মুহাম্মদ মিজান বিন তাহের, বাঁশখালী টাইমস: চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে এ বছর প্রতিটি বাগানে ও গাছে গাছে লিচুর মুকুলের সমারোহ। সেই সাথে সৌরভ ছরাচ্ছে লিচুর মুকুল। মুকুলের সুমিষ্টি সুবাস আন্দোলিত করে তুলেছে মানুষের মনও। প্রতিটি গাছের শাখায় শাখায় লিচুর মুকুলে যেনো প্রকৃতিকে অপরুপ সাজিয়েছে। যেন হলুদ আর সবুজের মহামিলন। থোকায় থোকায় লিচুর মুকুল দুলছে ফালগুনের মাতাল হাওয়ায়। সবুজ পাতার ফাঁকে হলদেটে মুকুল গুচ্ছ যেনো হাসছে। সেই হাসিতে মাতাল হয়ে মৌমাছিগুলো উড়ছে তো উড়ছেই। বাগানের সুনসান নীরবতা চিরে একটানা গান শোনাচ্ছে ঝিঁ ঝিঁ পোকা।
স্বপ্নে বিভোর লিচু চাষীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন বাগানের পরিচর্যায়। আগেই কিনে রাখা বাগান দেখে যাচ্ছেন মৌসুমী ফল ব্যবসায়ীরা। শিলা বৃষ্টি বা কালবৈশাখীর মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের খাঁড়ায় না পড়লে বাঁশখালীতে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বছর লিচু উৎপাদনে রেকর্ড হবে বলে মনে করছেন চাষীরা।
চট্টগ্রামে লিচুর কথা উঠলেই প্রথমে সুস্বাদু ও পুষ্টি গুণ সমৃদ্ধ লিচু উৎপাদন এলাকা হিসেবে বাঁশখালীর কালীপুরের নামটি সর্বাগ্রে উঠে আসে। এখানকার লিচু যেমন সুস্বাদু, তেমন পুষ্টি সমৃদ্ধ তাই কালিপুরের লিচুর কদর সারাদেশেই। কালীপুর লিচুর জন্য বিখ্যাত যুগ যুগ ধরে। বৈলছড়ি, গুণাগরি, পুকুরিয়া,সাধনপুর, জলদি, জঙ্গল চাম্বল সহ প্রায় প্রত্যেক ইউনিয়নেই পাহাড়ি এলাকায় একই সাথে সমতলে লিচুর চাষ হয়ে আসছে বহুকাল থেকেই।
তাছাড়া কৃষি অফিস থেকে যথাযথ সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে লিচু চাষী দের- এমনটিও জানান চাষীরা। ব্রিটিশ আমল থেকেই বাঁশখালীর উপজেলার কালীপুরে জমিদার বংশের লোকজন বোম্বাই, মাদ্রাজী, বেদানা, চায়না- থ্রী জাতের লিচু, চায়না ফোর জাতের লিচু চাষ চারা কলম সংগ্রহ করে বাগান করে । পরে তা জলদি, পুকুরিয়া, সাধনপুর, চাম্বল, নাপোড়ায় বিস্তৃতি লাভ করে। পাইকারদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন যায়গায় পৌঁছে যায় বাঁশখালীর এ লিচু। উপজেলার কালীপুর চাষ হয় এক ধরনের সুগন্ধি বেদানা লিচু। সুস্বাদু ও রসালো হওয়ায় বিশ্বজুড়েই কদর প্রায় এসব প্রজাতির লিচু। তাই জেলা ও দেশের চাহিদা মিটিয়েও রপ্তানি হয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। যার ফলে লিচু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে অধিকাংশ ব্যবসায়ী ও চাষীরা।
লিচুর চাষ দেখতে সরেজমিনে কালীপুর ইউনিয়নের পূর্ব পালেকগ্রাম এলাকায় গিয়ে কথা হয় এলাকার লিচু চাষী মোঃ নাছির ও নুরুল হকের সঙ্গে। তারা বলেন, এবার গাছে প্রচুর মুকুল এসেছে। ভালো ফলন পেতে নিয়মিত গাছের পরিচর্যা করছি। মুকুল আসার আগ থেকে ফল আসা পর্যন্ত প্রায় তিন মাস সঠিক পরিচর্যা খুবই জরুরি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার রেকর্ড পরিমাণে লিচু উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন এই লিচু চাষিরা। এবার প্রকৃতিক আবহাওয়া ভালো থাকলে লিচু উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে পড়বে বলে ও জানান তারা।
বাঁশখালী উপজেলা কৃষি অফিসার আবু ছালেক বলেন, বাঁশখালীতে প্রায় সাড়ে ৫শ হেক্টর জায়গা জুড়ে লিচু চাষ হয়ে থাকে। স্থানীয় উন্নত প্রজাতির এই লিচু উৎপাদনে চাষীরা বেশ গুরুত্ব সহকারে উৎপাদন কাজে শ্রম ব্যয় করায় বাণিজ্যিক ও ঘরোয়াভাবে উৎপাদিত এই লিচুর কদর দেশজুড়েই। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবারে রেকর্ড পরিমাণে লিচু উৎপাদনের সম্ভাবনা আছে।
বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর লিচুর চাষ যেমন বেশি হয়েছে, তেমন লিচু গাছে মুকুলও এসেছে বেশি। এবার ৯০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছে। অনুকূল আবহাওয়া এবং কৃষকরা লিচু বাগানের পরিচর্যায় যত্নবান হলে লিচুর বাম্পার ফলনের জন্য ব্যাপক উপযোগী।