মুহাম্মদ মিজান বিন তাহের, বাঁশখালী টাইমস: পবিত্র জিলহজ্ব মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে বাঁশখালীর বিভিন্ন হাট বাজারে শুরু হয়ে গেছে পশু বেচাকেনা। ঈদুল আযহার আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। ঈদুল আযহা উপলক্ষে বাঁশখালী উপজেলার বিভিন্ন কোরবানি পশুর হাট বাজার জমে উঠেছে। তবে এসব হাটে কোরবানির পশুর সরবরাহ কম হলেও ক্রেতা ও দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। ক্রেতাদের পছন্দ দেশীয় গরু।
উপজেলার ছোট-বড় প্রায় ৩০ টির মত কোরবানীর পশুর হাট বসেছে। তার মধ্যে অন্যতম বাঁশখালী পৌরসভার জলদী মিয়ার বাজার আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। এ ছাড়াও পৌরসভার ভাদালিয়া হারুন বাজার, মনছুরিয়া বাজার, পুকুরিয়া চাঁনপুর বাজার, পুকুরিয়া চৌমুহনী, মোনায়েম শাহ বাজার, বানীগ্রাম বাজার, খানখানাবাদ চৌধুরী হাট, বাহারচড়া বশির উল্লাহ মিয়াজির বাজার, রামদাস মন্সির হাট, টাইমবাজার, সরল বাজার, গন্ডামারা বাজার, বড়ঘোনা সকাল বাজার, চাম্বল বাজার, নাপোড়া বাজার, ছনুয়া মনুমিয়াজীর বাজার, সরলিয়া বাজার, পুইছুড়ি বদ্দারহাট বাজার সহ অন্তত ছোট বড় সবে মিলে ৩০ টিরও অধিক পশুর হাট বসেছে।
কোরবানির পশুহাটে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাটে প্রায় ২/৩ হাজার গরু এবং ৩/৫ শত ছাগল উঠেছে। সেই তুলনায় ক্রেতা ও দাম বেশি হওয়ায় বেচাকেনাও মোটামুটি চোখে পড়ার মত।
তবে এবার বাজারে গরুর মূল্য ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা এবং ছাগল ৮ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে কেনাবেচা হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন গত বছরের চেয়ে এবার কোরবানরি পশুর দাম অনেক কম। ফলে গরু-ছাগলের ন্যায্য দাম না পেয়ে হতাশ খামারি ও গবাদিপশু পালনকারীরা।
ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গরু প্রচুর পরিমাণে রয়েছে কিন্তুু বিক্রেতারা গরু বেশি দামে বিক্রি করার জন্য দাম বেশি বলছে। তাদের অভিযোগ গরুর বিক্রেতারা সিন্ডিকেট করে গরুর দাম দ্বিগুণ করেছে। এতে গবাদি পশুগুলোকে তারা কম দামে উত্তরবঙ্গ থেকে ক্রয় করে এখন বেশি দামে বিক্রি করছে। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটগুলো গরু বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে তুলছেন না। তবে ঈদ অতিনিকটে চলে আসায় দাম ও মোটামুটি আয়ত্বে চলে আসবে।
এদিকে নিয়মিত পশুর হাট ছাড়াও কোরবানের আগে বিভিন্ন জায়গায় বসে পশুর হাট। ঠিক তেমনি ভাবে পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে বাঁশখালী পৌরসভার জলদী মিয়ার বাজার, রামদাশ মুন্সী হাট, জালিয়াখালী হারাইচাচার দোকান, মনছুরিয়া বাজার, পুইছুড়ি বদ্দারহাট ও বৈলছড়ী নজমুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে প্রতি বছরের মতো জমে উঠেছে অস্থায়ী পশুর হাট, চলবে কোরবানির আগের দিন পর্যন্ত।
বাঁশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে গরু বিক্রয় করতে আসা মোঃ ইসমাইল জানান, বাজারে আসা সবচেয়ে বড় গরুটির মূল্য হাকা হয়েছে এক লক্ষ আশি হাজার টাকা। তিনি গরুটি গত বছর ক্রয় করেছেন আশি হাজার টাকায়। দীর্ঘ এক বছর লালন পালনের পর তিনি গরুটি বিক্রি করতে বাজারে এনেছেন।
গত সোমবার এবং বুধবার উপজেলার জলদী মিয়ার বাজার ও রামদাস মন্সির হাটে জমজমাট গরু, মহিষ ও ছাগলের বাজার ঘুরে দেখা যায়, ছোট বড় বিভিন্ন সাইজের গরু উঠেছে। এতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।
গুনাগরি এলাকার গরু ব্যবসায়ী মোঃজসিম উদ্দীন জানান, অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর ভারত, মিয়ানমার ও দেশের উত্তরবঙ্গের রাজশাহী, বগুড়া, কুষ্টিয়া এবং টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের করিডোর এলাকার গরু কম, আর দেশীয় গরু বেশি। সপ্তাহের রবিবার আর বৃহস্পতিবার বসে এখানে গরু ও ছাগলের বাজার। অনেকে গরুর অতিরিক্ত দামের কারণে এখনো গরু কিনছে না। তবে আর মাত্র ২ দিন থাকায় শেষ মুহুর্তে এসে গরু কেনার ধুম পড়েছে।
এ উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভাসহ গত কয়েক বছর ধরে গড়ে উঠেছে অন্তত ৪ হাজারের অধিক গরুর খামার। তুলনামূলক লোকসানের সম্ভাবনা ও রোগব্যাধি কম থাকায় দিন দিন উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে গড়ে উঠছে এসব খামার। প্রাণিসম্পদ বিভাগের সহযোগিতায় এ ধরনের খামার তৈরির দিকে ঝুঁকছে শিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত যুবকরা। এসব খামার থেকেই পবিত্র ঈদুল আজহার সময় সিংহভাগ গরুর চাহিদা পূরণ হবে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর। বাঁশখালীর খামারগুলোতে বেশীরভাগ শাহিওয়াল, রেড চিটাগাং ও দেশি জাতের গরু সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। তবে বেশি মাংস উৎপাদনে সক্ষম ও লোকদের পছন্দের বিবেচনায় শাহিওয়াল আর স্বাদ বিবেচনায় দেশি জাতের গরুই বেশি পালন করা হচ্ছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ৪ হাজার ২ শত ৪৪ টি খামারে কোরবানী যোগ্য পশু পালন করা হচ্ছে। এর মধ্যে গরুর সংখ্যা ২৬ হাজার ৮৭৯টি, মহিষের সংখ্যা ২ হাজার ৮ শত ৪১ টি, ছাগল ও ভেড়ার সংখ্যা ১১ হাজার ৪ টি। প্রাণিসম্পদ অফিসের হিসাবমতে উপজেলার বর্তমানে খামার ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে পালিত গরুর বেশিরভাগই কোরবানির বাজারে বিক্রির জন্য তোলা হতে পারে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. সমরঞ্জন বড়ুয়া জানিয়েছেন, আমরা ৩ মাস আগে থেকে খামারিদের গরু মোটাতাজাকরণ বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়েছি। গত বছর কোরবানী হয়েছে গরু-মহিষ-১৪ হাজার ৭ শত ১১ টি, ছাগল-ভেড়া-১০ হাজার ৪৪ টি। এ হিসেবে মোট ২৪ হাজার ৭শত ৫৫ টি পশু কোরবানী হয়েছে। এবারের সম্ভাব্য চাহিদা গরু-মহিষ ১৬ হাজার ২৫৯টি, ছাগল-ভেড়া ১১ হাজার ১০৫টি যার মোট সংখ্যা ২৭ হাজার ৩৬৪টি। বাঁশখালীতে ঈদুল আজহার পশুর চাহিদা পূরণ করতে গরু খামারগুলো বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে। খামারীরা যাতে কোরবানীর পশুতে ক্ষতিকারক কোনো ওষুধ অথবা ইনজেকশান ব্যবহার না করতে পারে সে জন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সতর্কতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন এবং খামারীদের প্রয়োজনীয় পরাশর্ম দিয়ে আসছেন। এছাড়াও গো-খাদ্য ও ওষুধ বিক্রেতাদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বাজার মনিটরিং সেল ও স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন সহ ভেজাল ঔষধ বিক্রি বিরোধী অভিযানও অব্যাহত রেখেছেন বলে জানান এ কর্মকর্তা।
বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামাল উদ্দিন বলেন, কোরবানী পশুর হাটে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে, যাতে ক্রেতা-বিক্রেতা নির্ভয়ে পশু বেচাকেনা করতে পারেন। এছাড়া জাল নোট শনাক্তকরণের জন্য মেশিন বসানো হয়েছে।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, পবিত্র ঈদ-উল আযহাকে সামনে রেখে উপজেলার বিভিন্ন গরুর বাজারগুলোতে পযার্প্ত কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতারা নিরাপদে পশু বেচা-কেনা করতে পারবেন। নিরাপত্তার জন্য প্রত্যেক বাজারে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাসহ পুলিশের পাশাপাশি বিশেষ টিম কাজ করছে। নকল টাকা প্রতিরোধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।