মুহাম্মদ মিজান বিন তাহের: বাঁঁশখালী উপজেলার বঙ্গোপসাগর বেষ্টিত বিভিন্ন এলাকায় আগাম লবণ চাষ শুরু করেছেন চাষীরা। গত বছর লবণের ভালো দাম পাওয়ায় চাষীরা এবার উৎসাহ নিয়ে লবণের চাষে ঝুঁকেছেন। লবণের মাঠে পার করছেন ব্যস্ত সময়।

সম্পূর্ণ প্রকৃতির আনুকূল্যে কম খরচে উৎপাদিত লবণ শিল্পকে এ অঞ্চলের জন্য ‘সাদা সোনা’ হিসেবে অভিহিত করছেন বিশিষ্টজনরা।
লবণচাষীরা জানান, গত মৌসুম থেকে এখন পর্যন্ত প্রতি মণ লবণ সাদা সাড়ে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ দুই বছর আগে লবণ বিক্রি হয়েছিল মাত্র ৯০ থেকে ১২০ টাকায়। চাষীরা জানান, গত বছর থেকে ভালো দাম পাচ্ছেন তাঁরা। চাষের খরচ বাদ দিয়ে থাকছে লাভও। সবেমাত্র ওই জায়গায় চিংড়ি-ঘের গুটিয়ে লবন মাঠ তৈরি করে লবন উৎপাদন করছেন তারা। লবন চাষে সাফল্যকে পুঁজি করে এ বছর ও চাষিরা পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছেন।
গত অর্থ বছরে লবণের ব্যাপকহারে দাম পাওয়ায় চাষীরা এবার ও লবণ উৎপাদন করতে উৎসাহ বেড়ে গেছে। ফলে চাষীরা ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে লবণমাঠ তৈরীর দিকে ঝুকে পড়েছে। মজুদকৃত লবণ বিক্রির পাশাপাশি লবণমাঠ তৈরীরও ধুম পড়েছে। বিগত দিনের লবণগুলো মজুদদাররা ৫-৬ টাকা কেজির লবণ এখন খুচরা বাজারে ১৩-১৫ টাকার উপরে।প্রতি বৎসর জন্য প্রতি কানি প্রতি (৪০ শতক) জমি ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায় লাগিয়ত নিই। প্রতি কানিতে চাষাবাদে খরচ পড়ে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। এতে লাভ হয় খরচের দ্বিগুণ।
ভাল দাম পাওয়ায় লবণ চাষীরা এখন খুবই আনন্দিত। চাষীদের মজুদকৃত লবণ বিক্রির ধুম পড়েছে সর্বত্র। বর্তমানে লবণ চাষীরা প্রতিমণ লবণ ৪শ থেকে সাড়ে ৪ শ টাকায় বিক্রি করছে। দেশের কক্সবাজার এবং খুলনার পর চট্টগ্রামের একমাত্র বাঁশখালীতেই লবণ উৎপাদন হয়ে থাকে। বাঁশখালীতে ছনুয়া, পুইঁছুড়ি, গন্ডামারা, সরল, পশ্চিম মনকিচর, কাথরিয়া, খানখানাবাদ (আংশিক) এলাকার লবণ উৎপাদন হয়। চাষীরা মোটামুটি পর্যায়ে লবণের দাম পেলেও এবং চাহিদা কম থাকায় বেশ কিছু লবণ ব্যবসায়ী লবণ মজুদ করে রাখে। সম্প্রতি সময়ে এই লবণের দাম হঠাৎ করে বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষীরা মজুদকৃত লবণ বিক্রির ধুম পড়ে গেছে তাদের মাঝে।
সরেজমিনে উপজেলার গন্ডামারা, ছনুয়া, সরল ইউনিয়নের এলাকার চাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায় এই তিন ইউনিয়ের প্রায় হাজার হাজার একর মাঠজুড়ে লবন উৎপাদনের লক্ষ্যে মাঠ চাষে ব্যস্ত অর্ধশতাধিক চাষী পরিবার। সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা অবদি যেন চাষিদের অন্য কোনো কাজ করার সময় নেই।
কম খরচে উৎপাদন ভালো হওয়ায় দিন দিন লবন চাষে আগ্রহি হয়ে উঠছে উপকূলের অধিকাংশ মানুষ।
তবে আবহাওয়া অনুকুল থাকায় চলতি উৎপাদন মৌসুমে প্রচুর পরিমান লবন উৎপাদন হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে মজুদ রয়েছে বিপুল পরিমান লবন। তবে এবার লবণের মূল্য কম থাকায় চাষীদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। জানুয়ারী মাস থেকে লবণ উৎপাদন শুরু হয়ে ২০১৯ সালের মে পর্যন্ত লবণ উৎপাদন অব্যাহত থাকবে।এই উপজেলাতে দুই ধরনের পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদন হয়।
বর্তমানে বাঁশখালীতে উৎপাদিত লবণ গুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে ঢাকা, সিলেট,নারায়নগঞ্জ ও চট্টগ্রামের পটিয়া সহ বিভিন্ন স্থানে পাইকারী আমদানিকারকরা নিয়ে যাচ্ছে। বাঁশখালীতে যদি লবণ ক্রেসিং মিল থাকতো স্থানীয় ভাবে বাজার জাত করার সম্ভব হত তাহলে চাষীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে লবণ না পাঠিয়ে স্থানীয় ভাবে বিক্রি করার সুযোগ পেত।
এ ব্যাপারে ছনুয়া এলাকার লবণ ব্যবসায়ী আবু ছৈয়দ জানান, লবন চাষের জন্য প্রথমে জমিকে ছোট ছোট ভাগ করে নেয়া হয়। এরপর ভেজা মাটিকে রোলার দিয়ে সমান করে বিছিয়ে দেয়া হয় মোটা পলিথিন। জোয়ার আসলেই মাঠের মাঝখানে তৈরি করা গর্তে জমানো হয় সাগরের লবন পানি। বালতি ভরে বিছানো পলিথিনের উপর রাখা হয় পানি। জলীয়বাষ্প হয়ে উড়ে যায় পানি আর মাঠে জমে যায় লবনের আস্তরণ। সেই লবন তুলে স্তুপ করে রাখা হয় যেন সরে যায় পানি।
পূর্বের চেয়ে হঠাৎ করে লবণের দাম ৪শ থেকে ৫শ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষীরা তাদের মজুদকৃত লবণ চড়া দামে বিক্রি করছে। সামনে এই দাম স্থায়ী নাও পেতে পারে এই আশংকায় চাষীরা তাদের মজুদকৃত লবণ তড়িগড়ি করে বিক্রি করে দিচ্ছে।
গন্ডমারা ইউনিয়নের পূর্ব বড়ঘোনা ৮ নং ওয়ার্ডের লবন চাষী বদিউল আলম, আমি প্রতি বছরের মত এবার ও ৩ খানি জমিতে লবন চাষ করি, প্রতি মন ৩০০ টাকা ধরে পাইকারী বিক্রি করি। আমাদের এইখানে বিভিন্ন বড় বড় মিল কারখানার মালিকগন এসে পাইকারী দামে লবন ক্রয় করে সাগর পথে নিয়ে যায়।
সরল এলাকার লবণচাষী ইয়াছিন, মোজাফ্ফর, আরিফ, খালেদ জানান, লবণের চাষ এবারো প্রতিবছরের ন্যায় খুব ভাল হয়েছে। সরকার যদি বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকায় উৎপাদিত এসব লবণ দেশের সর্বত্র রপ্তানিতে সহযোগিতা করেন তাহলে এখানকার লবণ চাষীরা আরো বেশী উপকৃত হবে।তারা এই লবণ শিল্প রক্ষা এবং মানসম্মত লবণ উৎপাদনে সরকারকে আরো বেশী মনযোগী হওয়ার আহবান জানান।
এ ব্যাপারে ছনুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ বলেন, ছনুয়া এলাকার অধিকাংশ মানুষ লবন চাষ করে থাকে। যুগ যুগ ধরে এই ইউনিয়ের অধিকাংশ মানুষ কম খরচে লাভ বেশি তাই লবন চাষ করে থাকেন।এই ইউনিয়ন টি লবণ শিল্প বল্লেই চলে। তবে যোগাযোগ অনুন্নত বিধায় সাধারন চাষিরা লবন গুলো বিক্রয় করতে হিমসিম খায়। যার কারনে সাধারণ পাইকারী ব্যবসায়ীরা লবন বহন করতে পারে না।যদি যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হতো তাহলে এই এলাকার মানুষ আরো ভাল করে এই ব্যবসার প্রতি আগ্রহ বাড়ত।