২৯ এপ্রিল ১৯৯১ স্মৃতির পাতা থেকে
এম. শহীদ উল্লাহ সিকদার
বিকাল থেকে আগের দিন বৃষ্টির হওয়ার মত মেঘাচ্ছন্ন হয়ে রয়েছিল আকাশ।
রাত ১১ টার দিকে বেশি বাতাস শুরু হয়েছিল এবং আমাদের বাড়ির সামনের আম গাছটি পড়ে গিয়েছিল যেখানে অনেক আম ছিল।
আমরা বাহিরে লোনা পানি যখন দেখলাম তখন ঘর মাটির তৈরি টিনের হওয়ার কারণে তাড়াতাড়ি ঘরের দমদমায় উঠে গেলাম।
সেখানে উঠার ১০ মিনিটের মধ্যে পানি বেড়ে গিয়ে ঘর সহ সবকিছু ভেঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল।
আমার বড় এক ভাই আমাকে একটি আম গাছে বসিয়ে কোন মতে রেখেছিল। তখন অন্যরা বিভিন্নভাবে গাছে এবং রান্না ঘরের ছনের ছাউনিতে উঠে জীবন রক্ষা করেছিল।
ভোরে পানি নেমে গেল সকাল হল,চারদিকে মৃত্যুর আহাজারিতে এলাকা জুড়ে আতংক বিরাজ করেছিল।
ভয়াল ঐদিন (২৯/০৪/১৯৯১ খ্রি.) আমাদের সব কিছু চলে গিয়েছিল তবে গাছ থেকে যে নারিকেল পড়েছিল তা নিচে পুকুরের মধ্যে বিভিন্ন কিছুর সাথে আটকে থেকে গিয়েছিল।
পরের দিন সকালে কিছু খাওয়ার মত ছিল না তাই পাশের বাড়ি থেকে দা এনে নারিকেলের পানি খেয়ে জীবন বাচিয়ে রেখেছিলাম।
আমাদের বাড়িতে একটি দোকান ছিল সেই দোকানের কিছু চিড়া পেয়েছিলাম তা খেতে গিয়ে দেখলাম কেরোসিনের গন্ধ ও লবণ হয়ে গিয়েছিল তাই খাওয়ার উপযুক্ত ছিল না।
তবে দুপুরে আপার বাড়ি থেকে কিছু খাবার পাঠিয়েছিল।
আমাদের ঘর,বাড়ি,গরু,ছাগল,সব জিনিসপত্র নিয়ে গিয়েছিল।
একটি কথা বলতে হয় পরের দিন দেখলাম কিছু মানুষ এতো লোভী হয়ে গেল মরা মানুষের স্বর্ণ বা টাকা থাকলে তা নিতে ব্যস্ত হয়ে গেছে।
কিছু লোক ছিল অন্যদের কাছ থেকে আসা জিনিসপত্র দখলে নিতে ব্যস্ত।
এতো লাশ দেখার পরও তাদের মনে মৃত্যুর ভয় আসেনি।
অনেকে আবার স্বজনদের হারিয়ে কান্নাকাটি করে শেষ হয়ে যাচ্ছে।
যাই হোক পরের দিন আমরা বাড়ির ছোট কয়েকজন চাম্বল চলে গিয়ে গোসল করে ছিলাম এবং কিছু দিন আপার বাড়িতে ছিলাম।
অনেক লাশ পানির সাথে ভেসে এসেছিল তার সাথে পুকুরের মিঠে পানির মাছ মরা ভাসতেছে।
কয়েকদিন পর আমাদের এলাকা লাশের গন্ধে ভারি হয়ে গিয়েছিল।
সেনাবাহিনী এসে এসব লাশ দাফন করতে শুরু করল।
এরপর শুরু হলো রিলিফ ও কার্ড নিয়ে টানাটানি।
এই রিলিফের কারণে এখনো কিছু অলস লোভী মানুষ সাহায্যের জন্য নেতা বা অফিসারের পিছনে পিছনে ঘুরে।
আজকে ঘূর্ণিঝড় হওয়ার ২৭ বছর হয়ে গেছে মানুষের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।
নতুন তরুনরা অনেকে জানে না সেই হারিকেন নামক ঘূর্ণঝড়ের কথা তাই জ্ঞাতার্থে পোস্ট করলাম।
(স্থান: পূর্ব বড়ঘোনা, বাঁশখালী,চট্টগ্রাম।)