BanshkhaliTimes

বাবার জন্য দোয়া ছাড়া আর কিছুই করার সৌভাগ্য হলো না

BanshkhaliTimesবাবার জন্য দোয়া ছাড়া আর কিছুই করার সৌভাগ্য হলো না

আমজাদুল আলম মুরাদ: ২৬ ডিসেম্বর ২০১০, চট্টগ্রামের মোমিনবাগ আবাসিক এলাকায় থাকতাম। ঢাকায় একটা গুরুত্বপূর্ণ অনলাইন পরীক্ষা ছিলো। বাবার অসুস্থতার কথা চিন্তা করেই যাব কি যাবনা ভাবছিলাম। যেতে ইচ্ছেও হচ্ছিলনা। মায়ের কাছ থেকে আমার পরীক্ষার কথা শুনে বাবাই আমাকে ডেকে বললেন- ‘এসব প্রফেশনাল কোর্স বা পরীক্ষাকে অবহেলা করিসনা। অনেক সময় দেখবি- এটা ক্যারিয়ারে গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগবে। আমি এখন ভালো আছি! তুই যা। পরীক্ষা দিয়ে আয়। আমার সব সন্তানদের জন্য আমি অনেক অনেক দোয়া করে যাচ্ছি। আর তোরা যারা এখনও ছোট-নিজে ইনকাম করা শুরু করিসনি..তাদের জন্যতো আরো অনেক বেশি দোয়া করছি। তবে তোদেরকেও প্রতিষ্ঠিত দেখে যেতে পারলে আরো শান্তি লাগতো’ কথাগুলো বাবা এমনভাবে বলছিলো- আমার কেন জানি- আর যেতেই ইচ্ছে হচ্ছিলনা। পরে আমার মা আবারো যেতে বললে রাত দশটার দিকে পরেরদিনের পরীক্ষার জন্য ঢাকার উদ্দেশ্যে বের হই। বাবাকে সালাম করে-বাসা থেকে বের হয়ে সিএনজি ট্যাক্সি নিয়ে রেলস্টেশন এর উদ্দেশ্যে বড়জোর ২০মিনিট পর্যন্ত আসতেই আমার ইমেডিয়েট বড় ফরহাদ ভাইয়ের ফোন আসলো ‘মুরাদ তুই আর যাস না। যেখানে আছিস সেখান থেকে ফিরে আয়।’ অনেক সংশয় আর নানান আশংকা নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাসায় ফিরে আসার এই ২০ মিনিট কেমন লাগছিলো তা শুধু আল্লাহই জানেন। বাসায় এসে দেখি- বাবাকে শোয়া অবস্থায় ধরে আমার মা, ফরহাদ ভাই আর ছোট ভাই সৌরভ বসে আছে। ওরা সহ বাকিদের কান্নাকাটি দেখে বুঝে গেছি- যা ভয় করেছিলাম- তাই হয়ে গিয়েছে। তবে এতো তাড়াতাড়ি হবে তা একটুও বুঝতে পারিনি। আমার বাবা…যে বাবা আমাদেরকে অনেকটা স্বার্থপরের মতোই ভালবাসতো …যেই বাবা আমাদের ছয় ভাই আর তিনবোন সবাইকে প্রতিষ্ঠিত করতে পৈত্রিক আর্থিক সম্পত্তি দিয়ে আরাম আয়েশের চিন্তা না করে শুধুমাত্র আমাদের সবাই ভবিষ্যতে ভালো থাকার জন্যই সরকারী চাকুরী করে পরিশ্রম করে গেছেন। আমাদের প্রতিষ্ঠিত করতে আজীবন চেষ্টা করে গিয়েছেন- সেই বাবা আজ আর আমাদের মাঝে নেই। কিছুক্ষণ আগেই আমার বাবা পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন। বাবাকে শেষ বিদায় বেলা দেখাটা আমার হলোনা!!

তখন বুঝতে পারলাম- বাবা কেনো কিছুদিন আগেও বার বার বাড়ী যেতে চেয়েছিলেন! বাবা আমাদের গ্রামের লোকদের খুব ভালবাসতেন। তাই হয়তো শেষ বিদায়ের সময়ও বাড়িতেই থাকতে চেয়েছিলেন। প্রচন্ড শীতের ভয়ে অসুস্থতার কথা চিন্তা করে রাজি হইনি। ভাবতে এতো খারাপ লাগছিলো- এই বাবার ভালো লাগার জন্য তেমন কিছুই করতে পারলামনা। কাছে কাছে ছিলাম এটাই শান্তি। আমার বড় ভাই, মেজ ভাই, সেজ ভাইরা আব্বার চিকিৎসার সময় কিংবা আরো অধিক সন্তুষ্টি থাকার জন্য সর্বোচ্চটাই করতে পেরেছেন। এমনকি আমার বড় আপা, মেজ আপা-যে এখন স্কুলের শিক্ষিক-সেজ আপা-যে এখন কলেজের লেকচারার সেই সহ সব ভাবীরা- এমনকি সব কাজিনরা- সবাই যার যার মতো সেরাটাই করে গেছেন কিন্তু আমরা ছোট যারা ছিলাম-তারা তখন থেকে এখনো আব্বার জন্য দোয়া করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারলামনা। সেই সৌভাগ্য আমাদের হলোনা। আর আমার মা…যিনি বাবার সেবায় মাসের পর মাস কত রাত কিংবা কিভাবে বিনিদ্র রাত জেগে কি পরিমান কষ্ট করেছেন তা ভাষায় প্রকাশ করা কখনোই সম্ভব হবেনা। আল্লাহর রহমতে বড় ভাই অধ্যক্ষ আ,ন,ম সরোয়ার আলম এখন চট্টগ্রামের অন্যতম বৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ওমরগনি এমইএস কলেজের অধ্যক্ষ, মেজ ভাই এডভোকেট আ,ন,ম শাহাদাত আলম এডিশনাল পাবলিক প্রসিকিউটর এবং ইউপি চেয়ারম্যান, সেজ ভাই আ,ন,ম অহিদুল আলম যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ একটি প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র সিস্টেম এনালিষ্ট, ফরহাদ ভাই আর সৌরভও এডভোকেট হওয়ার দ্বারপ্রান্তে আর আমিও একটি বেসরকারী ব্যাংকে ভালো চাকরী করছি। বাবা যদি বেঁচে থাকতেন -না জানি কতোটা খুশি হতেন!বকতোটা দোয়া আর শোকরিয়া করতেন। অবশ্যই গর্ববোধ করি এবং আল্লাহর কাছে শোকরিয়া করি- এমন বাবা আর এমন পরিবারের সন্তান হওয়ায়।

আল্লাহ যেনো বাবাকে বেহেশত নসীব করেন। আর সব সন্তানদের যেনো বাবাদের সেবা করার, এই সৌভাগ্য কাজে লাগানোর সুন্দর মানসিকতা দান করেন।যেখানেই থাকুক-ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক সব বাবারা।
আমজাদুল আলম মুরাদ-

লেখক:
সিনিয়র অফিসার -ডাটাবেজ এডমিনিস্ট্রেটর, আইসিটি ভিভিশন, প্রধান কার্যালয়
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক, ঢাকা

Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *