বিপিএলে চিটাগং ভাইকিংসের শুভসূচনা

ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে খেলতে নেমে প্রথম ম্যাচে হারটা যেন বিপিএলের গত কয়েক মৌসুমে নিয়মে পরিণত হয়েছে! ২০১৫ সালের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স পরের আসরের প্রথম ম্যাচেই হেরেছিল। ২০১৬ সালের চ্যাম্পিয়ন ঢাকা ডায়নামাইটস হার সঙ্গী করে গত আসরের প্রথম ম্যাচে। এবার একই ভাগ্য বরণ করতে হলো গত আসরের চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডার্সকেও। ষষ্ঠ আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে মাশরাফি বিন মুর্তজার দলকে হারিয়ে শুভ সূচনা করেছে চিটাগং ভাইকিংস।

BanshkhaliTimes

মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে শনিবার লো স্কোরিং ম্যাচে রংপুরকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে চিটাগং। আগে ব্যাট করতে নেমে ১৯.৫ ওভারে ৯৮ রানে অলআউট হয়েছিল রংপুর। চিটাগং সেটি পেরিয়ে গেছে পাঁচ বল বাকি থাকতে।

১২ ম্যাচে আট হারে পয়েন্ট টেবিলে সাত দলের মধ্যে সবার নিচে থেকে বিপিএলের গত আসর শেষ করেছিল চিটাগং। এবারের আসরে নতুন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের হাত ধরে শুরুটা দুর্দান্ত হলো তাদের।

এক মৌসুম পর বিপিএলে অধিনায়কত্বে ফেরার ম্যাচে টস জিতে রংপুরকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন চিটাগং অধিনায়ক মুশফিক। ব্যাটিংয়ে রংপুরের শুরুটা হয় দুঃস্বপ্নের মতো। দ্বিতীয় ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার রবি ফ্রাইলিঙ্কের তিন বলের মধ্যে সাজঘরের পথ ধরেন ওপেনার অ্যালেক্স হেলস ও মোহাম্মদ মিথুন। হেলস হয়েছেন এলবিডব্লিউ। তিনে নামা মিথুন ব্যাট ও প্যাডের ফাঁক গলে বোল্ড। দুজনের কেউই রানের খাতা খুলতে পারেননি।

ফ্রাইলিঙ্কের পরের ওভারে ফেরেন আরেক ওপেনার মেহেদী মারুফও। ফ্লিক করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন ১০ বলে ১ রান করা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। এর আগের ওভারে আবু জায়েদ রাহীর বলে উইকেটকিপারকে ক্যাচ প্র্যাকটিস করিয়ে ফেরেন রাইলো রুশোও। তখন ১৪ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে রংপুর।

সেই বিপদ আরো বাড়ান বিনি হোয়েল, ফরহাদ রেজা। অফ স্পিনার নাঈম হাসানকে সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ দেন হোয়েল। ফরহাদ হয়েছেন এলবিডব্লিউ। এরপর অধিনায়ক মাশরাফি খালেদ আহমেদের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলে রংপুরের স্কোর হয়ে যায় ৭ উইকেট ৩৫! বিপিএলের সর্বনিম্ন স্কোরের নতুন রেকর্ড হয় কি না, সেই আলোচনাই চলছিল তখন। ২০১৬ সালের আসরে এই রংপুরের বিপক্ষে ৪৪ রানে অলআউট হয়েছিল খুলনা টাইটান্স।

রংপুরকে আজ লজ্জা থেকে বাঁচিয়েছেন রবি বোপারা। অষ্টম উইকেটে তিনি সোহাগ গাজীর সঙ্গে গড়েন ৪৯ রানের জুটি। দলের স্কোর একশ পার হবে বলেও মনে হচ্ছিল একটা সময়। কিন্তু এ জুটি ভাঙার পর আর বেশিদূর এগোয়নি রংপুরের স্কোর। ১৪ রানে শেষ ৩ উইকেট হারিয়ে এক বল বাকি থাকতে ৯৮ রানেই অলআউট হয়ে যায় তারা।

৪৭ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৪৪ রান করেন বোপারা। ১৭ বলে ৩ চারে ২১ রান সোহাগ গাজীর। এই দুজন ছাড়া আর কেউই দুই অঙ্কে যেতে পারেননি। ১৪ রানে ৪ উইকেট নিয়ে চিটাগংয়ের সেরা বোলার ফ্রাইলিঙ্ক। খালেদ ও জায়েদ নেন ২টি করে উইকেট।

ছোট লক্ষ্য তাড়ায় চিটাগংয়ের শুরুটা ভালো হয়নি। তৃতীয় ওভারেই ফিরে যান ক্যামেরন ডেলপোর্ট। মাশরাফিকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলতে গিয়ে মিড অফে সহজ ক্যাচ দেন ৮ রান করা দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে পাঁচ বছর পর বিপিএলে ফেরার শুরুটা রাঙাতে পারেননি মোহাম্মদ আশরাফুল। ডানহাতি ব্যাটসম্যান ৩ রানে শফিউল ইসলামকে ফ্লিক করতে গিয়ে টপ এজ হয়ে ধরা পড়েন থার্ডম্যানে।

১৯ রানে ২ উইকেট হারানোর পর দলকে ৫১ পর্যন্ত টেনে নেন মোহাম্মদ শাহজাদ ও অধিনায়ক মুশফিক।২৩ বলে ২৭ রান করা শাহজাদকে এলবিডব্লিউ করে ৩২ রানের এ জুটি ভাঙেন হোয়েল।রিভিউ নিয়েও রক্ষা হয়নি আফগান ব্যাটসম্যানের।

এরপর দ্রতই সিকান্দার রাজা ও মোসাদ্দেক হোসেনের উইকেট হারায় চিটাগং। মুশফিকের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউটে কাটা পড়েন রাজা। ফরহাদ রেজাকে সুইপ করতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ তোলেন মোসাদ্দেক। তখন ৬২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে চিটাগং।

জয় থেকে ২২ রান দূরে থাকতে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরেন নাঈম হাসান। মাশরাফিকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলতে গিয়ে বলের লাইন মিস করে বোল্ড ১০ রান করা নাঈম। পরের ওভারে মুশফিকও ফিরলে দারুণ জমে ওঠে ম্যাচ। নাজমুল ইসলাম অপুকে সুইপ করতে গিয়ে টপ এজ হয়ে ক্যাচ দেন চিটাগং অধিনায়ক (৩১ বলে ২৫)।

শেষ তিন ওভারে ১৩ ও দুই ওভারে ১০ রান দরকার ছিল চিটাগংয়ের। তবে শেষ ওভারে সেটিকে ২ রানে নামিয়ে আনেন ফ্রাইলিঙ্ক ও সানজামুল। শেষ ওভারে শফিউলের প্রথম বলেই এক্সট্রা কাভার গিয়ে চার হাঁকিয়ে জয়ের বাকি আনুষ্ঠানিকতা সারেন ফ্রাইলিঙ্ক। ব্যাটিংয়ে অপরাজিত ১২ রানের আগে হাত ঘুরিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কারটা উঠেছে তার হাতেই।

Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *