BanshkhaliTimes

বাঁশখালীতে রমজানেও কমছে না পল্লীবিদ্যুতের ভেলকিবাজি!

মুহাম্মদ মিজান বিন তাহের: গরম শুরু না হতেই বিদ্যুতের ভেলকিবাজি আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা
লোডশেডিংয়ে কাহিল হয়ে পড়েছে বাঁশখালীর জনজীবন। রমজানেও থেমে নেই লোডশেডিং ভোগান্তি!
প্রচন্ড গরমের সঙ্গে বাঁশখালী জুড়ে চলছে নতুন নিয়মে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ব্যাহত হওয়া ছাড়াও অফিস আদালতে কাজকর্ম স্থবির হয়ে পড়েছে। হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ছে। শিশু-বৃদ্ধরা আক্রান্ত হচ্ছে নানা জটিল অসুখে।
গত একমাসে দৈনিক গড়ে ১০ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাচ্ছে না বলে দাবি এলাকাবাসীর।
উপজেলার প্রায় ৬২ হাজার গ্রাহক বিদ্যুতের এসব অভিযোগ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও লাভ হচ্ছে না। মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং এর সাথে যদি কালবৈশাখীর একটু বাতাস হয় তবে বিদ্যুৎ অফিসের আর কোন দেখা মিলে না। এ অজুহাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের
পর দিন বিদ্যুৎ আর আসে না। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় যেন বিদ্যুতের ভেল্কিবাজি। এক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ আসতে না আসতেই বন্ধ হয়ে যায় অন্য এলাকার সরবরাহ। এত ঘন ঘন বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার কারণে লাইট,টিভি,ফ্রিজ ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইলেকট্রিক জিনিষ নষ্ট হয়ে দুর্ভোগ বেড়েছে গ্রাহকদের।

পল্লী বিদ্যুৎ বাঁঁশখালী জোনাল অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় বর্তমান গ্রাহকসংখ্যা প্রায় ৬২ হাজার।তৎমধ্যে আবাসিক গ্রাহক ৫২ হাজার, বাণিজ্যিক ৫ হাজার, দাতব্য প্রতিষ্ঠান ১ হাজার,বিভিন্ন ধর্মীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান সহ ৪ শত অধিক ও সেচ সংযোগ রয়েছে ৪৮৩ টি। বাকীগুলো নতুনসংযোগ। এছাড়া রয়েছে পৌরসভার অধিকাংশ রাস্তার বাতি। ৩৩/১১ কেভি উপ–কেন্দ্র ১টি (২০এমভিএ)।বর্তমানে সাব স্টেশনে ৩ টি চালু করা হয়েছে ইতিমধ্যে আরো একটি সাব স্টেশন চালু হবে। তবে এ সমস্ত সাব স্টেশন গুলো তে সর্বোচ্চ লোড ১৭.৫০ মেগাওয়াট। ১৪ টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার সহ ৩৯৭ বর্গ কিলোমটার আয়তনের এ উপজেলার প্রায় ১৫০ টির ও অধিক গ্রামে শতভাগ বিদ্যুতায়িত করা হয়েছে।

ইতিমধ্যে গত জানুয়ারি, ফ্রেরুয়ারী, মার্চ ও এপ্রিল মাসে প্রায় ৬ হাজার মত নতুন মিটার সংযোগ দেওয়া হয়েছে।

বাঁশখালী সাধারণ জনগন বহুদিন যাবৎ বিভিন্ন অনুষ্টানসহ সরকারী-বেসরকারি প্রতিষ্টানে জীবন মরন সন্ধিক্ষনে অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহৃত বিদ্যুৎতের ভেল্কিবাজিতে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে।বাঁশখালীর বিভিন্ন ইউনিয়নে ঘুরে দেখা যায় বিদ্যুৎ বিভাগের কতিপয় সুবিধাভোগী কর্মকর্তা ও দালাল চক্র মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সরকারী নিয়ম নিতীর তোয়াক্কা না করে প্রতি মিটারে অতিরিক্ত টাকা আদায়,পাড়ায় কিংবা মুরগি,গরু, মাছের খামারে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ প্রধান করেছেন এবং এই অসাধু চক্রটি বাঁশখালী বিভিন্ন ইউনিয়নে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রেখে নিয়মিত শেখেরখীলের বরফ মিলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও সরকারী ভাবে প্রতি কিলোমিটার সংযোগ ও নতুন মিটারের ৮৫০ টাকা হলে ও অনেক জায়গাই ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা নেওয়া হয় ও উপজেলার খানখানাবাদ, কালিপুর, বৈলছড়ি, কাথরিয়া, ছনুয়া, সাধনপুর, গন্ডামারা, শেখেরখীল,শীলকূপসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে অনেক গ্রাহক মিটার সংযোগ পাচ্ছে না,এমনকি এসব এলাকায় ঘুরে দেখা যায় অধিকাংশ নতুন মিটার লাগানো আছে তবে সংযোগ নাই,অন্য দিকে বিভিন্ন ঘর বাড়ির বন্ধ থাকা সত্ত্বেও গড়/ অনুমানিক বিদ্যুৎ বিল নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সরকারী নীতিমালা থাকা স্বত্বে ও কোন ধরনের ঘোষনা ছাড়াই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখে।ফলে স্কুল কলেজ,সরকারী-বেসরকারি, মসজিদ-মাদ্রাসা, মন্দির-গীর্জাসহ অতি গুরুত্বপূর্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশনসহ নানান কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

এ বিষয়ে বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, বাঁশখালীতে যেই হারে বিদ্যুৎতের সমস্যা হয় আমার চাকুরী জিবনেও আমি আর দেখি নাই।আমাদের এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে সন্ধা নামার সাথে সাথে জেনারেটর থাকলে ও সরকারী ভাবে তেমন কোন জ্বালানি তেল এর ব্যবস্হা না থাকায় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সাথে সাথে পুরো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অন্ধকারে রুপ দারন করে এবং অতিরিক্ত লোডশেডিং এর কারনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনেক মূল্যবান যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যায়। বিদ্যুৎতের ব্যাপক হারে লোডশেডিং এর কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তিকৃত রোগীরা তীব্র গরমে অতিষ্ট হয়ে পড়ে।যেখানে রোগীরা একটু সুস্হতা পাওয়ার জন্য সেবা নিতে মেডিকেলে আসে অথচ সেখানে রোগীরা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারনে আরো অসুস্হতা ভোগ করে। অনেক সময় অপারেশন করতে গেলে দেখা যায় ঘন্টার পর ঘন্টার বিদ্যুৎ থাকে না।স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রক্ত, প্রসাব ও কফসহ বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে ও ব্যাপক কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়।

বাঁশখালী আইনজীবী সমিতির সাধারন সম্পাদক এড.তোফাইল বিন হোসাইন বলেন, বাঁশখালী পল্লী বিদ্যুৎতের অতিরিক্ত লোডশেডিং এর কারনে আমাদের আদালতে মামলা পরিচালনা করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। নতুন আদালত ভবন নির্মান না হওয়া পযর্ন্ত আমাদের যে ভবনে আদালত বসে সেই ভবনটি টিন শেড়ের হওয়ায় অতিরিক্ত গরমের মধ্যে আমাদের মামলা পরিচালনা করতে হয়। এই আসে এই যায় অবস্হা। এই রকম লোডশেডিং এর কারনে অনেক মূলবান জিনিষ পত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তীব্র গরমে আদালতে আমাদের বসতে ও মামলা পরিচালনা করতে ব্যাপক কষ্ট হচ্ছে।

বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের ব্যাপারে এবং বিভিন্ন অনিয়ম ব্যাপারে চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি–১ বাঁঁশখালী জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোঃ নাইমুল ইসলাম জানান,সরকারী ভাবে মিটার নিতে মাত্র ৮৫০ টাকা লাগে, কিন্তুু শুনা যাচ্ছে নতুন সংযোগ দেওয়ার কথা বলে অনেকে ৫-৮ হাজার টাকা ও নিচ্ছে, কিন্তু এখন ও পযর্ন্ত কেউ লিখিত কোন অভিযোগ দেননি, কে নিচ্ছে টাকাগুলো আপনারা খবর নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট করেন, যারা নতুন সংযোগ নেওয়ার আগ্রহ তারা সরাসরি অফিসে কিংবা আমার কাছে এসে যোগাযোগ না করে কিভাবে দালালদের টাকা দেয়।

এই রমজানের সেহরি ও ইফতারে মানুষ বিদ্যুৎ চায়।

Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *