BanshkhaliTimes

মাহে রমজানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

BanshkhaliTimesমাহে রমজানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

প্রফেসর ড. আ. ম. কাজী মুহাম্মাদ হারুন উর রশীদ

আজ শনিবার ১ রমজান। দীর্ঘ এগারো মাস পর আমাদের কাছে এসেছে আল্লাহ তায়ালার বিশেষ করুণা ও সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের জন্যে মর্যাদাপূর্ণ মাস রমজান। এ পবিত্র মাহে রমজান রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। এ মাহে রমজানে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন নাজিল করেছেন। এ মাহে রমজান মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ এবং সংযম শিক্ষা দেয়। এ রমজান মাস আমাদেরকে হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে ব্যক্তি জীবন ও সমাজ জীবনে সুশৃঙ্খলভাবে চলার শিক্ষা দেয়।
রমজান শব্দটি ‘রমজ’ শব্দ থেকে এসেছে। অর্থ দহন, প্রজ্বলন বা পোড়ানো। পবিত্র রমজান মাসে সিয়াম পালনের মাধ্যমে মানুষ পর¯পরের মধ্যকার হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা ও গুনাহসমূহ জ্বালিয়ে ফেলে। সিয়াম পাপিষ্ঠদের পাপ মোছন করে, নেককারদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার আরো বেশি সুযোগ এনে দেয়। তাই তাকে রমজান বলা হয়।
রোজা ফার্সি শব্দ। অর্থ উপবাস। রোজার আরবি শব্দ হচ্ছে ‘সাওম’। আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা। শরিয়তের পরিভাষায়- আল্লাহ্ তায়ালার নির্দেশ পালনার্থে সুব্হি সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকাই হচ্ছে ‘সাওম’।
হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে হজরত ঈসা (আ.) পর্যন্ত যতো নবী-রাসুল এসেছেন সকলের ওপর রোজা ফরজ ছিলো। হজরত আদম (আ.) প্রত্যেক মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা পালন করতেন। হজরত মুসা (আ.) জিলকদ ও জিলহজ মাসে দশ দিন রোজা রাখার পর তাওরাত কিতাব পেয়েছিলেন। হজরত নুহ (আ.) প্রত্যেক মাসে তিনটি করে রোজা রাখতেন। হজরত ইয়াহ্য়া (আ.)ও রোজা পালন করেছিলেন এবং ঈসা (আ.)ও রোজা পালন করেছিলেন। কিন্তু সে সময়ের রোজা আর আমাদের মুসলিমদের রোজার মধ্যে পার্থক্য আছে। তখনকার রোজার সময়সীমা, সংখ্যা, কখন তা রাখা হবে নির্ধারিত ছিলো না এবং ধারাবাহিকভাবে একমাস রোজা রাখার প্রচলন ছিলো না। পরবর্তীতে আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর ওপর ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় হিজরিতে পরিপূর্ণ একমাস রোজা রাখার বিধান নাজিল হয়। আল্লাহ্ তায়ালা কুরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন- ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে; যেমন ফরজ করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা আল-বাকারা, আয়াত- ১৮৩)
এ রমজানে সিয়াম পালনের তাগিদ দিয়ে আল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেছেন- ‘রমজান মাস, যাতে কুরআন নাজিল করা হয়েছে মানুষের হিদায়াতের জন্য এবং হিদায়াতের সু¯পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে এই মাস পায় সে যেনো রোজা পালন করে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তাহলে অন্যান্য দিনে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ্ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান এবং কঠিন করতে চান না। আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ করো এবং তিনি তোমাদের যে হিদায়ত দিয়েছেন, তার জন্যে আল্লাহ্র শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।’ (সুরা আল-বাকারা, আয়াত- ১৮৫) যে ব্যক্তি রমজান মাসে রোজা পালন করবে, আল্লাহ্ তায়ালা তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেবেন। হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’-(সহিহ আল-বুখারি, হাদিস নং- ১৯০১)

হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- ‘রমজান মাসে আমার উম্মতের জন্য পাঁচটি বস্তু দান করা হয়েছে; যা আগের উম্মতদের দেওয়া হয়নি।

১. রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ্ তায়ালার কাছে মিস্কের সুগন্ধির চেয়েও পছন্দনীয়।
২. ইফতার পর্যন্ত ফেরেশতাগণ তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
৩. আল্লাহ্ তায়ালা প্রতিদিন জান্নাতকে রোজাদারদের জন্য সজ্জিত করেন এবং বলেন অচিরেই আমার সৎ বান্দাগণ ক্লেশ-যাতনা দূরে নিক্ষেপ করে আমার দিকে ফিরে আসবে।
৪. রমজানে শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখা হয়। যাতে তারা এসব পাপ কাজ করাতে না পারে যা অন্য মাসে করানো সম্ভব।
৫. রমজানে রোজাদারকে শেষ রাত্রে মাফ করে দেওয়া হয়।’ -(মুসনাদ আহমাদ ইব্ন হাম্বল, হাদিস নং- ৭৯০৪)

রোজার গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- ‘আস-সাওমু জুন্নাতুন’ অর্থাৎ, রোজা ঢাল স্বরূপ। -(সুনান ইব্ন মাজাহ, হাদিস নং- ১৬৩৯) রোজাকে ঢাল বলার কারণ হচ্ছে, যুদ্ধে ঢাল যেমন তলোয়ার, তীর ও বল্লম থেকে যোদ্ধাকে হেফাজত করে; তেমনি রোজাও রোজাদারকে গুনাহের কাজ এবং জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করে। আর রাসুলুল্লাহ (সা.) সাওমের গুরুত্বে আরো বলেছেন, আল্লাহ্ নিজ হাতেই এর প্রতিদান দেবেন। হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- ‘আদম সন্তানের প্রতিটি ভালো আমল দশ থেকে সাতশ’ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। মহান আল্লাহ্ বলেন, তবে রোজা ব্যতীত। কেননা তা আমার জন্য, আমি নিজ হাতেই এর প্রতিদান দেবো। সে তো তার প্রবৃত্তি ও পানাহার আমার জন্যই বর্জন করেছে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ২৭০৭)

মুমিনের জীবনে মধ্যে রমজান মাসটি এক দুর্লভ সুযোগ এনে দেয়। তাই এ রমজান মাসের গুরুত্ব অনেক বেশি। এ কারণেই বলা হয় পবিত্র রমজান মাস হচ্ছে ইবাদাত-বন্দেগি, কুরআন তিলাওয়াত, জিক্র-আজকার এবং আল্লাহ্ তায়ালার নৈকট্য লাভের এক বিরাট সুযোগের মাস রমজান। এ মাস রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। এ মাসে আল-কুরআনুল কারিম নাজিল হয়েছে। তাই এ মাসের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য অপরিসীম। এ রমজান মাসের সম্মান ও মর্যাদা বর্ণনা করতে গিয়ে সুনান ইব্ন মাজাহ হাদিস গ্রন্থে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- ‘যখন রমজান মাসের প্রথম রাত আসে তখন শয়তানসমূহ এবং অবাধ্য জিনসমূহকে শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে রাখা হয় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। একটি দরজাও খোলা রাখা হয় না। আর জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং একটি দরজাও বন্ধ রাখা হয় না। এ মাসের প্রথম দিন থেকে একজন আহ্বানকারী ফিরিশতা আহবান করতে থাকে-হে পুণ্যের অন্বেষণকারী! পুণ্যের দিকে অগ্রসর হও। হে মন্দের অন্বেষণকারী! বিরত হও। আল্লাহ্ তায়ালা এ মাসে অনেককেই জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন এবং প্রত্যেক রাতে তা সংঘটিত হয়।’ -(সুনান ইব্ন মাজাহ, হাদিস নং- ১৬৪২) এ হাদিসে শয়তানকে আবদ্ধ করে রাখার অর্থ হলো, রোজাদার ব্যক্তিকে শয়তান প্রতারিত করতে পারবে না। কারণ একজন রোজা পালনকারী অধিক পরিশ্রম ও ত্যাগ সাধনা করে কঠোরতম সংযম অবলম্বন করতে থাকে, তখন তিনি প্রতিটি পদক্ষেপ অত্যন্ত সতর্কতার সাথে করতে থাকেন। তিনি রমজান মাসে সবসময় পাপকাজ থেকে বিরত থাকেন, যাতে রোজা পালন বৃথা না হয়। এজন্য শয়তান মানুষকে রমজানে পাপকাজে লিপ্ত করতে ততটুকু সক্ষম হয় না; যতোটুকু অন্য মাসে করাতে সক্ষম। আর জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়ার অর্থ হলো, রমজানে অন্য মাসের তুলনায় নেক আমল করার তাওফিক বেশি হয়, যা দ্বারা জান্নাতে যাওয়া সহজ হয়। যখন রোজাদার ব্যক্তি বেশি বেশি করে নেক আমল করেন, তখন তিনি নিশ্চয় জান্নাতের উপযোগী হবেন এবং জাহান্নাম থেকে বাঁচবেন। আর যখন বান্দা রমজান মাসের কারণে গুনাহের কাজ করা থেকে বিরত থাকবেন, তখন জাহান্নামের দরজা বন্ধ থাকবে।

রোজাদারগণকে আল্লাহ্ তায়ালা বিশাল সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে, হজরত সাহ্ল (রা.) হতে বর্ণিত। নবী (সা.) বলেছেন- ‘জান্নাতে এমন একটি দরজা আছে যার নাম হলো রাইয়ান। কিয়ামাতের দিন এ দরজা দিয়ে কেবল রোজাদার ব্যক্তিগণই প্রবেশ করতে পারবে, অন্যরা কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। বলা হবে- রোজাদারগণ কোথায়? তারা ছাড়া কেউ এতে প্রবেশ করতে পারবে না। অতঃপর যখন রোজাদারগণ সেখানে প্রবেশ করবে, তখন তার দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। যাতে কেউ এতে প্রবেশ করতে না পারে।’ -(সহিহ আল-বুখারি, হাদিস নং- ১৮৯৬) মানুষ যখন রোজা রাখে, সারাদিন উপবাস থাকার কারণে মানুষের মুখে দুর্গন্ধ হয়। এ দুর্গন্ধ আল্লাহ্র কাছে খুবই পছন্দনীয়। এ দুর্গন্ধ আল্লাহ্র কাছে মিস্কের সুগন্ধির চেয়েও খুশবো। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- ‘সে সত্ত্বার শপথ! যার হাতে আমার জীবন। রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহ্র নিকট মিস্কের সুগন্ধির চেয়েও বেশি সুগন্ধিযুক্ত।’ -(সহিহ আল-বুখারি, হাদিস নং- ১৯০৪)
আমরা যে রোজা পালন করছি, আমাদের জন্য কতইনা সৌভাগ্যের। এ রোজা কিয়ামতের দিন আমাদের জন্য সুপারিশ করবে। হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইব্ন আমর (রা.) হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- ‘রোজা ও কুরআন বান্দার জন্য কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে। রোজা বলবে- হে রব! আমি তাকে পানীয় ও যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। আল-কুরআন বলবে- আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি (সে আমাকে তিলাওয়াত করেছে)। অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, অতঃপর তাদের উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।’ -(মুসনাদ আহমাদ, হাদিস নং-৬৬২৬) রোজাদারগণ রোজার কারণে পিপাসার্ত থাকেন। পিপাসার্তগণকে আল্লাহ্ তায়ালা কিয়ামতের দিন পানি পান করাবেন। হাদিসে এসেছে, হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় বরকতময় মহান আল্লাহ্ নিজের ওপর বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন, যে বান্দা তার জন্য গ্রীষ্মকালে (রোজার কারণে) পিপাসার্ত থেকেছে, তিনি তাকে পিপাসার্তের দিন (কিয়ামতের দিন) পানি পান করাবেন।’ -(মুসনাদ আল-বাজ্জার, হাদিস নং- ৪৯৭৪)
আমাদের কাছে রমজান মাস এসেছে। এ মাসে যদি আমরা আল্লাহ্র কাছে গুনাহ মাফ করাতে না পারি তাহলে আমাদের চেয়ে দুর্ভাগা আর কে হতে পারে? হাদিসের মধ্যে এসেছে, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিগণকে বললেন- ‘তোমরা মিম্বরের কাছে এসো। তখন সাহাবিগণ মিম্বরের কাছে আসলেন। তারপর রাসুলুল্লাহ (সা.) মিম্বরের প্রথম সিঁড়িতে পা রাখলেন। অতঃপর বললেন- আমিন। এরপর দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখলেন। তখন বললেন- আমিন। তারপর তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখলেন। তখনও বললেন- আমিন। যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) খুতবা ও বয়ান শেষ করে মিম্বর থেকে নামলেন তখন সাহাবিগণ বললেন- হে আল্লাহ্র রাসুল (সা.)! আমরা আপনাকে মিম্বরে ওঠার সময় কিছু বলতে শুনেছি, যা আগে কখনও শুনিনি। উত্তরে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, এইমাত্র জিবরাইল (আ.) আমার কাছে এসেছিলেন। আমি যখন প্রথম সিঁড়িতে পা রাখি, তখন তিনি বললেন- ধ্বংস হউক ঐ ব্যক্তি, যে রমজান মাস পেলো; কিন্তু তার গুনাহ মাফ করাতে পারলো না। তখন আমি বললাম- আমিন। যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখলাম, তখন জিবরাইল (আ.) বললেন- ধ্বংস হউক ঐ ব্যক্তি, যে ব্যক্তি আপনার নাম উচ্চারণ করে; কিন্তু সে আপনার ওপর দরুদ পাঠ করে না। তখন আমি বললাম- আমিন। যখন তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখলাম, তখন জিবরাইল (আ.) বললেন, ধ্বংস হউক ঐ ব্যক্তি; যে পিতা-মাতা উভয়কে অথবা তাদের কোনো একজনকে বৃদ্ধ অবস্থায় পেলো; কিন্তু তারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালো না তখন আমি বললাম- আমিন।’ -(সুনান আল-কুবরা, হাদিস নং- ৮৫০৪)
রোজাদারদের জন্যে দু’টি আনন্দ রয়েছে। হাদিসের মধ্যে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- ‘রোজাদারদের জন্য আনন্দের সময় হলো দু’টি। ১. যখন সে ইফতার করে তখন সে ইফতারের আনন্দ পায়। ২. যখন সে তার প্রতিপালকের সাথে মিলিত হবে তখন তার রোজার কারণে আনন্দিত হবে।’ -(সহিহ আল-বুখারি, হাদিস নং- ১৯০৪) আমরা রোজা রেখে যদি মিথ্যা কথা বলা ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে না পারি তাহলে আমাদের এ রোজা হবে অনর্থক। বুখারি শরিফের হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও মিথ্যা আমল বর্জন করেনি, তার এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহ্র কোনো প্রয়োজন নেই।’ -(সহিহ আল-বুখারি, হাদিস নং- ১৯০৩)
রমজানের রোজা হলো মানবজীবনের পূত পবিত্র এবং সুন্দর করে জীবন গড়ার একটি কার্যকরী পন্থা। রমজান মাসের সিয়াম সাধনা আল্লাহ্ তায়ালার অসীম রহমতের দ্বার উন্মুক্ত করে দেয় এবং বেহেশতি সওগাত লাভের উপযুক্ত করে তোলে। আর মনের পবিত্রতা লাভের, আল্লাহ্ তায়ালার নৈকট্য ও সান্নিধ্য লাভের সুবর্ণ সুযোগ এনে দেয় এবং রমজানের রোজার মাধ্যমে মানুষ সকল প্রকার অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে।

