কল্যাণ বড়ুয়া মুক্তা: চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সাগর উপকূলের বাহারছড়া ইউনিয়ন। প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়, জ্বলোচ্ছাস ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে এখানকার জনগণ নানাভাবে নিঃস্ব হয়ে যায়। কেউ ঘর বাড়ি হারিয়ে, কেউ বা পোষা প্রাণী যেমন গরু, ছাগল, হাঁস মুরগী হারিয়ে, এমনকি জীবন নিয়েও প্রতিনিয়ত হুমকির মধ্যে থাকে এখানকার জনগণ। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় মোরায় উপকূলবর্তী এই ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। ঘর বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায় অনেকে। খোলা আকাশের নিচে দিন কাটে এসব পরিবারের। কিন্তু এমন সময় তাদের পাশে দাঁড়ায় সমাজ উন্নয়ন সংস্থা ইপসা। পরবর্তীতে হ্যাবিট্যাট ফর হিউম্যানিটি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর সহযোগিতায় ইপসা ক্ষতিগ্রস্থ বাড়ী গুলো উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগিতায় জরিপ কাজের মাধ্যমে ১২৭টি বাড়ী চিহ্নিত করে। যেগুলো নির্মাণের জন্য সংস্থার নীতিমালা অনুসারে টেন্ডার আহবানের মাধ্যমে টিকাদার নিয়োগ করে। যার মাধ্যমে বর্তমানে শতাধিক বাড়ী নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে প্রায়। বাহারছড়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছিল সৈয়দুল আলম। তারই ঔরশজাত তিন কন্যা নাসরিন আক্তার, জেকি আক্তার ও তানিয়া আক্তার। সৈয়দুল আলম দিন মজুর হিসেবে কষ্টের জীবন ধারণ করলেও ২০০৭ সালে মারা যায়। আকাশ ভেঙে পড়ে তার স্ত্রী পারভিন আক্তারের। ৩ কন্যা সন্তানকে নিয়ে কি ভাবে সংসারের হাল ধরবে সেই দুঃশ্চিন্তায় অবশেষে ২০০৯ সালে তিনিও পরপারে চলে গেলেন। এতিম হয়ে গেলেন তিন বোন। পারভিনের মৃত্যুর পর এই তিন বোনের কাছে ছায়া হয়ে এলেন পারভিনের বড় বোন ছেনুয়ারা বেগম। সে বোনের মেয়েদের জন্য সবকিছু ত্যাগ করে তাদের লালন পালনে দায়িত্বও নিলেন। এরই মাঝে প্রলয়ংনকরী ঘূর্ণিঝড় মোরায় তাদের একমাত্র থাকার বাসস্থান ভাঙা বাড়িটিও ভেঙে যায়। এরপর দুঃসহ যন্ত্রণা নামে এই তিন বোনের চলার পথে। স্থানীয় প্রতিবেশী ও সমাজের বিত্তবানদের দান খয়রাতির উপর চলে তাদের জীবন। কিন্তু লেখাপড়া করার অদম্য বাসনা তাদের মনে। বর্তমানে নাসরিন আক্তার অষ্টম শ্রেণি, জেকি আক্তার ষষ্ঠ শ্রেনী ও তানিয়া আক্তার তৃতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। তাদের ইচ্ছা বাবা-মা না থাকলেও লেখাপড়া করে তারা যেন নিজের জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে সে স্বপ্নে বিভোর তারা। কিন্তু দারিদ্রতার কষাঘাত থেকে বের হওয়ার নেই কোন উপায়। ভাঙা বাড়িটি সংস্কার করতেও তাদের নেই তেমন কোন সহায় সম্পদ। সম্প্রতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা ইপসা কর্তৃক বাস্তবায়িত হ্যাভিট্যাট ফর হিউম্যানেনিটি বাংলাদেশের সহযোগিতায় বাহারছড়ায় মোরা আক্রান্ত অসহায় পরিবারের মাঝে গৃহ নির্মাণ কার্যক্রম হাতে নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় অসহায় এই তিন বোনকে পূর্বের ভাঙা বাড়ী থেকে নতুন একটি টিনের বাড়ী তৈরী করে দেয়। সেই বাড়ী পেয়ে তাদের এখন বাড়ীর অভাব দূর হয় । তেমনি আরেকজন একই এলাকার কলি আক্তার ,যার বাবা মারা গেছে তার জন্মের আগে । মানসিক অসুস্থ মাকে নিয়ে জরাজীর্ণ কুঠিরে যার ছিল বাস । তারও হয়েছে ইপসার সহযোগিতায় নতুন বাড়ি । নতুন বাড়ী পেয়ে তাদের আনন্দ হলেও নতুন করে জীবন যাত্রার পথে নানা জনের সহযোগিতা তাদের কাম্য বেশী। তাদের ব্যাপারে এ ওয়ার্ড়ের ইউপি সদস্য এমরানুল হক সোলতান বলেন ইপসা সাধারন ও দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য যে কাজ করছে তা প্রশংসার দাবী রাখে। এ ব্যাপারে বাহারছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাজুল ইসলাম বলেন, সমাজ উন্নয়ন সংস্থা ইপসা অসহায় তিন বোনের কথা বিবেচনা করে নতুন করে প্রকল্পের পক্ষ থেকে বাড়ী নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইপসা বাহারছড়ায় ঘূর্ণিঝড় মোরায় ক্ষতিগ্রস্ত ১২৭টি পরিবার চিহ্নিত করে তাদেরও বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে শতাধিক বাড়ি নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। তাছাড়া পরিষদের সাধ্যমত তাদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস আমি সবসময় দিয়ে আসছি।