BanshkhaliTimes

বাঁশখালীর পুলিন বিহারী সুশীল: এক আদর্শিক মৈনাক

BanshkhaliTimes

বাঁশখালীর পুলিন বিহারী সুশীল: এক আদর্শিক মৈনাক
প্রদীপ প্রোজ্জ্বল

রক্ষিত অক্ষরে প্রতিক্ষণের প্রতিক্ষেত্র সময়ের ধারণ। প্রতিটি জীবনের প্রতিচ্ছায়ে মুহূর্ত বহন করে প্রতিটিক্ষণ। সময়গত প্রেম সমাজতান্ত্রিক হয়ে সাক্ষ্য দেয় যখন থেকে একজন মানুষ নিজেকে চিনতে শিখে। আপনিত হয়ে ওঠে সমাজের সুক্ষ্মস্বরে। তখন পরিবার পরিজন পরিপাটি হয় স্বজনের প্রতিস্বর পরিচয়ে।
তেমনি এক ঘনিষ্ট বিশিষ্ট চৈতন্য বহন করেছেন পুলিন বিহারী সুশীল। তিনি যেন অসাম্প্রদায়িক মানুষের প্রতিচ্ছায়ে নিজেকে দেখেছেন ধর্ম বর্ণ কর্ম জীবন্ত নৈকট্যের মাঝে। তিনি জৈবনিক দৃষ্টে সামাজিক প্রেমকে করেছেন উপজীব্য আর চেতনার উর্ধ্বে রেখেছেন মানুষের প্রেম। তিনি সমাজে গড়েছেন মানবিক মানুষের মেরুদণ্ড।
রাজনীতিতে মানুষের কল্যাণের নিত্যনন্দন এক সূর্য যেন পুলিন বিহারী সুশীল। গোটা জীবনে পরস্পর পরম্পরায় প্রকৃত জীবন গঠনে ব্রত ছিলেন তিনি। মানবিক চেতনার মধ্যেই ছিলো পুলিনের পূর্ণার্থ চিন্তার ভার। আজ তিনি জীবনের কাছে প্রয়াত। কিন্তু পৃথিবীর পৃত্তথলির ভূখণ্ড বাঁশখালী তাকে ধারণ করছে প্রতিনিয়ত। খন্ডিত করতে পারেনি প্রেমস্পর্শের আজন্মকে।
শিক্ষার সুচক্রে লালিত করেছেন জীবনের একটি অধ্যায়। কালীপুর উচ্চ বিদ্যালয়, বাঁশখালী থেকে মাধ্যমিক হয়ে সাতকানিয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে পড়াশোনায় পাঠ চুকান।তার মধ্যদিয়ে নাট্যকলায় অতিবাহিত জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো আজও মানসপটে পরিপূর্ণ সৃষ্টির শৈলিকা অনন্য। তাই নিজের পরিমার্জন ভাষায় সৃষ্টি করেছেন উপকূলীয় অঞ্চলনিধি কোমল চেতনার প্রেম।

বঙ্গোপসাগর ঘেঁষা এক উপ- শহরের নাম বাঁশখালী। এ জনপদের গণ্ডামারা ইউনিয়ন বড়ঘোনা গ্রামে ১৯৪০ খৃষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন অনিন্দ্যপুরুষ পুলিন বিহারী সুশীল। প্রয়াত হন ১৬ অক্টোবর ২০২১খৃষ্টাব্দে। পিতা জগবন্ধু কবিরাজ ও মাতা কুসুম বালা সুশীলের তৃতীয় সন্তান পুলিন বিহারী সুশীল। তারা চার ভাই চার বোন। ভাইয়েরা হলেন- পুলিন বিহারী সুশীল, অনীল সুশীল, রণজীৎ সুশীল, ও অজিত সুশীল। বোনেরা যথাক্রমে- প্রমিলা সুশীল, শোভা সুশীল, পুষ্পা সুশীল,ও বকুল সুশীল।
পুলিন বিহারী সুশীল সংসার জীবনে পদার্পণ করেছিলেন ১৯৬৫ খৃষ্টাব্দে। মিরসরাই উপজেলার বারৈয়ারহাট শান্তিরহাটের মোবারকঘোনার বসন্ত কুমার শর্মা ও স্বর্ণময়ী শর্মার কন্যা কনক প্রভাকে বিয়ে করেন। তাঁদের সংসারে রয়েছে সাত সন্তান-সন্ততি। তাঁরা হলেন আশীষ সুশীল, অসীম সুশীল,ও অসীত সুশীল। এবং অঞ্জনা সুশীল, বন্দনা সুশীল,অর্চনা সুশীল,ও সুবর্ণা সুশীল।

তাঁর পিতা জগবন্ধু ছিলেন একজন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক। বাঁশখালী গণ্ডামারায় সেসময়ে তিনি মানুষের প্রাণের সঞ্চারণ ছিলেন। তেমনই মানবিক পিতার সুযোগ্য সন্তান পুলিন বিহারী সুশীল। ১৯৬০ খৃষ্টাব্দের প্রবল জলোচ্ছ্বাসের কারণে স্বপরিবার শীলকূপ ৯নং ওয়ার্ড বড়ুয়াপাড়ায় নতুন বসত জীবনের সূচনা করেন চৈত্যবিহারের পশ্চিম পাশে অনুচ্চ টিলায়।
বর্তমান তাঁরা বসবাস করছেন ৮নং ওয়ার্ড রামকৃষ্ণ মিশন রোড়, দক্ষিন জলদিতে। ২০০৩ খৃষ্টাব্দ থেকে এইখানে স্থায়ী হন।
সময়ের সাথে ধারণ হয় পুলিন বিহারী সুশীলের নতুন নতুন যুদ্ধের বেষ্টনী। ১৯৭৩ খৃষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন শীলকুপ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নিজের প্রচেষ্টায়। এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিও ছিলেন তিনি। তারপর বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। শীলকূপ ইউনিয়নের নামকরণেও তাঁর
অন্যতম ভূমিকার কথা সর্বজনবিধিত। তিনি ছিলেন
রাজনীতিতে বর্ষীয়ান যুবক- এই তারুণ্যদীপ্ততা ধারাবাহিকভাবে আজীবন বজায় রেখেছেন তিনি। সাংগঠনিক মহৎ উদ্যোগ ছিলো তাঁর অভয়মিত্রয়ে সূচনীয় নিদারুণ চিন্তা। তিনি পূজা উদযাপন পরিষদ বাঁশখালী ও শীল কল্যাণ সমিতি বাঁশখালীর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও রাম কৃষ্ণ মিশন বাঁশখালীর সহ সভাপতি ও ইকোপার্ক বাঁশখালীর সভাপতি ছিলেন।
নেতৃত্বের কবজ ছিলো তার নিরপেক্ষ সমাজ। সংহতি ছিলো তাঁর মানুষের বিশালতার বিশ্বাস।

কর্মজীবন শুরু করেন ব্যবসার পাশাপাশি শিক্ষকতার মেরু নিয়ে। এই মহৎ পেশায় নিজেকে রেখেছিলেন সামাজের সন্ধিক্ষণে। এর মধ্যদিয়ে শুরু করেছিলেন সংস্কৃতির বচনীয়র দার্শনিক যাত্রার খসড়া।

তৎকালীন চৈত্যবিহারের অধ্যক্ষ ছিলেন জ্ঞানপাল মহাস্থবির গণ্ডামারা ইউনিয়নের অন্যতম পুরুষ। শিক্ষা- দিক্ষা- সংস্কৃতি- কীর্তন- মঞ্চনাটক এর দিক্ষিত সেই দক্ষপালক জ্ঞানপাল। তাঁরই হাত ধরে শুরু করেছিলেন পুলিন বিহারী সুশীল সমাজিক মঞ্চের মহড়া। সহবন্ধু ছিলেন মোহন বড়ুয়া। সুমল বড়ুয়া। হেমেদ্র বড়ুয়া। রবীন্দ্র বড়ুয়া। করুণা রঞ্জন বড়ুয়া।অনাদিরঞ্জন বড়ুয়া। কবিরাজ রণজিৎ সুশীল। নিঁখুত রঞ্জন বড়ুয়া। বেদাশীষ বড়ুয়া। নীলমনি বড়ুয়া। ফণী ভূষন বড়ুয়া প্রমুখ।
তাদের এই অগ্রযাত্রায় ভূষিত হয় চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা।
বিনয়ী আদর্শের আদর্শিক হয়ে তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন শীলকূপ তথা বাঁশখালীর প্রজন্মের কাছে।

লেখক: কবি

Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *