বাঁশখালীর অহংকার নভেরা আহমেদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী

বাঁশখালী টাইমসঃ বিখ্যাত ও বিরলপ্রজ কীর্তিমানের আঁতুড় ঘর আমাদের বাঁশখালী। অধ্যাপক আসহাব উদ্দীন, ইতিহাসবিদ ডঃ আবদুল করিম, খান বাহাদুর বদি আহমদ এমন আরও অনেকেই আপন আলোয় ভাস্বর হয়ে আছেন। তেমনি প্রায় বিস্মৃত এক নক্ষত্রের নাম নভেরা আহমেদ। বাংলাদেশের প্রথম নারী ভাস্কর, শহীদ মিনারের অন্যতম স্থপতি, একুশে পদক প্রাপ্ত এই কৃতি মহিলার আদি নিবাস বাঁশখালীর কালীপুর গ্রামে। কথিত আছে, শহীদ মিনারের ইতিহাসে তাঁর অবদানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না পাওয়ায় তিনি অভিমান করে দেশ ছেড়ে সুদূর প্যারিসে পাড়ি জমান। প্রায় ৪৫ বছর অর্থাৎ আমৃত্যু সেখানেই বসবাস করেন তিনি। ২০১৫ সালের ৬ মে দিবাগত রাত ৭৬ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন।

BanshkhaliTimes

 

নভেরার জন্ম ২৯ মার্চ ১৯৩৯ সালে। বাবা সৈয়দ আহমেদ। নভেরা কলকাতার লরেটো স্কুল থেকে প্রবেশিকা পাস করেন। পরবর্তী শিক্ষার জন্য তাঁকে বাড়ি থেকে লন্ডনে পাঠানো হয়। পরিবারের ইচ্ছা ছিল, তিনি আইনে উচ্চতর শিক্ষা নেবেন। তবে শৈশব থেকেই শিল্পানুরাগী নভেরার ইচ্ছা ছিল ভাস্কর্য করার। তিনি সেখানে সিটি অ্যান্ড গিল্ডস্টোন কার্ভিং ক্লাসে যোগ দেন। পরে ভর্তি হন ক্যাম্বারওয়েল স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফটসে। সেখান থেকে তিনি পাঁচ বছর মেয়াদের ডিপ্লোমা কোর্স করেন। এরপর তিনি ইতালির ফ্লোরেন্স ও ভেনিসে ভাস্কর্য বিষয়ে শিক্ষা নেন।
নভেরা আহমেদ দেশে ফেরেন ১৯৫৬ সালে। সে সময় ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ চলছিল। ভাস্কর হামিদুর রহমানের সঙ্গে নভেরা আহমেদ শহীদ মিনারের প্রাথমিক নকশা প্রণয়নের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। পরে অজ্ঞাত কারণে শহীদ মিনারের নির্মাতা হিসেবে তাঁর নামটি সরকারি কাগজে বাদ পড়ে যায়।
নভেরার প্রথম একক ভাস্কর্য প্রদর্শনী হয়েছিল ১৯৬০ সালের ৭ আগস্ট, কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে। ‘ইনার গেজ’ শিরোনামের ওই প্রদর্শনীটি কেবল নভেরারই নয়, গোটা পাকিস্তানেই ছিল কোনো ভাস্করের প্রথম একক প্রদর্শনী। তাতে ভাস্কর্য স্থান পেয়েছিল ৭৫টি। প্রদর্শনীতে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, লাহোরের পাকিস্তান আর্টস কাউন্সিলের সম্পাদক ও প্রখ্যাত উর্দু কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ, লাহোর আর্ট কলেজের উপাধ্যক্ষ শিল্পী শাকির আলীসহ বহু বিদগ্ধজন উপস্থিত ছিলেন। আধুনিক শিল্পধারায় রচিত নভেরার ওই শিল্পকর্মগুলো বিপুল সমাদর পায়। নভেরা আহমেদ এ দেশের আধুনিক ভাস্কর্যশিল্পের পথিকৃৎ হয়ে ওঠেন। সেই প্রদর্শনীর ৩০টি ভাস্কর্য পরে জাতীয় জাদুঘর সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে। সেই শিল্পগুলো নিয়ে ১৯৯৮ সালে তারা একটি প্রদর্শনীরও আয়োজন করে। নভেরার সেসব ভাস্কর্যের কয়েকটি এখনো জাতীয় জাদুঘর প্রাঙ্গণে স্থাপিত রয়েছে।
নভেরার দ্বিতীয় একক প্রদর্শনী হয় ১৯৭০ সালে, ব্যাংককে। এতে তিনি ধাতব মাধ্যমে কিছু ভাস্কর্য করেন। তাঁর তৃতীয় একক প্রদর্শনী হয় প্যারিসে, ১৯৭৩ সালে রিভগেস গ্যালারিতে। সর্বশেষ ২০১৪ সালে প্যারিসে তাঁর পূর্বাপর কাজের এক শ দিনব্যাপী একটি প্রদর্শনী হয়।
নভেরা আহমেদ ১৯৯৭ সালে পেয়েছেন একুশে পদক। দেশের আধুনিক ভাস্কর্যের অগ্রদূত নভেরা আহমেদ প্রায় ৪৫ বছর ধরে পাদপ্রদীপের আলোর বাইরে নিভৃতে প্যারিসে বসবাস করছিলেন। চলেও গেলেন নীরবেই।

Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *