মাতৃভাষা দিবস কাদের?
-মুহাম্মদ তাফহীমুল ইসলাম
সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত, শফিউরদের রক্ত, জীবনের বিনিময়ে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হওয়া বাংলা ভাষা কি আমাদের মাতৃভাষা? হ্যাঁ, আমাদের মাতৃভাষা। তবে তা মুখে, সত্যিকারার্থে বলে মনে হয় না। কেননা- বাংলা আমাদের মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও আমরা অন্য ভাষার তাবেদারীতে নিমগ্ন। বাংলাকে মাতৃভাষা করার জন্য যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রক্ত ঝরেছিল আজ সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাংলাকে বাদ দিয়ে কথা বলে ইংরেজী ভাষায়, হিন্দি ভাষায়। আজ ভাষা সংশ্লিষ্ট সমাজের প্রায় প্রত্যেকটি কাজে বাংলা ভাষা তথা মায়ের ভাষাকে অপমানিত করা হচ্ছে। যা কোন অবস্থাতেই মেনে নেওয়া যায় না। আসুন আমরা নিজের বিবেক দিয়ে নিচের কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর পেতে চেষ্টা করি-
০১- একুশে ফেব্রুয়ারি তারিখটি ইংরেজী মাসের। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি দিনটি ছিল বাংলা ফাল্গুন মাসের আট তারিখ। কিন্তু আমাদেরকে মাতৃভাষা দিবস তথা বাংলা ভাষা দিবস পালন করতে হয় ইংরেজী মাসের তারিখের হিসেবমতে। কিন্তু কেন?
০২- আমরা বেশি আর কম প্রায় সব শিক্ষার্থী চেষ্টা করি বন্ধুদের সাথে ইংরেজী ভাষায় কথা বলতে। পুরোপুরি না বললেও কথার মাঝে টেনে আনি ইংরেজী শব্দ। কিছু টাকা হলেই আমরা ছেলেমেয়েদের ভর্তি করিয়ে দিই ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে। এটাই কি মায়ের ভাষার প্রতি, ভাষা শহিদদের প্রতি আমাদের সম্মান?
০৩- সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে- বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দাওয়াতের চিঠি ছাপানো হচ্ছে ইংরেজী ভাষায়। যা দাওয়াতদাতা পড়তে অনেক সময় হিমশিম খায়। গতকাল চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এক আলোচনা সভায় চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেছেন- ‘আমি কিছুদিন ধরে কেউ ইংরেজী ভাষায় চিঠি দিলে চিঠি গ্রহণ করিনা। তবে অনুষ্ঠানের দিন ফোন দিয়ে জানালে অনুষ্ঠানে অংশ নিই। আজকে ঘোষনা দিচ্ছি- আগামীতে অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করবো না।’ আমাদেরও কি উচিত নয়- এমন অনুষ্ঠান বর্জন করা?
০৪- প্রত্যেক সচেতন ছাত্র অনলাইনে অভিজ্ঞ। প্রায় প্রত্যেকের আছে স্মার্টফোন। আছে ফেসবুক আইডি। কিন্তু অধিকাংশ ফেইসবুক আইডির নাম ইংরেজীতে। এটার মাধ্যমে কি বাংলা ভাষা প্রসার হচ্ছে। নিশ্চয় হচ্ছে না। তাহলে বাংলা ভাষা প্রচার, প্রসার করবে কারা?
০৫- আমরা মোবাইলে বিভিন্ন ধরনের মুভি, নাটক, ছবি দেখে থাকি। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে- তা ইংরেজী, হিন্দি। আমরা বাংলাকে মাতৃভাষা হিসেবে স্মীকৃতি দিয়ে যদি আমরা নিজেরাই অবহেলা করি তাহলে সম্মানিত করবে কারা?
০৬- শহরের অধিকাংশ নামীদামী হোটেল, রেস্টুরেন্টে দেখা যায় প্রবেশপথের সাইনবোর্ডটা ইংরেজীতে। অথচ ওখানে কোন বিদেশী আসে না। তাহলে ইংরেজী ব্যবহারের কারণ কি, প্রয়োজন কি?
আমরা নিজেরা নিজেদের বিবেকের কাছে উপরের প্রশ্নগুলোর উত্তর চাই। তাহলে সহজে আমরা বুঝতে পারবো- আমাদের সমস্যা। বাংলা ভাষাকে আমরা মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছি। আমাদের ভাইরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলেছে, জীবন দিয়ে শহিদ হয়েছে। এমনটা নজির বিশ্বের বুকে আর নেই। যার ফলে জাতিসংঘ আমাদের ভাষা দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্মীকৃতি দিয়েছে। এটি আমাদের জন্য অনেক বেশি গৌরবের। কিন্তু আমরা নিজেরা যদি বাংলা ভাষার প্রতি অবহেলা করি তাহলে কারা সম্মান জানাবে আমাদের মায়ের ভাষার প্রতি। প্রশ্ন উঠবে- মাতৃভাষা দিবস কাদের?