিকে ভালোবাসে, মৃত্যুকে উপেক্ষা করাই শ্রেয় মনে করে। সৃষ্টি ও মৃত্যুর সঙ্ঘাতে নিজেকে নিয়োজিত করার জন্য প্রস্তুত হয়ে দিদার আকাশে চোখ রাখল।
তারা, মেঘ, দিদার ও পরিবার দু’টির সঙ্গে সম্পৃক্ত জনাদশেক সদস্য-সদস্যা ছাড়া এ মহল্লায় হয়তো কেউ জেগে নেই। এমন যুৎসই সময়ে ঘটনা দু’টি ঘটছে, যখন দিদার পার্থিব অনেক প্রয়োজন সম্পন্ন করে বারান্দার এক কোণে যথারীতি নির্ঘুম ও আনন্দমুখর রাত্রি যাপনের সময় গুণছে। স্রষ্টার কাছে সে কৃতজ্ঞ, যে দু’টি খিড়কি দিয়ে সে দৃশ্যদু’টি দেখছে, এর একটি পাট্টাও বন্ধ নেই। তাঁরা ঘূণাক্ষরেও বুঝছেন না, অন্য কোনও পক্ষ গল্পের পট তৈরির জন্য ঘটনা নিরীক্ষণে ব্যস্ত।
বিছানায় লেগে থাকা যুবতীর গালে পাশে বসা যুবক চুম্বন করলেন। যুবতীও যুবকের মাথা আগলে রেখে গালে গাল লাগিয়ে রাখলেন।
আরো ক’জন দর্শকের সামনে যখন খেলাটা সম্পন্ন হলো, দিদারের ধারণা প্রগাঢ় হলো যে, তাঁরা সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী হবেন। তার মনে হতে থাকল, যুবতীর প্রসব-যন্ত্রণা শুরু হয়েছে অথবা হবে। একটু পরে নাড়িছেঁড়া যন্ত্রণায় ছটফট করবেন তিনি। এর মাধ্যমে স্বামী জানিয়ে দিলেন, এ কষ্টকে ভাগ করতে তিনি প্রস্তুত। অথবা, তিনি প্রসবিনীর গালে আগত অতিথির আগাম সম্ভাষণের চিহ্নটা অঙ্কিত করলেন।
রাত যত গভীর হতে থাকল, বৃদ্ধের পাশে তৈরি হওয়া জনবৃত্ত থেকে কেউ কেউ খসে পড়তে থাকলেন। তাঁরা হয়তো খেয়াল করেননি, বিদায়ের চিহ্নটা তাঁর চেহারায় ক্রমশ পরিচ্ছন্ন হচ্ছে। অতীব আপন বলে যাঁদের বসে থাকতে হয়েছে, তাঁদের মধ্য থেকে দু’-একজন অশ্রুপাতের চেষ্টা করছেন। তারা জানেন, কারো মৃত্যুতে ক’ফোটা অশ্রু বিসর্জন দেয়া সামাজিক দায়িত্বও!
মৃত্যুর আগে চেহারায় যে হালকা ফ্যাকাশে ভাবের উদ্ভব হয়, সেটা তাঁর চেহারায় ভাসছে। দিদার কিছুটা দূরে হলেও ঘটনাটির অন্তরঙ্গ প্রত্যক্ষদর্শী। তাঁদের কক্ষে জ্বলতে থাকা পুরনো একটি ভারি বাল্বের আলোর ঠিক বিপরীতে এবং ঢের উপরে বসে দিদার বৃদ্ধের চেহারাটা দেখছে বলে ওটা তার কাছে স্পষ্ট। সমান্তরাল এবং আলোর অনুক‚ল হয়ে বসা লোকজন সেটা হয়তো পরখ করতে পারছেন না।
দিদার বৃদ্ধের দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। কারো মৃত্যুকে সে সরাসরি দেখেনি বলে কিংবা সৃষ্টির নেশায় সবসময় মত্ত থাকে বলে নিঃশেষ হওয়ার আগাম ছবিটা তাকে প্রবলভাবে টানছে। এরই মধ্যে সন্তানসম্ভবা যুবতীর গোঙানি ভেসে এলো।
রাতের নিস্তব্ধতা ফুটো করে আসা শব্দগুলো দিদারের কানে বেশ লাগছে। ওদিকে চোখ ফেরাতে হয়েছে তাকে। স্ত্রীর কপালে হাত রেখে পার্শ্ববর্তীদের সান্ত¡নার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন উৎকণ্ঠিত যুবক। মনে হয়, মা-বাবা তাঁদের সঙ্গে থাকেন না। পাশে উপবিষ্টরা তাঁদের আত্মীয় নন, তবে স্বজন। কিছু কিছু শহুরে স্বজনের আন্তরিকতা যে অকৃত্রিম, তা দিদারের কাছে প্রমাণিত।
হায়, যুবতী এত রাতে ডাক্তার পাবেন কোথায়! তাঁরা তাঁকে হাসপাতালে নিচ্ছেন না কেন! অসংখ্য প্রশ্ন উৎলে উঠলেও দিদারের কাছে পরিষ্কার যে, এরা নাড়িছেঁড়া কষ্টকে সৃষ্টিগত জেনে নবাগতকে বিছানায় রক্তের স্রোতে ভাসিয়ে তোলার লোক। এদের চৌদ্দ-পুরুষ হাসপাতালের ‘অপবিত্র’ ফ্লোরে শরীরের রক্ত ফেলেননি।
যুবতী আরো একবার চিৎকার দিলেন। আগের ও এ চিৎকারের মধ্যে ফারাক আছে। আগেরটা ব্যথার, এটা একটু একটু করে মাংস ছিঁড়ে রক্তপাত হওয়ার। উহ, শরীরে একটু গুঁতো খেলে কেমন লাগে, আর এ কষ্ট যুবতী কিভাবে সইছেন? দৃশ্যত, এ-সংক্রান্ত কষ্ট যুবতীর জীবনে প্রথম। এ সময় বৃদ্ধের কক্ষ থেকে যে চিৎকারটা এলো, তা যুবতীর চিৎকারে মিশে যাওয়ার নয়, স্পষ্ট।
বৃদ্ধ দিদারকে সৃষ্টিসুখের উল্লাসে মিশতে দিলেন না। মিশতে চায়ও না সে। সে জানে, মৃত্যুর জন্যই সৃষ্টি, সৃষ্টির জন্যই মৃত্যু। অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত দু’টি বিষয়কে উপলব্ধি করার চেষ্টা তাকে করতেই হবে। সৃষ্টি ও নিঃশেষ- কোনওটির উপলব্ধিতে মানুষ সাধারণত অভ্যস্ত নয়। কিন্তু হাতেগোনা যে ক’জন মানুষ এ উপলব্ধি থেকে লাভবান হতে চান, দিদার তাঁদের দলে ভিড়তে আগ্রহী। কারণ, সৃষ্টি থেকে এ পর্যন্ত সময়টা তার কাছে কিছুটা হলেও বিচার্য, কিন্তু এখন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সময়কে ধারণ করার জন্য সে একেবারে যোগ্য নয়।
কুরবানির পশুর কর্তিত কণ্ঠ থেকে যে-রকম শব্দ বেরোয়, এ-রকম একটা শব্দ তুলে গলগল করে বমি করলেন বৃদ্ধ। হতে পারে রক্তবমি, দূরত্বের কারণে সেটা দিদারের পরখ করার সুযোগ নেই। তিনি কী বোঝাতে চাচ্ছেন, দর্শকরা তা বুঝছেন না। পৌঢ়ত্বের জীর্ণতা নিয়ে এক বৃদ্ধা তাঁর কপালে হাত রাখলেন। চেহারায় উৎকণ্ঠা অনেক বেশি স্পষ্ট নয়, তবে পার্শ্ববর্তীদের সান্ত্বনার জন্য তিনি যেভাবে চারদিকে তাকালেন, তাতে একটি বিষয় সত্য মনে হলো যে, বয়স যত বাড়ে, সহধর্মী বা ধর্মিণীর প্রতি মানুষ তত নির্ভরশীল হয়। সম্ভবত, তাঁদের সন্তান-সন্ততি সঙ্গে থাকেন না। পাশে যাঁরা, তাঁরা শহুরে স্বজনদের কেউ কেউ।
দিদার ভাবছে, ঘটনা দু’টির চরিত্র পরস্পর বিপরীত হলেও কিছু ক্ষেত্রে মিল রয়েছে। দু’টি পরিবারের অসহায়ত্ব এখানে সমানভাবে প্রকট। কোনও পক্ষ চাইলেই সমস্যার সুষ্ঠু সম্পাদনে সক্ষম নয়। দু’টি পরিবারই কিছু একটার জন্য অপেক্ষা করছে, এ অপেক্ষা কোথায় গিয়ে শেষ হবে তা তাঁদের জানা নেই। সৃষ্টি ও মৃত্যু- বিষয় দু’টিতে এখানে কারো নিয়ন্ত্রণ নেই। দিদারের মনে হচ্ছে, এই অসহায়ত্বটা মানুষের সম্পদ। কেউ জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত অসহায়ত্বের মধ্যে কাটাতে পারলেই তিনি সফল।
এসব দিদারের প্রাত্যহিক ভাবনার অংশ। এই ভাবনায় বড় আঘাত দিয়ে যুবতী উদ্ভট একটা ডাক দিয়ে বমি করতে থাকলেন। যা দেখা যাচ্ছে তাতে স্পষ্ট, বিছানার বড় একটা অংশ ভিজে গেছে। এখানেও দিদার নিশ্চিত নয়, উদগীর্ণ বস্তু রক্ত না অন্যকিছু।
রক্ত হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। দিদারের সংসারের বিস্তৃতিবিষয়ক অভিজ্ঞতা একে সায় দেয়। সন্তানসম্ভবারা একেবারে চরম সময়ে এসে বমিতে বিছানা ভাসিয়ে দেন, পেটে যা থাকে নির্দ্বিধায় ঢেলে দেন, এটা সে একাধিকবার দেখেছে।
উপস্থিত যাঁরা, তাঁদের কথা দিদারের কাছে স্পষ্ট হচ্ছে না। সবাই হয়তো যুবতীকে ডাক্তারের কাছে নিতে বলছেন। অথবা বলছেন না। এসব সামাজিক কাজে উপস্থিতিটাই আবশ্যক, কার দায় পড়েছে বিষয়টা নিয়ে অতিভাবনায় নিমজ্জিত হওয়ার! মজলিসে যাঁরা হাজির, তাঁদের অধিকাংশই প্রসবসংক্রান্ত বিষয়াদিতে প্রত্যক্ষভাবে অভিজ্ঞ হবেন। এ কারণেও হয়তো তাঁরা এটাকে জটিল ভাবছেন না। এলোমেলো ভাবছে দিদার, যদিও সে জানে, শুধু দৃষ্টিলব্ধ বিষয়গুলোতে তৈরি ধারণা সবসময় সত্য নয়।
মনে হচ্ছে, একটু পরেই ঘটনা দু’টির সমাপ্তি ঘটবে। দিদার বুঝতে পারছে না, বিপরীতধর্মী ঘটনা দু’টির ফলাফলে সে কিভাবে সমন্বয় ঘটাবে।
বৃদ্ধ জীবিত না মৃত, ঠাহর করা যাচ্ছে না। জীবিত হবেন, নইলে পাশের লোকজনের অন্তত দু’-একজন কান্নাকাটি করতেন। যিনি মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন, তিনি তো অবশ্যই করতেন। দিদার এর বিপরীত দৃশ্যও দেখেছে। যাঁরা সন্তানহারা কিংবা ভাইবোনহারা হওয়ার চরম অভিজ্ঞতা নিয়ে হৃৎপিণ্ড পাথরের মতো শক্ত করেছেন, তাঁদের চোখে সহজে কান্না আসে না।
দিদারের ধারণাসূচক ওঠানামা অবশ্যই করে। কিন্তু এখন তার ধারণা কেন জানি এক জায়গায় স্থির হয়ে আছে- বৃদ্ধ আর নেই।
ঘড়ির দিকে তাকাল দিদার, রাত তিনটা বাজতে পাঁচ মিনিট বাকি।
যুবতীর গোঙানি কিংবা বমি বেরুবার শব্দ কোনওটিই নেই। লম্বা হয়ে শুয়ে আছেন। লক্ষণটা শুভ নয়। তীব্র যন্ত্রণা না থাকলে প্রসব সাবলীল হয় না। অদ্ভুত এক নিয়ম- যন্ত্রণা যত বেশি, ততই ভালো!
পাশের নারীরা উৎকণ্ঠা নিয়ে দাঁড়ালেন। এবার বেশ ঘন করে কথা বলাবলি হচ্ছে। সম্ভবত তাঁরা সন্তানসম্ভবাকে হাসপাতালে নিতে বলছেন। ঘটনাস্থলে দিদার থাকলে তাই করত এবং হাসপাতালে নেয়ার জন্য স্বামীকে বাধ্য করত।
ব্যাখ্যাতীতভাবে দিদার এ ঘটনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত এবং একেবারেই সম্পৃক্ত নয়।
যুবতীকে বসানো হলো। দিদার যাঁকে স্বামী ধারণা করেছিলেন, তিনি এখন নেই। প্রসবের সময় স্বামীর উপস্থিত থাকাটা আমাদের সমাজবিধিতে নেই। এজন্যই সম্ভবত তিনি বাইরে। কিন্তু এখন যাঁরা আছেন, তাঁরা সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য মন থেকে যোগ্য কিনা!
দিদারের চিন্তাকে কিছুক্ষণের জন্য মুছে দিতে যুবতী বিকট শব্দ করে বমি করলেন। শব্দটা তার মনের গভীরতম স্থানে গিয়ে একটু নাচানাচি করল। সেও উঠে দাঁড়াল।
মনকে ঘটনাস্থলে হাজির করে অদৃশ্য সিংহাসন থেকে বিষয়টা পরিচালনায় মত্ত হয়ে উঠল দিদার। তার মন বলল, ব্যথায় কুঁকড়ে যাওয়া যুবতী এখনই বমির স্রোত বইয়ে দেবেন। তাই হলো। তার মন বলল, এখনই যুবতী তাজা মাংস-ছেঁড়া কষ্টের বিভৎস শব্দ তুলবেন। তাই হলো। মন বলল, যুবতী এখনই একটি জোরে ধাক্কা দেয়ার জন্য বসে পড়বেন। তাই হলো।
সেখানে মনকে বেশিক্ষণ টিকিয়ে রাখতে পারল না দিদার।
বৃদ্ধের ঘর থেকে কান্নার শব্দ এলো। বৃদ্ধা পরম মমতায় বৃদ্ধের দুই গাল থেকে রক্ত কিংবা অন্যকিছু মুছে দিচ্ছেন। চোখ দু’টো বন্ধ করে দিচ্ছেন। দিদার নিশ্চিত হলো, ফিরে গেলেন তিনি। ওদিকে চোখ রাখতেই আরো একটি নির্মল কান্নার শব্দ দিদারকে সৃষ্টি ও মৃত্যুর মাঝামাঝি স্থির করে রাখল।
যে শিশুটি জন্মগ্রহণ করল, সে কি জানে, কিছুকাল পর তাকেও ফিরে যেতে হবে!
যে সময়টা মনে প্রাত্যহিত কবিতা জাগিয়ে তোলে, এখন সেই সময়। দিদার বুঝতে পারছে, চাঁদ ও তারা দু’টি তার সখ্যের জন্যই হাঁ করে আছে! অথচ, কবিতার জাগতিকতা ও জীবন-মৃত্যুর প্রাকৃতিক নিয়মের মধ্যে সে কোনও মিল খুঁজে পাচ্ছে না।
কবি ও গল্পকার