মাঝ রাতে যখন ভালোবাসার আগুনে জ্বলে উঠি
জে এম ইশফাকুল হক
পৃথিবীকে যেদিন থেকে একটু একটু বুঝতে শিখেছি
হৃদয়ের প্রতিটি পরতকে তোমার ভালোবাসা
বৃষ্টি ধোয়া আকাশের রংধনুর মতো
রাঙ্গিয়ে তোলা শুরু করেছিলো।
এই রোমান্টিক অনুভূতির নাম যে ভালোবাসা, তা তখনও শিখে উঠিনি,
কারণ, ভালোবাসার বর্ণমালা শিখেছি আরও বহু পরে, আরও বড়ো হওয়ার পর।
বোবার মতো তখন তোমার সাথে শুধুই প্রেম করে গেছি, নিরবে-নিস্তব্ধতায় তোমাকেই শুধু ভালোবেসে গেছি।
তখনও বুঝতে পারিনি, আস্তে আস্তে আমার পুরু হৃদয়, মন ধ্যান আর জ্ঞান, সবটুকু তুমি, শুধুই তুমি ইতোমধ্যেই দখল করে নিয়েছিলে।
আমিও তাই নিজেকে তোমার তর্জনী হেলনের কাছেই সঁপে দিয়ে ছিলাম ,
আমার সমর্পণের কথা নিশ্চয় ততোদিনে তুমি
শুনতে পেয়েছিলে।
সন্ধ্যার আঁধার যখন ঘনিয়ে আসতো ,
কেরোসিনের প্রদীপটিও যখন জ্বলে উঠতো,
প্রতিদিন লক্ষ্য করতাম,
ঝাঁকে ঝাঁকে ঊড়ন্ত পতঙ্গ এসে
জ্বলে উঠা আগুনে নিজেদেরকে শুধুই আত্মাহুতি দিচ্ছে।
বিষয়টি দেখে নিয়মিতই তখন ভেবে উঠতাম।
একদিন, একটি পতঙ্গকে হাতের মুঠোয় নিয়ে
তার বুকে কান পেতে শুনি।
তার হৃদয়ের ঊত্তপ্ত প্রতিটি কাঁপুনি
অনুধাবন করার চেষ্টা করে
শেষ পর্যন্ত যে বাক্যটি আমি উদ্ধার করি,
ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি,
বিশ্বাস করো, তোমাকে ছাড়া আর কাউকে কখনও কোনদিন একটিবারের জন্যও ভালোবাসতে পারিনি ।
পৃথিবীর দিক-দিগন্তে দিশেহারার মতো খুঁজতে গিয়ে কোথাও তোমাকে একটি বারের জন্যও দেখতে না পেয়ে
আকাশ পানে দুচোখ মেলে ধরতেই নজরে আসতো ,
পুরু আকাশটা নীলে নীল হয়ে আছে।
বিস্ময়ে ভাষাহীন ভাষায় তখন শুধিয়েছিলাম ,
ও আকাশ, তোমার বুক এতো নীল কেন হয়ে আছে?
জবাবে আকাশ সেদিন ফিসফিস করে বলেছিলো-
বিরহের অসহ্য বেদনা,
এক সমুদ্র বেদনায় চৌদ্দশ’ বছর ধরে আমার বুক ঢেকে আছে।
অঝোর ধারায় নেমে আসা বৃষ্টি দেখে আরেকবার প্রশ্ন রেখেছিলাম ,
কেন তুমি এত বৃষ্টি ঝরাও?
মেঘের গুমরে ওঠা গর্জন শুনে সেদিন জানতে চেয়েছিলাম ,
বলো,
যখন তখন এতো গর্জন কেন শোনাও?
বিদ্যুতের ঝিলিক মেরে মেঘ সেদিন আমাকে জানিয়ে ছিল,
প্রিয়তমের বিরহের অসহ্য যন্ত্রনা,
আমি যে আর একটুও সইতে পারি না।
তাইতো এতো বৃষ্টি, তাইতো এতো কান্না।
একদিন সমুদ্রের তীরে দাঁড়ালে ফ্রিজের পানির মতো ঠান্ডা হাওয়া এসে,
আমার গা ছুঁয়ে গিয়েছিলো,
জানো, তখন আমার বুঝতে আর বাকি থাকেনি
তোমাকে না পাওয়ার বেদনায় এই হিমেল হাওয়া,
সমুদ্রের বুকের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা একেকটি হাহুতাশ ,
তলদেশ থেকে বেরিয়ে আসা সে একের পর এক দীর্ঘশ্বাস।
বেচারা মৌমাছি ভালোবাসার উত্তাপে চুমু খাওয়ার বাসনায় পাগলপারা হয়ে তোমাকে কাছে না পাওয়ায়
ফুলে ফুলে নাকি সারাক্ষণ সে চুমু খেয়ে যায়।
আমারও বুকের ভেতর এক সমুদ্র ভালোবাসা
জেগে উঠে ওষ্ঠে, অধরে এসে বিরামহীনভাবে যে আজ আছড়ে পড়ে।
বলো, কাকে আমি চুমু খাবো?
কার কপালে এক রাজ্যের পিপাসায়
চুমু খেয়ে আমি নিবৃত হবো?
কোথায় কোনখানে হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে
একটি বারের জন্য, শুধু একটি বারের জন্য,
তোমার নাগাল পেয়ে যাবো?
জানো, আজ মাঝরাতে হঠাৎ ভালোবাসার আগুনে আবার যখন জ্বলে উঠেছিলাম ,
চুমু খাওয়ার উদগ্র বাসনায় এপাশ ফিরে ওপাশ ফিরে,
তোমাকে না পাওয়ার যন্ত্রণায় যখন কাতর হয়ে উঠেছিলাম,
তৎক্ষণাৎ সেলফে থাকা নীল যুবদান মোড়ানো কোরআনটি খুলে চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে তুলে,
অনেকখানি ক্ষান্ত হয়েছিলাম।
কারণ , আমি জানতাম,
এই কিতাবের প্রতিটি হরফ, প্রতিটি কথাই
তোমার দু’ওষ্ঠ হতে ঝর্ণাধারার মতো নেমে আসায়
চৌদ্দশ বছর পূর্বে নিবিড়তরো ভালোবাসায়
আমরা, শুধু তোমার উম্মতেরাই ,
নিজেদের বুকে ধারণ করে নিয়েছিলাম ।