নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঁশখালী টাইমস: কড়া নাড়ছে সনাতন ধর্মের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দূর্গাপূজা। আর মাত্র কয়েকদিন পরেই শুরু হবে উৎসবের আমেজ। পূজা মন্ডপগুলোতে এখন চলছে শেষ মূহুর্তের প্রস্তুতি। লোকজন ব্যস্ত উৎসবের কেনাকাটায়। এরই মধ্যে গত বছরের মতো পূজা উদযাপন কমিটি নিয়ে বাঁশখালীতে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে বিভ্রান্তি। গতবার দুটি পূজা কমিটি সক্রিয় থাকলেও এবার তা বেড়ে হয়েছে তিনটি। এই কমিটিগুলো অনুমোদনে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। সারা বছর উল্লেখযোগ্য কোন কার্যক্রম দেখা না গেলেও দূর্গাপূজাকে ঘিরে এই পূজা কমিটিগুলো তৎপর হয়ে ওঠে। সরকারি অনুদানসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ভাগিয়ে নিতে এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বাঁশখালীর পূজা উদযাপন কমিটিতে এই অনিয়ম বলে পূজার্থীদের অভিযোগ। গত বছর দূর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। এর আগে সরকারি চাল আত্মসাৎের অভিযোগও ওঠে কোন কোন নেতার বিরুদ্ধে। এসব ঘটনাকে ভালোভাবে দেখছেন না হিন্দু ধর্মের সচেতন মহল। এপ্রসঙ্গে বাঁশখালী পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সহ-সভাপতি ঝুন্টু কুমার দাশ বলেন- ‘বাঁশখালী পূজা উদযাপন পরিষদের বর্তমান অবস্থার জন্য উপদেষ্টা পরিষদ, জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ দায়ী। তারা যথাযথ ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সুন্দর কমিটি গঠন করে দেয়া গেলে বাঁশখালী পূজা উদযাপন পরিষদে সুষ্ঠু ধারা ফিরে আসবে বলে আমি মনে করি।’
বাঁশখালীতে বর্তমানে টুটুন চক্রবর্তী-অশোক কুমার, রানা কুমার দেব-নন্দন সুশীল ও ডাঃ আশীষ কুমার শীল-উত্তম কুমার কারণের নেতৃত্বে তিনটি পূজা উদযাপন কমিটির অস্তিত্ব রয়েছে। তন্মধ্যে গত বছর টুটুন চক্রবর্তীর নেতৃত্বাধীন কমিটি অনুমোদন দেন পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম জেলা শাখা। অন্যদিকে রানা কুমার দেবের নেতৃত্বাধীন কমিটি অনুমোদন দেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখা। এরপর গত ০৪ ই অক্টোবর ডাঃ আশীষ কুমার শীলকে আহবায়ক ও উত্তম কুমার কারণকে সদস্য সচিব করে চট্টগ্রাম জেলা শাখা এক আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করে পূর্বের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। এদিকে এই সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ অন্য দুই কমিটির লোকজন। আসন্ন দূর্গাপূজায় তিন কমিটিই মাঠে থাকবেন বলে ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন। দূর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহীর কার্যালয়ে তাদের তৎপরতাও দেখা গেছে। এমন মুখোমুখী অবস্থানে কেউ কেউ অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন। যার ফলে পূজা উদযাপন কমিটি নিয়ে বাঁশখালীর হিন্দু সম্প্রদায়ে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
এ প্রসঙ্গে বাঁশখালী পূজা উদযাপন পরিষদ একাংশের আহবায়ক টুটুন চক্রবর্তী বলেন- ‘বাঁশখালীতে আমাদের কমিটিই সক্রিয় আছে। আমরাই মাঠপর্যায়ে কাজ করছি। করোনা ভাইরাসের কারণে সারা দেশে নতুন কোন কমিটি হয়নি। বাঁশখালীতে অন্য কেউ দাবি করে থাকলে তারা ভূয়া।’ নবগঠিত কমিটির আহবায়ক ডাক্তার আশীষ কুমার শীল বলেন-‘আসন্ন দূর্গাপূজা সুন্দরভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে আমরা ইতিমধ্যে বাঁশখালীর সাংসদ ও ওসির সাথে সাক্ষাত করেছি। পুলিশ সুপার ও ডিসির পূজা সংক্রান্ত পোগ্রামে আমন্ত্রিত হয়ে আমরা অংশগ্রহণ করেছি। কমিটি ঘোষণার পরই আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছি। আর আমি ডিও বা কোন স্বার্থ হাসিল করতে এই দায়িত্ব গ্রহণ করিনি। সাংসদের সাথে বৈঠকে আমি বলেছি, ডিও যেন আঞ্চলিক কমিটিগুলোকে দিয়ে দেয়া হয়। মূলত বাঁশখালীর পূজা কমিটিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাই আমার লক্ষ্য। এই লক্ষ্যে পূজার পর আমি আঞ্চলিক কমিটিগুলো গঠন করবো।’ আরেক কমিটির সভাপতি রানা কুমার দেব বলেন- ‘২০১৮ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে বাঁশখালী পূজা উদযাপন কমিটি গঠিত হওয়ার কথা থাকলেও একটি কুচক্রী মহল তা বানচাল করে দেয়। এরপর বৈলছড়ি কালী মন্দিরে এক সম্মেলনের মাধ্যমে বাঁশখালী পূজা উদযাপন পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ উপদেষ্টা এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সম্মতিক্রমে দুই বছর মেয়াদি আমাদের এই কমিটি গঠিত হয়। আসন্ন দূর্গাপূজার পর নির্বাচনের মাধ্যমে আবার নতুন কমিটি গঠন করা হবে। এখন অন্য যারা বাঁশখালীর পূজা কমিটির নেতা দাবি করছেন তাদের কোন অস্তিত্ব নেই। আর বাঁশখালীতে আমিই প্রথম সরকারি চালসহ বিভিন্ন বরাদ্দ নিজস্ব অর্থায়নে গাড়ী ভাড়া করে আঞ্চলিক কমিটিকে হস্তান্তর করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। আমি কখনো পূজা উদযাপন পরিষদের সরকারি বরাদ্দ তছরুপ করিনি।’