
বৈশ্বিক দুর্যোগ করোনা ও বাংলাদেশের ঐতিহাসিক খাসলত
কাজী শাহরিয়ার: করোনার পর গোটা দুনিয়া পাল্টে যাবে, বদলাবেনা বাংলাদেশ। বিশাল অর্থনৈতিক চেঞ্জ আসবে বিশ্বজুড়ে। কোটি মানুষ চাকরি হারাবে৷ অজস্র কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাবে। আবার অসংখ্য নতুন ধারার বিজনেস প্ল্যান দেখবে বিশ্ব৷ মানসিকতা বদলে যাবে অবশ্যাম্ভাবী কারণে। বদলাবে না এই দেশের কালচার..
মানুষের না খেয়ে মরার জোগাড়, সেখানে চলছে সরকারি চাল চুরির মহোৎসব! ভাবা যায়? চাল পুঁতে ফেলেছে ঘরের মেঝেতে! একজন আমাকে বিস্ময়ে বলল, সরকারও আমাদের চাল ও আমাদের। এখানে চুরির কি হোল!
আমি আরো অবাক বিস্ময়ে বললাম, ‘আচ্ছা’
ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, ফ্রান্সের অত কান্ট্রি যখন ব্যতিব্যস্ত, রোগির চাইতে লাশ নিয়ে বিপাকে.. তখন আমাদের বি বাড়িয়ায় দুই গ্রামবাসীর মধ্যে ডজন দুয়েক দাঙ্গা হয়ে গেছে৷ গতকাল এদের একপক্ষ আরেকপক্ষের পা কেটে নিয়ে জয় বাংলা স্লোগানে আকাশ বাতাশ প্রকম্পিত করেছে।
করোনায় যখন ১৬৪ জন সনাক্ত, আমার দেশে তখন ২০৪ জন চাল চোর সনাক্ত! কেউ কেউ মন্তব্য করেছে, ‘অবশ্যই করোনার চাইতে চাল চোর শক্তিশালী’।
দুষ্টু ফেসবুকার রা এদের ‘পঙ্গপাল’র পরিবর্তে নাম দিয়েছে ‘বঙ্গপাল’!
পয়েন্ট টু বি নোটেড
করোনা রোগি হাসপাতাল বা আইসোলেশান থেকে পালানোর খবর পাওয়া গেছে! বাড়ির মালিক করোনা রোগিকে টাকা দিয়ে পালিয়ে যেতে হেল্প করেছে! লক ডাউনের বাহানায় পোলাপান রাস্তায় বাঁশ পুঁতে দিয়েছে৷ ক্রিকেট ফুটবলের হিড়িক পড়ে গেছে। এক চেয়ারম্যান ত্রাণগ্রহীতাদের হেনস্থা করেছে৷ এক কাউন্সিলরকে দেখা গেলো, ‘গরু পিটুনি পিটাচ্ছে পথচারীদের’। পরে অবশ্য নির্লজ্জের মত মাফ চেয়েছেন। করোনা সন্দেহে চিকিৎসা দেয়নি অনেক পেশাদার ডাক্তার! এদের বহিস্কার করতে হয়েছে! ভাবা যায়?
ত্রাণ লুট করেছে ক্ষুদার্ত মানুষ
অজানা কারণে লাখ লাখ পোশাকর্মীকে শহরে ফিরিয়ে এনে বলা হয়েছে, যান.. ছুটি! ব্যাংক গুলো খোলা রাখা হয়েছে অজানা কারণে! মাত্র ৫০০ টাকায় এয়ারপোর্টে ইতালি ফেরত প্রবাসীকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে কোয়ারেন্টাইন ছাড়াই! ৫টাকার মাস্ক ৩০ টাকা, ৭টাকার হ্যান্ড গ্লভস আমরা বিক্রি করে দেখিয়েছি ৩৫ টাকায়। আমরাই বোধয় একমাত্র ব্রেন করোনাক্রান্ত জাতি হয়ে থাকব যারা হেক্সিসল, স্যানিটাইজার বানিয়েছি পানিতে নীল রঙ মিশিয়ে! য়্যুজ করা সার্জিক্যাল মাস্ক ধুয়ে ইস্তরি করে বিক্রি করেছি একমাত্র আমরাই!
এগুলো দৈন্যতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পেরেছে।
করোনা রোগির লাশের জন্যে খাটিয়া দিতে অস্বীকার করেছে মসজিদ কর্তৃপক্ষ! কবর দিতে বাঁধা দিয়েছে ‘আপকামিং কিছু কবরবাসী’! একই সাথে ‘লকডাউনে’ থাকা বাড়ি দেখতে ভীড় জমিয়েছে উৎসুক জনতা!
সব মিলিয়ে বিস্ময়কর সবধরণের ঘটনার জন্ম দিয়েছি আমরা৷ আগামী একদশক করোনার ভ্যাকসিন আবিস্কার গবেষণার চাইতে এসব বিষয় নিয়ে গবেষণা করবে বিশ্বের অনেক সংস্থার সায়েন্টিস্টরা।
বোধের জাগরণ হোক, ক্রান্তকাল শেষ হবার আগেই।
ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন।
লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক