BanshkhaliTimes

মনুষ্য সৃষ্ট কৃত্রিম মরুদ্যানে স্বাগত!

BanshkhaliTimes

মনুষ্য সৃষ্ট কৃত্রিম মরুদ্যানে স্বাগত!

আকমল সাঈদ

আর্কটিক, সাহারা বা গোবি মরুভূমিতে গিয়ে মরুর স্বাদ নিতে চাওয়ার ইচ্ছে বা সাধ্যি কোনোটা আপাতত আমার নেই। দূর, অদূর ভবিষ্যতে কখনো ইচ্ছে হলে সাত সমুদ্দুর পাড়ি দেওয়ার দরকারই বা কিসের, মাতৃভূমিতেই যখন স্বাদটা পেতে চলেছি? সবচেয়ে বড় কথা, আমার দেশটা হাতেগড়া মরুতে রুপান্তরিত হওয়া থেকে খুব দূরে আছে কি?
প্রকৃতি কিনা যেই দেশকে দু’হাত ভরে দিয়েছে, তার নীতি নির্ধারনী পর্যায়ের ইনসানরা ঐক্যমতে পৌঁছলো যে, আমাদের মরুভূমির স্বাদ দিয়েই ছাড়বে। নাহয় গাছকে প্রধান শত্রু হিসেবে দাঁড় করানোর কোনো মানে তো থাকেনা।

একটা পরিসংখ্যানে চোখ বুলিয়ে নিই-
জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা(এএফও) বন বিষয়ক এক প্রতিবেদনে (দ্য স্টেট অব গ্লোবাল ফরেস্ট-২০১৮) বলছে, বাংলাদেশের মোট ভূখণ্ডের সাড়ে ১৩ শতাংশ বনভূমি। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের দাবি ১৭ শতাংশ। যেখানে মোট ভূখণ্ডের অন্তত ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা আবশ্যক।
আবার, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক’র (এডিবি) মতে তা মাত্র ১১ দশমিক ২ শতাংশ। যার অবস্থান পেছন থেকে তৃতীয়। পাকিস্তান আর মঙ্গোলীয়া কেবল বাংলাদেশের পেছনে।
তালিকায় মোট আয়তনের ৯২.৭ শতাংশ বনাঞ্চল নিয়ে প্রথমে লাওস। এরপরই রয়েছে ভুটান, ব্রুনাই, মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া। এই চার দেশের মধ্যে ভুটানের আছে ৮১ দশমিক ৫ শতাংশ বনাঞ্চল। আর ব্রুনাই, মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার রয়েছে যথাক্রমে ৭৯ দশমিক ৭ শতাংশ, ৬৭ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ৬৩ দশমিক ৭ শতাংশ বনাঞ্চল। মোট আয়তনের ২৪ দশমিক ১ শতাংশ এবং ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ বনাঞ্চল নিয়ে বাংলাদেশের সামনে যথাক্রমে ভারত ও চীন।
এবার একটা ধ্বংসলীলা দেখা যাক;
বনভূমি পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচ (জিএফও) ও ওয়ার্ল্ড রিসোর্চ ইনস্টিটিউট(ডব্লিউআরআই) প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, গত সাত বছরে বাংলাদেশে ৩ লাখ ৩২ হাজার একর বনভূমি উজাড় হয়েছে। যা প্রতি বছর বিশ্বে উজাড় হওয়া বনভূমির সমান।
GFO & WRI এই প্রতিবেদনে আরো জানাচ্ছে, বনভূমি উজাড় হওয়ার দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চল। ২০১০ সালে যেখানে দেশের মোট বৃক্ষসম্পদের ৬০ ভাগ ছিলো এই এলাকায়, তা এখন কমে দাঁড়িয়েছে ১০ শতাংশের নিচে। দুর্ঘটনা ধরে নিয়ে ইন্না-লিল্লাহ পড়া তো যায়!
এত শত অপরাধের শাস্তি এখনো পাচ্ছি কই? আসছে, আসবে তবে আরো ভয়ংকর রূপে।
বাংলাদেশে ৩৬°, ৩৭°, ৩৮° ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বহু বছর ধরেই পড়ছে। গত বছর থেকে যেমনটা হচ্ছে এরকম অনুভূতি তো কখনো হয়নি। এসব ভয়াবহতার নমুনা বৈকি!

