মু. মিজান বিন তাহের, বাঁশখালী টাইমস: চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার কাথরিয়া ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের বাগমারা (টোনাইয়ার বাড়ী) নামক এলাকায় গত (৩ জুন) বুধবার সন্ধ্যায় অতি উৎসাহী কিছু যুবক একটি মেছোবাঘ পিটিয়ে হত্যা করে।
স্থানীয় ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বেশ কিছুদিন ধরে এই প্রাণী প্রায় ৯টি মত ছাগল হত্যা করেছে। লোকালয়ে ঢুকে বাড়ির মুরগি ও ছাগলের বাচ্চা খেয়ে পেলে বাঘটি। বুধবার সন্ধ্যায় আলিকদার ভিটা কবর স্থানের একটি গাছের উপর বাঘটি অবস্থান করতে দেখে গাছের নিচে কুকুরদের ঘেউ ঘেউ শব্দ শুনে এলাকাবাসীরা এগিয়ে যায়, পরবর্তীতে স্থানীয়রা বাঘটি গাছের উপরে বসে থাকতে দেখে শত শত নারী- পুরুষ জড়ো হতে থাকে। একপযার্য়ে চতুর্দিক থেকে প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ জড়ো হয়ে যায়। পরবর্তীতে বাঘটি গাছ থেকে লাফ দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় পূর্ব বাগমারা ৪,৭ ও ৩ নং ওয়ার্ডের মাথায় তাকে পিটিয়ে হত্যা করে এলাকাবাসীরা। এ সময় কয়েকজন যুবক মিলে সেটিকে ধাওয়া করে ধরে এবং এলোপাতাড়ি পিটিয়ে হত্যা করে। পরে স্থানীয় কয়েকজন যুবক অতি উৎসাহী হয়ে বাঘটিকে তারা কাঁধে তুলে বীর পুরুষ সেজে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপলোড দেয়। তারা বাঘটিকে পার্শ্ববতী খোলা জায়গায় গর্ত করে রাতেই পুতে ফেলে। কাথরিয়া ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ রমিজ আহমদ জানান, বিগত ১ মাস যাবত আমাদের গ্রামে প্রায় ৯ টি মত ছাগলকে হত্যা করেছে বাঘটি। ঘটনার একদিন আগে মঙ্লবার স্থানীয় বদি আহমদের পুত্র মোঃ জাহাঙ্গীর (৩৫) কে পাঁয়ে আছড় দিয়ে আক্রমণ করে পালিয়ে যায় মেছো বাঘটি।
এ ব্যাপারে জলদী অভয়ারণ্য রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা ও বাঁশখালী ইকোপার্কে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুজ্জান শেখ বলেন, তারা বাঘটিকে হত্যা করে আনন্দ উল্লাস করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছবি আপলোড দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকে আমাদেরকে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ ঢাকা অফিস থেকে জানানোর পর বনবিভাগের পক্ষ থেকে ৩ সদস্য একটি টিম ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছিলাম। তারা মেছোবাঘটি গর্ত থেকে তুলে উচ্চতা এবং বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে।
তিনি আরো বলেন, মেছোবাঘটি “(Fishing Cat) মূলত এক ধরনের বিড়াল। প্রাণীটি মানুষকে আক্রমণ করে না।
বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই এই প্রাণীটির বিচরণ রয়েছে। তবে জলাভূমি রয়েছে এমন এলাকায় বেশি দেখা যায়। মাছ, ব্যাঙ, কাঁকড়া, ইঁদুর, পাখি ইত্যাদি খায়। তবে কখনো কখনো হাঁস-মুরগিও ধরতে পারে। জনবসতি স্থাপন, বন ও জলাভূমি ধ্বংস, পিটিয়ে হত্যা ইত্যাদি কারণে বিগত কয়েক দশকে এই প্রাণীটির সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “২০০৮ সালে মেছো বাঘকে বিপন্ন প্রাণী প্রজাতির তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করেছে আইইউসিএন। তাছাড়া বন্যপ্রাণী আইন-২০১২ অনুযায়ী এই প্রজাতি সংরক্ষিত। তাই এই প্রাণীটি হত্যা বা এর কোনো ক্ষতি করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।” যে বা যারা বাঘটিকে হত্যা করে আবার ফেসবুকে আনন্দ উল্লাস করেছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক বনবিভাগের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি জানান।