বাঁশখালী টাইমসঃ দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বেও বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন বাঁঁশখালীর সন্তানেরা। নিজ মেধা, পরিশ্রম ও নেতৃত্ব দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে বাঁশখালীকে তাঁরা পৌঁছে দিচ্ছেন গৌরবের অনন্য উচ্চতায়। ঠিক এমনই একজন আলোকিত ব্যক্তিত্ব গোলাম কিবরিয়া। প্রচন্ড প্রচারবিমুখ এই তরুণ ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন সফলতার সাথে।
সম্প্রতি রাশিয়ার অরেনবার্গ শহরে অনুষ্ঠিত The International Youth Forum “Eurasia Global 2019” বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন জাতিসংঘের টেলিকমিউনিকেশান্স ও প্রযুক্তি বিষয়ক সংস্থা International Telecommunication Union (ITU)’র সাবেক এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলিক যুব উপদেষ্টা, Center for Inclusive Governance (CIG)’র বর্তমান বৈশ্বিক ফেলো, বাঁশখালীর তরুণ ও প্রতিশ্রুতিশীল উন্নয়ন কর্মী গোলাম কিবরিয়া।
রাশিয়া সরকারের যুব সংক্রান্ত মন্ত্রনালয় এবং রাশিয়ান মিনিস্ট্রি অফ ফরেইন এফেয়ার্সের আমন্ত্রণে দশ দিন ব্যাপি এ প্রোগ্রামে তারা বৈশ্বিক বিভিন্ন উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান, চলমান আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি এবং সরকারের গৃহিত নানা পদক্ষেপের কথা রাশিয়ার শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রী, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং প্রায় ১০৮ টি দেশ থেকে যোগ দেওয়া তরুণ নেতৃবৃন্দদের সামনে তুলে ধরেন। মূলত পরবর্তী প্রজন্মের নেতৃত্ব তৈরি, উন্নয়ন অংশীদারিত্ব, প্রযুক্তিগত মেলবন্ধন, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং জাতিসংঘের বেধে দেওয়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা Sustainable Development Goals (SDG’s) নিয়েই এখানে বিভিন্ন প্লেনারি সেশান, ওয়ার্কশপ, ফিল্ডওয়ার্ক এবং থিমেটিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, Eurasia Global 2019 ফোরামটি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রত্যক্ষ নির্দেশনা এবং তত্বাবধানে অনুষ্ঠিত রাশিয়ার শীর্ষ চারটি ফোরামের একটি যেখানে প্রায় ৫০০ বিদেশি এবং ৩০০ স্থানীয় নেতৃত্ব অংশগ্রহণ করার সু্যোগ পান।
জাতিসংঘ প্রণীত এসডিজির অন্যতম প্রমোটার, বিশিষ্ট উন্নয়নকর্মী গোলাম কিবরিয়া বাঁশখালীর পুইছড়ী ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পুইছড়ি ইজ্জতিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি ও ঢাকা বিশবিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে বিবিএ এবং এমবিএ ডিগ্রী অর্জন করেন।
তিনি ২০১২ সালে ইন্দোনেশিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট শুসিলো বাম্বাং ইধূয়োনোর আমন্ত্রণে বিশ্ব যুব সম্মেলনে যোগদান করে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। ২০১৪ সালে জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে বার্লিনে ১১তম বিশ্ব উন্নয়ন এবং পপুলেশান সংলাপে অংশগ্রহন করার পাশাপাশি জাতিসংঘের অন্যতম সংস্থা UNFPA’র Special Rapporteur হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। একই বছর তিনি জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা UNEP’র আমন্ত্রণে কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে আয়োজিত UNEP CSO Asia Pacific Consultation 2014 ফোরামে বাংলাদেশে অংশগ্রহণের পাশাপাশি Special Rapporteur হিসেবে আবারো সক্রিয়া ভূমিকা পালন করেন। ২০১৫ সালে তিনি ফিলিপাইন সরকার এবং জাতিসংঘের শিক্ষা এবং সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা UNESCO’র আমন্ত্রনে ম্যানিলাতে অনুষ্ঠিত UNESCO Asia Pacific Expert Meeting on CCESD ফোরামে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশের জলবায়ু এবং পরিবেশগত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জসমূহ বিশ্ব নেতৃত্ববৃন্দদের সামনে তুলে ধরেন। এছাড়াও তিনি দক্ষিন কোরিয়া, থাইল্যান্ড, মালেশিয়া, কোস্টারিকা, ব্রাজিল, সুইডেন, কেনিয়া, সিংগাপুর, নেদারল্যান্ড এবং ডেনমার্ক সরকারের আমন্ত্রনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ফোরামে দক্ষতার সাথে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।
গোলাম কিবরিয়া ২০০৮ সাল থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অনেক দেশের সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে নানা সম্মানজনক পুরস্কার লাভ করেন। তার সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানা যাবে তার লিঙ্কডিন একাউন্টে। https://www.linkedin.com/in/fantasypothik
বাঁশখালী টাইমসের সাথে আলাপকালে গোলাম কিবরিয়া বলেন- ‘দেশের জন্য অনেকভাবেই কাজ করা যায়। আমি এ কাজটাই বেছে নিলাম যাতে বিশ্ব দরবারে দেশের প্রকৃত অবস্থাটা তুলে ধরতে পারি, ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে পারি। এসডিজির অংশীদার হিসেবে নাগরিক হিসেবে সকলের উচিৎ দেশের উন্নয়নে যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসা। জাতিসংঘের বেধে দেওয়া ১৭ টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি বাস্তবায়নে তরুণদের সম্পৃক্ত করে জাতীয় পর্যায়ে গণসচেতনতা তৈরি এখন সময়ের দাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেহেতু পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৪৩% তরুণ, সূতরাং রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে তরুণদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে হবে এবং সেটা নিশ্চিত করতে সরকারকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি নানা শ্রেনী পেশার মানুষের দাবীসমূহ গোচরে নিয়ে জাতীয় কৌশলপত্র প্রনয়ণ করতে হবে।’
তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন- ‘শুধু প্রথাগত শিক্ষা দিয়ে এখন আর প্রত্যাশিত ক্যারিয়ার গঠন সম্ভব নয়। নতুন নতুন প্রযুক্তিগত দক্ষতা (যেমন- কোডিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি, ইন্টারনেট অফ থিংস) সম্পর্কে জানার পাশাপাশি নিজের মধ্যকার উদ্যোক্তা সত্ত্বাকে প্রকাশ হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। এখন ইউডেমি, কোর্সেরা এবং স্টেক সোস্যালের মতো সাইটগুলো থেকে বিভিন্ন কোর্স ও বিষয়ে দক্ষ হওয়া সম্ভব এবং একারণে তিনি সবাইকে আরো সময়োপযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন।
তিনি ২০১৭ সাল থেকে ইউরোমনিটর ইন্টারন্যাশনালের ইন-কান্ট্রি রিসার্চ এনালিস্ট, ২০১৬ সাল থেকে ইয়ুথ এলায়েন্স ইন্টারন্যাশনালের কো- ফাউন্ডার ও ২০১৬ সাল থেকে ওমেন ডেলিভারের গ্লোবাল ইয়ুথ স্কলার হিসেবে কর্মরত আছেন।