আমার দেখা একটা উদাহরণ দিই। মাত্র মাস-ছয়েকের ব্যবধান। শহরে যাওয়া আসায় আনোয়ারা থানাধীন রাস্তা অতিক্রম করার পথে পুরো সময়টা শান্তি লাগতো, সূর্য রশ্মি পর্যন্ত ভেদ করতোনা। সেই গাছগুলো রোপন করা ব্যক্তিবর্গের জন্য অজান্তেই দোয়া বের হতো। এই কিছুদিনের মধ্যেই সব বিপরীত। অনেক সুন্দর হবে হয়তো রাস্তাটা যখন ছয় লেইন হবে। তাতে কি মরুর অনুভবটা কমবে?
এরকম আলাদাভাবে বলার তেমন কিছুই নেই আসলে, মোটামুটি সব জায়গায় এমন ধ্বংসযজ্ঞ চলছে। তবে সবচেয়ে সুন্দরভাবে গাছ কাটা হয় যেকোন রাস্তা নির্মাণ করতে গেলে।

রাস্তার প্ল্যানিং মাথায় আনতে গেলেই আপনার সর্বপ্রথম গাছ কাটার কথা উঁকি দিতে হয়। গাছকে এসবের বৈপরীত্য বানাতে হয়। কি আশ্চর্য!
এসব পরিকল্পনায় আপনার জ্ঞান যদি এতই স্বল্প হয়, তবে দলবলসহ বিদেশে শিক্ষাসফরে না গিয়ে আপনি দয়া করে টাইগারপাস-কদমতলী সড়কের কয়েক কিলোমিটার রাস্তাটা দেখে নিবেন। এরপরও যদি হেদায়েত না হয় তাহলে কার্বনডাইঅক্সাইডকে ঘিরেই আপনার চূড়ান্ত বিনাশ হোক।

আয়ারল্যান্ডের পরিবেশ নিয়ে একটা প্রতিবেদন দেখে মনে হলো, এরা যেন জানেই না গাছ কেন কাটে, কেটে কি হয়! সিটি কর্পোরেশনও কোন এখতিয়ার রাখেনা গাছ কাটার। আর আমাদের কাছ কাটা কমিটি তো এরকম কত কর্পোরেশনকে নতজানু করার ক্ষমতা রাখে তার হিসেবও নাই। এসকল কিছুই যেন কৃত্রিম মরুভূমি গড়তে বদ্ধপরিকরতার অংশবিশেষ।

শহুরে জীবন বাদই দিলাম। গ্রামে টেকা যাচ্ছেনা। কি সকাল দুপুর বা রাত। সব জায়গায় পানি সংকট। পুকুরে নামবেন স্বস্তির আশায়? তাপমাত্রা ৩৬° রেকর্ড হলে সেখানে মনে হয় ৩৮° সেলসিয়াস!

মধপ্রাচ্য তাদের ৫০° সেলসিয়াস তাপ সামাল দেয় টাকার খনির ঝনঝনানিতে, অতি উন্নত বলে, ঘরে বাইরে এসির জোরে। আমাদের কি আছে আসলে? সৃষ্ট অবস্থায় আমরা কি করতে পারবো? বস্তুতঃ কিছুই করার থাকবেনা। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন এই যা কামনা।
এখনো সময় যতটুকুই আছে, নিজ থেকে একটা করে গাছ লাগাই। সপ্তাহে না পারলে মাসে একটা অন্তত। নিজের জায়গা না থাকলে অন্যের জায়গায়। কারণ আমাদের হাতে গাছের বিকল্প যে শুধু গাছই আছে!
দয়া করে নিজেই নিজেকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসুন।

লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *