বাঁশখালীতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার সেই ১০ শিক্ষকনেতা জামিনে মুক্ত

মিজান বিন তাহের, বিশেষ প্রতিনিধি, বাঁশখালী টাইমস: বাঁশখালীতে গত বছরের এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর পরীক্ষায় ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়’ নামক বিষয়ের উপর প্রথম সাময়িক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয় সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সাথে কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণবিরোধী ও গণ্ডামারা ইউপি’র বসতভিটা ও গোরস্থান রক্ষা কমিটির আহবায়ক এবং বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ লেয়াকত আলীর সাথে তুলনা করে। প্রণীত প্রশ্নপত্র পরীক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করে পরীক্ষাও নেওয়া হয়। যথারীতি ঐ দিন পরীক্ষা শেষে সচেতন মহলে বিষয়টি নজরে এলে তৎক্ষণাৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।

বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হলে তৎক্ষণাৎ প্রশ্নপত্র নির্মাতাকারী বাঁশখালী বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক দুকুল বড়ুয়াকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলিশে সোপার্দ করে। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ছয়টি উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকসহ প্রশ্ন নির্মাতাকে আসামী করে গত ১৯ জুলাই ২০১৬ ইং ৫৪ কাঃবিঃ ধারায় বাঁশখালী থানায় সাধারণ ডায়েরি ৭৪২/১৬ করেন।
পরবর্তীতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করে রাষ্ট্রপক্ষ। মামলা দায়েরের পর ১৩ শিক্ষক সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন হতে তিন মাসের আগাম জামিন লাভ করে।

এ দিকে গতকাল বুধবার আগাম জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় পুনরায় নিম্ন আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন অভিযুক্ত ১৩ শিক্ষক। এনিয়ে গতকাল বাঁশখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিজ্ঞ বিচারক দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৬টি উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির ১২ শিক্ষক নেতা ও এক প্রশ্নপত্র নির্মাতার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেছে। এরা হলেন বাঁশখালী বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক দুকুল বড়ুয়া (৪৫), বাঁশখালী শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও কালীপুর নাছেরা খাতুন আর, কে বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ তাহেরুল ইসলাম (৫৫), সাধারণ সম্পাদক রায়ছটা প্রেমাশিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মিয়া (৫৭), আনোয়ারা শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও মাহাতা পাটানিকোটা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম (৫২), সাধারণ সম্পাদক ও আনোয়ারা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাদল চন্দ্র দাশ (৫৫), পটিয়া শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও মোজাফ্ফরাবাদ এন, জে উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ইউছুফ (৫০), সাধারণ সম্পাদক হাইদগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক শ্যামল কান্তি দে, সাতকানিয়া শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বাজালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অজিত কারণ (৫৮), সাধারণ সম্পাদক ছমদর পাড়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এম ওয়াইজ উদ্দীন(৪৯), বোয়ালখালী শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও আজগর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী (৪২), সাধারন সম্পাদক কদুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আমির হোসেন (৪২), চন্দনাইশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও কেশুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিজন ভট্টাচার্য্য, সাধারণ সম্পাদক ও বরমা ত্রাহিমেনকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ.এইস.এম সৈয়দ হোসেনকে গত মাসের ২৩ আগস্ট বুধবার দুপুরে বাঁশখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মো. সাজ্জাদ হোসেন এ আদেশ প্রদান করেন।
দীর্ঘ শুনানি শেষে বিজ্ঞ আদালত ১৩ শিক্ষকের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করলে গত ১৮ সেপ্টেম্বর (সোমবার) তাদের জামিন আবেদন করলে আদালত তাদের জামিন না মঞ্জুর করেন।
অন্য দিকে গতকাল ২৬ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার আবারও তাদের জামিন চাওয়া হলে অবশেষে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৫ উপজেলার মধ্যে থেকে ১০ শিক্ষক সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের জামিন দেওয়া হলে বাকি বাঁশখালী উপজেলার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও পরীক্ষা প্রশ্ন তৈরিকারী বাঁশখালী বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক দুকুল বড়ুয়া (৪৫), বাঁশখালী শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও কালীপুর নাছেরা খাতুন আর, কে বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ তাহেরুল ইসলাম (৫৫), সাধারণ সম্পাদক রায়ছটা প্রেমাশিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মিয়া (৫৭) কে জামিন প্রদান করা হয়নি।তবে দক্ষিণ চট্টগ্রামজুড়ে শিক্ষকদের মাঝে আনন্দ উপভোগ করতে দেখা গেলেও বাঁশখালীর তিন শিক্ষককে জামিন প্রদান না করায় শিক্ষকদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।

Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *