মুহাম্মদ মিজান বিন তাহের, বাঁশখালী টাইমস: বাঁশখালীতে এ বছর গাছে গাছে আমের মুকুলের সমারোহ। সেই সাথে সৌরভ ছড়াচ্ছে আমের মুকুল। মুকুলের সুমিষ্টি সুবাস আন্দোলিত করে তুলেছে মানুষের মনও।
প্রতিটি গাছের শাখায় শাখায় আম মুকুলে যেন প্রকৃতিকে অপরুপ রূপে সাজিয়েছে। যেন হলুদ আর সবুজের মহামিলন। আমের মুকুল দেখতে যেমন তেমন এর মৌ মৗ গন্ধ পাগল করে তুলে মানুষকে। মৌমাছির দল গুন গুন শব্দে মনের আনন্দে ভিড়তে শুরু করেছে আমের মুকুলে। কৃষি বিভাগ বলছে, প্রাকৃতিক কারণেই এবার আগেভাগেই আম গাছে মুকুল এসেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরিচর্যা আর আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে আমের উৎপাদন বাড়ছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায় সারি সারি আম গাছ। আম লাভজনক হওয়ায় প্রতিটি বাড়িতে বাড়ছে আম গাছের সংখ্যা। প্রতিটি গাছে এখন আমের মুকুলে সমারোহ হয়ে উঠেছে। ওইসব এলাকার লোকজন আমের মুকুল ধরে রাখতে নানা প্রকার পরে পরিচর্যায় এক ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। তবে রোপণ করা গাছের মধ্যে দেশীয় পাশাপাশি ল্যাংড়া, গোপালভোগসহ নানা প্রজাতির আম গাছ রয়েছে। স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমের মুকুল ঝড়ে পড়ে যায়। ফলে আশানুরূপ মুকুল থেকে আম আসেনা। সংকট দেখা দেয় এ উপজেলার আম সরবরাহে। ভরা মৌসুমেও স্থানীয় বাজারগুলোতে দেশীয় আমের চেয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা হরেক রকমের আমে সয়লাব হয়ে যায়। তবে এ বছর প্রথম দিক থেকেই গাছে গাছে আম মুকুলের সমারহ দেখা যাচ্ছে। গাছগুলোতে ফাল্গুন মাসের প্রথম দিক থেকেই প্রচুর কুঁড়ি এবং মুকুল এসেছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মধ্যে পাহাড়ী অঞ্চলের সব আম গাছই এখন মুকুল এবং আমের কুঁড়িতে সয়লাব। ফলে এবার বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আম চাষিরা বলছেন, আম পূর্ণাঙ্গ ফলে রূপ নেয় কয়েকটি পর্যায় অতিক্রম করে। প্রথমে মুকুল, মুকুল থেকে ফুল, ফুল থেকে গুটি এবং গুটি বড় হয়ে আম রূপ নেয় ফলে। প্রতিটি পর্যায়েই আম গাছের বালাই ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব রয়েছে। তবে মুকুল আসার আগে এবং পরে বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। কারণ মুকুল ঝরে পড়েই আমের উৎপাদন বহুলাংশে হ্রাস পায়। আম গাছে মুকুল আসার সময় হপার পোকা কচি অংশের রস চুষে খায়। ফলে মুকুল শুকিয়ে বিবর্ণ হয়ে ঝরে পড়ে। এছাড়া রস চোষার সময় পোকা আঠালো পদার্থ নিঃসৃত করে, এতে ফুলে পরাগরেণু আটকে পরাগায়ণে বিঘ্ন ঘটে। এ পোকা দমনের জন্য কৃষি অফিসের পরামর্শে ওষুধ দেওয়া হয়। অধিকাংশ আমচাষিরা জানান, চলতি বছর আমের ফলন গত বছরের ফলনকে ছাড়িয়ে যাবে।
কালীপুর ইউপির মোহাম্মাদ রমিজ উদ্দীন বলেন, বর্তমানে আবহাওয়ার যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে ধারনা করা হচ্ছে আমের জন্য অনুকূলই হবে। তিনি বলেন গত বছরের চাইতে এবছর শীতও কুয়াশার দাপট অনেকাংশে কম ছিল। এখন পযর্ন্ত যেহেতু বড় ধরণের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়নি। ঝড়ে পড়েনি মুকুলও। মুকুলের রোগবালাইয়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে স্থানীয় কৃষি অফিস এবং ডিলারদের পরমর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবহার করেছি।
জলদী এলাকার হামিদ বলেন, গাছে মুকুল আসার পর থেকেই তারা গাছের প্রাথমিক পরিচর্যা শুরু করেছেন। মুকুলের রোগবালাই আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী গাছের পরিচর্যা করছেন।
আগামী মে মাসে গাছ থেকে আম সংগ্রহ শুরু হবে। প্রথমে বাজারে আসবে গোপালভোগ। পর্যায়ক্রমে ল্যাংড়া, ক্ষিরসাপাত, আম্রপালি, ফজলি আমসহ সর্বশেষ বাজারে আসবে আশ্বিনা আম।
বাঁশখালী উপজেলা কৃষি অফিসার আবু ছালেক জানান, বর্তমানে আবহাওয়া অনুকুলে রয়েছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর আমের চাষ যেমন বেশি হয়েছে, তেমন আমগাছে মুকুলও এসেছে বেশি। এবার ৯০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছে। অনুকূল আবহাওয়া এবং কৃষকরা আমবাগানের পরিচর্যায় যত্নবান হলে আমের বাম্পার ফলনের জন্য উপযোগী। এ অবস্থায় থাকলে এবার আমের বাম্পর ফলনের আশা প্রকাশ করছেন। তবে সবকিছুই প্রকৃতির উপর নির্ভর করছে।