মু. মিজান বিন তাহের, বাঁশখালী টাইমস: আজ রবিবার (১ অক্টোবর) শুভ বাঁশখালীতে প্রবারণা পূর্ণিমা ও কঠিন চীবর দান উদযাপিত হয়েছে। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জন্য আজকের দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সব পূর্ণিমা তিথি কোনো না কোনো কারণে বৌদ্ধদের জন্য শুভময় দিন। তাই আজকের পূর্ণিমা তিথি ব্যাপক তাৎপর্য বহন করছে। প্রবারণা শব্দের অর্থ—আশার তৃপ্তি, অভিলাষ পূরণ, ধ্যান বা শিক্ষা সমাপ্তি বোঝায়। অন্যদিকে আত্মশুদ্ধি বা আত্মসমালোচনাও বলে। আজকের দিনে ভিক্ষুরা হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে চারিত্রিক শুদ্ধির জন্য একে অন্যকে করজোড়ে বলেন, ‘‘বন্ধু, যদি আমার কোনো রূপ দোষত্রুটি দেখো বা কারো থেকে শুনে থাকো এবং এ কারণে যদি আমার ওপর সন্দেহ হয়ে থাকে, তাহলে আমাকে বলো, আমি তার প্রতিকার করব। বিনয় পিটকের পরিভাষায় একে বলে ‘প্রবারণা’।”
এই শুভ তিথিতে ভগবান বুদ্ধ দেবলোক থেকে সাংকশ্যনগরে অবতরণ করেছিলেন। ভিক্ষুদের ত্রৈমাসিক বর্ষাব্রতাদি সম্পন্ন হলো আজকের দিনে। এ কারণে আশ্বিনী পূর্ণিমা বা প্রবারণা পূর্ণিমা বৌদ্ধদের পরম পবিত্র দিন। আজ থেকে প্রতিটি বৌদ্ধ গ্রামে পালাক্রমে যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় শুরু হচ্ছে দানশ্রেষ্ঠ ‘কঠিন চীবর দান’। তারই ধারাবাহিকতায় সারা দেশের ন্যায় ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে বাঁশখালীতে জমকালোভাবে উদযাপিত হয়েছে বৌদ্ধধর্মের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা। বাঁশখালীতে প্রবারণা পূর্ণিমা ও কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান রবিবার (১ অক্টোবর) সন্ধ্যা থেকে ব্যাপক ঢোল বাজনা বাজিয়ে পালিত হয়।
দুপুর থেকে শত শত নারী পুরুষ শারিরীক দূরত্ব বজায় রেখে একত্রিত হয়ে সন্ধ্যায় হাজার হাজার ফানুস উত্তোলন করে তারা আনন্দ উপভোগ করে।
সারা দেশের মত এই উপজেলার মধ্যে ৬ টি বৌদ্ধ মন্দিরে একই সাথে যথাক্রমে বাঁশখালীর পৌরসভা জলদী ধর্মরত্ন বিহার, দক্ষিণ জলদী বিবেকারাম বিহার, বাঁশখালী ( Banshkhali ) কেন্দ্রীয় শীলকূপ চৈত বিহার, কাহারঘোনা মিনজিরীতলা সংঘরাজ অভয়তিষ্য পারিজাত আরাম বিহার, বাঁশখালী ( Banshkhali ) পূর্ব পুঁইছড়ি চন্দ্রজ্যোতি বৌদ্ধ বিহার, বাঁশখালী ( Banshkhali ) শীলকূপ জ্ঞানোদয় বিহার সহ সকল বৌদ্ধ মন্দিরে একযোগে আনন্দ উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে প্রবারণা পূর্নিমা পালন করে।
বাঁশখালীতে প্রবারণা পূর্ণিমা ও কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিল বুদ্ধ পুজা, সীবলী পুজা, অষ্ট উপকরন দান,প শীল ও অষ্টশীল গ্রহন , আকাশ বাতি (ফানুস) উত্তোলন। উপরোক্ত কর্মসুচী সমুহ জলদী ধর্মরত্ন বিহারে শ্রীমৎ ধর্মপাল মহাস্থবিরের, শীলকুপ জ্ঞানোদয় বিহারে শ্রীমৎ রাহুলপ্রিয় মহাস্থবিরের, দক্ষিণ জলদী বিবেকারাম বিহারে শ্রীমৎ তিলোকানন্দ মহাস্থবিরের, কেন্দ্রীয় শীলকুপ চৈত্য বিহারে শ্রীমৎ দেবমিত্র মহাস্থবিরের,সংঘরাজ অভয়তিষ্য পারিজাত আরামে শ্রীমৎ মৈত্রীজিৎ স্থবিরের, পুইছড়ি চন্দ্রজ্যেতি বিহারে শ্রমিৎ ধর্মপাল স্থবিরের সভাপতিত্বে ও জলদী প্রজ্ঞাদর্শন মেড়িটেশন বিহারে. জলদী প্রগতি বিহারে ও বোধিচৈত্য বিহারে অনুষ্ঠিত হয় ।
সন্ধ্যায় বাঁশখালী ( Banshkhali ) কেন্দ্রীয় শীলকূপ চৈত্য বিহার প্রাঙ্গনে শুভ প্রবারনা পূর্ণিমা উদযাপনসহ বিভিন্ন বৌদ্ধ মন্দির পরিদর্শন করেন উপজেলা প্রসাশন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।
এরই ধারবাহিকতায় বর্নিল ফানুসে ঢেকে গেছে বাঁশখালীর আকাশ ,সুন্দর মনোরম এই দৃশ্য দেখতে উপজেলার প্রতিটি বৌদ্ধ বিহার জড়ো হতে থাকে হাজার হাজার বিভিন্ন ধর্মের মানুষ।
উল্লেখ্য, ১৪ অক্টোবর বুধবার বাঁশখালী ( Banshkhali ) শীলকূপ জ্ঞানোদয় বিহার, ১৫ অক্টোবর বৃহস্পতিবার কাহারঘোনা মিনজিরীতলা সংঘরাজ অভয়তিষ্য পারিজাত আরাম, ১৬ অক্টোবর শুক্রবার পুঁইছড়ি চন্দ্রজ্যোতি বিহার, ১৭ অক্টোবর শনিবার বাঁশখালী কেন্দ্রীয় শীলকূপ চৈত্য বিহার, ১৮ অক্টোবর রবিবার বাঁশখালী ( Banshkhali ) পৌরসদরস্থ জলদী ধর্মরত্ন বিহার, ১৯ অক্টোবর সোমবার দক্ষিণ জলদী বিবেকারাম বিহারে কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত হবে।
আরো পড়ুন – যুবলীগ নেতা মকছুদ মাসুদের পিতা জামাল আহমদের জানাজা সম্পন্ন