মাহে রমজানের উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকওয়া অর্জন করা। এ রমজান মাসের রোজা পালনের মাধ্যমে বান্দার মনে ভয় সৃষ্টি হয়। আল্লাহ্র কাছে মান মর্যাদা নির্ধারণের একমাত্র উপায় তাকওয়া। এই তাকওয়াই মানুষের মনে সৎ গুণাবলী সৃষ্টি করে। সুতরাং যাবতীয় অন্যায় কাজ থেকে বিরত থেকে ভালো কাজ করতে পারলেই আমাদের রোজা পালন সার্থক হবে। এই রমজান মাস থেকে আমাদের তাকওয়া শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। মাহে রমজানের রোজা মানুষের স্বভাব-চরিত্র, আচার-আচরণ সংশোধনপূর্বক প্রকাশ্যভাবে সুন্দর করে দেয় এবং মানুষের পার্থিব লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, পরচর্চা, পরনিন্দা, মিথ্যাচার ও প্রতারণা প্রভৃতি থেকে দূরে সরিয়ে রেখে আত্মসংযম শিক্ষা দেয়।
রমজান মাসে ঈমানদার ব্যক্তির অন্তরে বেশি করে আল্লাহভীতি সৃষ্টি হয়। ফলে মুমিন বান্দাগণ আল্লাহ্র দরবারে বেশি বেশি মাগফিরাত কামনা করেন এবং সকল প্রকার খারাপ কাজ পরিত্যাগ করেন। আল্লাহ্ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ইবাদত-বন্দেগি, কুরআন তিলাওয়াত, জিকর-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল, দোয়া ও ইস্তিগফার করেন। বস্তুত মাহে রমজানে একজন রোজাদার সারা বছরের পুণ্যের ঘাটতি পূরণের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যান। ফলে নিজেকে সুশোভিত করে আত্মশুদ্ধি লাভ করেন।
আসুন, আমরা মাহে রমজানের রোজা যথাযথো পালনের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহ্ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করি। মহান আল্লাহ্ আমাদের তাওফিক দান করুন। আর এ রমজান মাসে আল্লাহ্ তায়ালার কাছে বেশি বেশি করে ফরিয়াদ করি, মহান আল্লাহ্ যেনো প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের এ মহামারি থেকে আমাদের বাংলাদেশ এবং সারা বিশ্বের মানুষকে হেফাজতে রাখেন। আমিন ॥

লেখক: কলামিস্ট ও গবেষক; প্রফেসর, আরবি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *