বিধাতার প্রতি খোলা চিঠি || সালসাবিলা

বিধাতার প্রতি খোলা চিঠি || সালসাবিলা

প্রিয় বিধাতা,
তোমাকে চিঠি লেখার কিছু নেই। তুমি সবই জানো, সর্বজ্ঞানী। মনের মাঝে উথাল-পাথাল ঢেউ অথবা স্থবিরতা সবই তুমি বোঝ। তোমাকে আলাদা করে বলার কিছু নেই। তারপরও চিঠি লিখছি। সব আজ একসাথে বলতে চাই বলে। আমি বিশ্বাস করি প্রতিটা লাইন লেখার আগে আগেই তোমার অলৌকিক ক্ষমতায় বুঝে নিচ্ছ আমি কী বলতে চাইছি। তারপরও লেখা থামাবো না যতক্ষণ না মন শান্ত হয়। হ্যা, আমি লিখছি নিজের মনের শান্তির জন্য। তুমি তো জানো, লিখতে আমি কতটা ভালোবাসি।

বিধাতা, তুমি জানো সব সময়ই জিজ্ঞেস করি তোমাকে ‘কেন আমাকে সৃষ্টি করেছো, কেন অন্য মানুষদের সৃষ্টি করেছো।’ উত্তরটা আমি জানি। জানিয়েছে আমার বাবা-মা, আমার শিক্ষক আর বিজ্ঞ বড় জনেরা। তারপরও এই প্রশ্নটা করি যখন মানুষের কষ্ট দেখে আর সহ্য হয় না। প্রত্যেকটা মানুষই কষ্টে আছে। নিজের কষ্ট নিয়ে হা হুতাশ করার সময় পাই না, তুমি জানো। অন্যদের দুঃখ কষ্টে আমি নিজের দুঃখ বাড়াই। আমার দেখা সবচেয়ে ভালো মানুষটা যে সারাজীবন শুধু অন্যের উপকার করে গেছে, কতো ছেলেকে লেখাপড়া করিয়ে মানুষ করেছে, কতো পরিবারকে ধংস হওয়া থেকে বাঁচিয়েছে তাকে তুমি বর্ণনাতীত কষ্ট দিচ্ছ। তাকে দেখে কতো খারাপ লাগে! সে এই কষ্টগুলো পাওয়ার যোগ্য না। কিন্তু তুমিই ভালো জানো কেন তাকে দুঃখের সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছো। তুমিই জানো তাকে কখন আবার উদ্ধার করবে।

আরও কতো মানুষ! দেখলে মনে হয় খুব সুখী। অথচ কারো অর্থ নেই, কারো বড় কোন রোগ হয়েছে, কেউ সন্তানের সুখ পাচ্ছে না, কেউ দাম্পত্য জটিলতায়। কেউ সুখী নয়, কেউই নই। আমি অনেক খুঁজেছি একটা সুখী মানুষ পাইনি।
বিধাতা, কেন তুমি সবাইকে সুখী করলে না?

আমার খুব ইচ্ছে করে নিজের হাতে সবকিছু সাজাই। চাকরিহীনকে চাকরি দিই, অসুস্থকে সুস্থ করে তুলি, সবাইকে সুখী করি। কিন্তু এটা আমি পারব না। কারণ আমি নগন্য একজন মানুষ। অন্য সবার মতই তোমারই সৃষ্টি। আমার করার কিছুই নেই। তবে কেন অন্যদের দেখে মন খারাপ করি? যদি আমি শুধু নিজেকে নিয়ে বিভোর থাকতে পারতাম! মাঝে মাঝে মনে হয় আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। আমার তো অন্যদের নিয়ে ভেবে নিজের ক্ষতি করার কোন দরকার নেই। তারপরও কেন করি? নিজেকে খুবই অসহায় মনে হয় যখন অন্যদের জন্য আমি কিছুই করতে পারি না। আমার চোখের সামনে সুন্দর একটা পরিবার ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে, আমি কিছুই করতে পারিনি। নিজের যন্ত্রণা লুকিয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে দিন যাপন করছে কেউ, আমি শুধু চেয়ে থেকেছি। অর্থের অভাবে প্রয়োজন মেটাতে পারছে না অনেকে, আমার সামর্থ্য নেই তাদের সাহায্য করার। এতো এতো ব্যর্থতা নিয়ে কি বেঁচে থাকা যায়?

হে, বিধাতা, আমাকে অন্যের দুঃখ দূর করার ক্ষমতা তুমি নাইবা দিলে সহ্য করার ক্ষমতাটুকু অন্তত দাও। আমার মনটাকে আরেকটু শক্ত করে দাও। ভেবে ভেবে অসুস্থ হয়ে গেলে আমার পরিবারের কী হবে? আমার ওপর তো দায়িত্ব কম নয়। আমার চারপাশে যা কিছু এলোমেলো, অগোছালো তুমি সব গুছিয়ে দাও। সবার জীবন সাজিয়ে দাও। যার যেটা অভাব তাকে সেটা দিয়ে দাও। সবাইকে সব দিলেও তোমার ভান্ডার অফুরন্তই থেকে যাবে।

আমি জানি আমার মতো এই প্রার্থনাগুলো পৃথিবীর সব মানুষ করলেও তুমি সেটাই করবে যেটা সর্বোত্তম। কাউকে দুঃখ দিলেও তার পেছনে তোমার কোন উদ্দ্যেশ্য থাকে। তাই সব সময় বিশ্বাস করে গেছি, তুমি যা করো ভালোর জন্যই করো। কিন্তু জানো, এই কথাটা এক সময় আমার জীবনের মূলমন্ত্র ছিল অথচ এখন আর কথাটাতে শক্তি পাই না। তাই বলছি, দয়া করে আমার মনকে শক্ত করে দাও। যাতে কারও দুঃখ আমাকে স্পর্শ না করে। স্পর্শ করলেও যাতে দূর্বল করতে না পারে। আমার এই অনুরোধটা কি তুমি রাখবে না?

ইতি
তোমার এক অসহায় বান্দা
সালসাবিলা

Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *