বেদনার বর্ণমালা
মো. জসিম উদ্দীন
মাগো,
তোমার অশ্রুতে ভেসে যাচ্ছে আমার বুকের জমিন,
তোমার হাহাকারে কাঁপছে আকাশ বাতাস।
বুকের পাঁজর ভেদ করে ঢুকেছে
হায়েনার কয়েকটি বুলেট।
তার জন্যই কি তোমার এতো কষ্ট?
তুমি কি ভুলে গেছো-
এই বুকে গেঁথে নিয়েছি
আল কুরআনের ৬৬৬৬টি আয়াত।
মাগো, তুমি তো জানো-
কত নির্ঘুম রজনীর ক্লান্তিহীন সাধনায়,
সহস্র সুবেহ সাদিকের শীতল হাওয়ায়,
বন্দী করেছি হৃদয়ের সিপাহশালায়,
মহান স্রষ্টার অমিয় গ্রন্থখানি।
মাগো, খুব ইচ্ছে হত তোমার কাছে ছুটে যাই,
পরম মমতায় তোমার আঁচলে মুখ লুকাই,
তোমার বুকের ভিতরে একটু ঘুমাই।
কিন্তু হায়!
তোমার স্বপ্নাতুর চোখ আমাকে বেঁধে রাখত
সেই হাফিজিয়া মাদ্রাসায়।
সেখানে আমার বুকে বাঁধা থাকত ১১৪টি সুরা।
তোমার আঁচল হয়ে থাকতো কুরআনের জুজদান।
যে পবিত্র মাসে এসেছিল স্রষ্টার অমিয় বানী,
তারাবীর পর হায়েনার বুলেটে ঝাঁজরা
হয়ে গেছে আটাশ ইঞ্চি বুকের জমিন।
রাত্রির প্রথম প্রহরে
আবছা আলো আঁধারিতে
হারিয়ে যাচ্ছিল আমার চোখের আলো।
মাগো তখন তোমায় ভীষণ মনে পড়ছিল।
তুমি আবার কাঁদছো মা?
যে বুকে ধারণ করেছি ৩২০২৬৭ হরফ।
সামান্য ক’টা বুলেট থাকুক না যতনে।
ওরা যখন আমাকে সাদা জুজদান পেঁচিয়ে রেখে দিল
সাড়ে তিন হাত মাটির পাঁজরে
তখনো আমার ভেতর শুধু একটাই কষ্ট
তোমাকে এক নজর দেখতে না পারার ভীষণ কষ্ট
তোমার মানিক এখন জান্নাতের পাখি।
তুমি তাদের ক্ষমা করে দিও।
(শহীদ হাফেজ খালেদ ও শহীদ হাফেজ ইব্রাহীম স্মরণে)
লেখক: অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, বাংলাদেশ পুলিশ