DBF- ডি.বি.এফ (Dream of a Better Future)
♦️একটি সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন কে না দেখতে চায়?
🎴DBF এর পথচলা মূলত ভবিষ্যতের সেই সুন্দর স্বপ্ন দেখানোর প্রত্যয়ে।
বাঁশখালীর প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া কতিপয় শিক্ষার্থীর হাত ধরে ২০১৮ সালের ২৫ এ এপ্রিল থেকে পরিচালিত হয়ে আসছে ডি.বি.এফ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম। আজ এটির তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এর উদ্দেশ্য পিছিয়ে পড়া গ্রামের শিক্ষার্থীদের সঠিক তথ্য, অনুপ্রেরণা, ও কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় মূখী করে গড়ে তোলা। এবং গ্রামের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার পথে অন্তরায়সমূহ চিহ্নিত করে সমাধানের উপায় বাতলে দেওয়া। বর্তমানে ডিবিএফ এর “ফ্রী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং-২০২০” চলমান রয়েছে। যেখানে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী ক্লাস করেছে ও পরীক্ষা দিচ্ছে।
কথা বলছি- আমি দিলুয়ারা আক্তার ভাবনা। প্রধান কার্যনির্বাহী ও অবৈতনিক শিক্ষিকা, ডিবিএফ।
আমি একজন গ্রামের কলেজের শিক্ষার্থী। বাঁশখালী আলাওল কলেজের শিক্ষার্থী থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হতে আমাকে যে, যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হতে হয়েছে- সেসব সমস্যা যেন আমার পরবর্তী কারোর না হয় সেই ভাবনা থেকেই মূলত ডিবিএফ এর সাথে যুক্ত হওয়া। দেখা যায় যে, গ্রামের কলেজগুলো থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা নিতান্তই কম। মেয়ে তো প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু কেন?
এখানে প্রথম সমস্যা হচ্ছে, সঠিক তথ্যের অভাব। আমরা বেশিরভাগই জানি না পাবলিকে কেন পড়া উচিত। হয়তো বা, অনেকের সম্ভাবনা থাকার পরও স্বপ্ন দেখার পর্যন্ত সুযোগ হয় না তথ্য ও অনুপ্রেরণা না পাওয়ায়। দ্বিতীয়ত; সুযোগ সুবিধার অভাব। একজন মেধাবী শিক্ষার্থী হয়তো সবকিছু জানার পরও একটি সহযোগিতার, ভরসার হাত না পাওয়ায় লালিত স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যায়। তৃতীয়ত; আর্থিক সমস্যা। গ্রামের শিক্ষার্থীদের এই সমস্যা প্রকট ও মারাত্মক। শহরে গিয়ে কোচিং করতে না পারা মানে টাকার জন্য নিজের স্বপ্নকে গলা টিপে হত্যা করা।
আর, আমি মেয়ে হিসেবে মেয়েদের সমস্যা গুলো নিজে যেমন ফেস করেছি তেমনি খুব কাছ থেকে অনুভব করেছি। গ্রামের অধিকাংশ পরিবার মনে করেন মেয়েদের উচ্চশিক্ষিত হওয়ার দরকার নেই। আবার যারা স্বেচ্ছায় চায় কিংবা পরিবার বুঝে তাদের অনেকেই নিরাপত্তাহীনতার কথা ভেবে পিছিয়ে যায়। আর মেয়েকে শহরে কোচিং করতে পাঠানো টা বেশিরভাগ পরিবারের কাছে অস্বাভাবিকও বটে।
এই সমস্যা সমূহ থেকে অন্তত আমাদের বাঁশখালীকে বের করে আনার জন্যই আমাদের ছোট্ট এই পদক্ষেপ। শুরুতে এটি একটা ফেসবুক পেজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এরপর আলাওল কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করি। ধীরে ধীরে বাঁশখালীর অন্য কলেজ থেকেও স্টুডেন্ট যুক্ত হতে থাকে আমাদের সাথে। মেয়েদের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। যাদের স্বপ্ন থাকলেও কোনো উপায় ছিল না তারাও একটি ভরসার হাত পেয়েছে। যার নাম ডিবিএফ।
বোনেরা যখন আমাকে তাদের সমস্যার কথা বলে, তখন আমার নিজের কষ্ট সার্থক মনে হয়। এই প্ল্যাটফর্ম না হলে কে পেতাম কার দেখা! কার স্বপ্ন কোথায় ধুলিস্যাৎ হয়ে পড়ে থাকতো অবহেলায়। আমার যখন প্রয়োজন ছিল, এমন একটি ভরসার হাত আমি পাইনি। তাতে কি হয়েছে! আমি যখন বুঝেছি এটির প্রয়োজনীয়তা তাহলে সেই কষ্ট আমার ছোটদের পেতে দিব কেন! এবং আমাদের পরে তারাই এটির ভার নিবে ইনশাআল্লাহ।
একদিন বাঁশখালীর প্রত্যেকটা শিক্ষার্থীদের স্বপ্নসারথী হোক ডিবিএফ। কারো স্বপ্ন মুছে না যাক।
🌸শিক্ষার্থী ; বিবিএ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।