বাঁশখালীর পাশের উপজেলা চকরিয়ায় পৌরশহরের মাতামুহুরি নদীর জেগে উঠা চরে ফুটবল খেলার পর গোসল করতে নেমে ৫ স্কুল ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। সাড়ে ৭ ঘন্টা অভিযান চালিয়ে ৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করে গতকাল রাত সাড়ে ১১ টায় অভিযান শেষ করা হয়।
এরমধ্যে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় তিনজনের ও রাত সোয়া ১১ টায় ২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে শনিবার দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার মাতামুহুরী ব্রিজের নিচে এ ঘটনা ঘটে। চকরিয়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দা, পুলিশ ও ডুবুরী টিম মিলে স্কুলছাত্রদের উদ্ধার অভিযান চালিয়ে লাশগুলো উদ্ধার করে।
নিখোঁজ ছাত্রদের উদ্ধারে নামার চার ঘণ্টা পর জেলেরা জাল ফেলে ন চকরিয়া গ্রামার স্কুলের দশম শ্রেনীর ছাত্র চকরিয়া আনোয়ার শপিং কমপ্লেক্সের মালিক আনোয়ার হোসেনের পুত্র আমিনুল হোসাইন এমশান (১৫), এমশানের ছোট ভাই অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র মেহরাব হোসেন, কাকারার ইউনিয়নের শওকত আলীর পুত্র দশম শ্রেণির ছাত্র ফারহান বিন শওকত (১৫) ও রাত সোয়া ১১ টায় ডুবুরী টিম চকরিয়া হাইস্কুলের রোড়ের প্রদীপ ভট্টাচার্যের পুত্র তূর্ণ ভট্টাচার্য (১৫) ও চকরিয়ার গ্রামার স্কুলের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের পুত্র সায়ীদ জাওয়াদ অরবি (১৫)র মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহতের মধ্যে আমিনুল হোসাইন এমশান ও মেহরাব হোসেন চকরিয়া ব্যবসায়ী চকরিয়া আনোয়ার শপিং কমপ্লেক্সের মালিক আনোয়ার হোসাইনের দুই পুত্র। এমশান ও মেহরাব নদীতে ডুবে যাওয়ার পাওয়ার পর থেকে তার পিতা-মাতা অজ্ঞান হয়ে যাাওয়াতে।
ছয়জন স্কুল ছাত্র নদীতে ডুবে যাওয়ার খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে নিখোঁজ স্কুল ছাত্রের স্বজন ও হাজার হাজার মানুষ নদীর দুই পাড়ে জড়ো হয়। নিহত ও নিখোঁজ ছাত্রদের স্বজনদের আহাজারিতে নদীর দুইপাড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে।
প্রত্যক্ষদর্শীর সূত্রে জানা গেছে, স্কুলের অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা শেষে বন্ধুরা মিলে মাতামুহুরীর চরে ফুটবল খেলতে যায়। বন্ধুরা ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা দুই দল হয়ে ফুটবল খেলে। ফুটবল খেলা শেষে তারা নদীতে গোসল করতে নামলে অন্যরা সাতাঁর কেটে নদীর চরে উঠে আসলেও ৬জন চোরাবালিতে আটকে নদীতে ডুবে যায়। ডুবার পরপরই তাদের বন্ধু মারুফুল ইসলাম জামি সাঁতার কেটে নদীর পাড়ে উঠে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে চকরিয়া গ্রামার স্কুলের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, স্কুলের অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা শেষে স্কুলের পাঁচ ছাত্র মাতামুহুরী নদীর চরে ফুটবল খেলতে যায়। ফুটবল খেলা শেষে তারা নদীতে গোসল করতে নামলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে ছুটে যান চকরিয়া উপজেলা সরকারি কমিশনার (ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খোন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দীন আরাফাত। তার নেতৃত্বে চলছিল উদ্ধার অভিযান। খোন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, কক্সবাজারের কোথাও ডুবুরি দল পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রামে খবর দেওয়া হয়েছে। এর আগেই ফায়ার সার্ভিস বাহিনী ও এলাকার লোকজন নানাভাবে খোঁজ করে একজনকে জীবিত ও তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, লোকজন ও জেলেদের সহায়তায় ফায়ার সার্ভিস কর্মী ও ডুবুরী টিম রাত সাড়ে ১১ টায় নিখোঁজ থাকা ৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর আলম এমএ বলেন, এমন মর্মান্তিক ঘটনা চকরিয়ায় অতীতে আর ঘটেনি। যেকোনো উপায়ে নিখোঁজদের উদ্ধার করা হবে। এতে চকরিয়ায় শোকের ছায়া নেমে আসছে। এদিকে ঘটনাস্থলে ছুটে যান চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী, জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম লিটু, পৌরসভা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক উদ্দিন চৌধুরী, থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়াছিন আরাফাত, পৌরসভার প্যানেল চেয়ারম্যান বশিরুল আইযুব, কাউন্সিলর মুুজিবুল হক মুজিব, রেজাউল করিম। এদিকে তাদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন চকরিয়া উপজেলা ইউপি চেয়ারম্যান এসোসিয়েশন।